ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: ঘটনা ১: শনিবার বিকেল চারটে। চারদিক শুনশান। এনআরএসের (NRS) লাশকাটা ঘরের বাইরে ইতিউতি ভিড়। মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় গুটি কয়েক যুবক। আচমকা একটা হাওয়া বয়ে গেল। সঙ্গে রামধাক্কা। আচমকা এমন ধাক্কায় সব এদিকে ওদিক ছিটকে গেল। মৃতদেহ নিতে আসা লোকজন লাশকাটা ঘর ছেড়ে অন্যত্র হাঁটা লাগাল। ফিরল দল ভারী করে। ততক্ষণে এলাকা শুনশান।
ঘটনা ২: নাইট শিফটে কাজ সেরে হস্টেলে ফেরার পথে হঠাৎ দুমদাম শব্দ। ক্রমশ বাড়তে বাড়তে একটা সময় থেমে যায়। কোনও গণ্ডগ্রাম নয়। খাস কলকাতার এনআরএস হাসপাতালের (NRS Hospital) মর্গ আর অ্যানাটমির মাঝ বরাবর শ্যাওড়া গাছকে ঘিরে এমনই সব গল্প উড়ে বেড়াচ্ছে।
খাস কলকাতার এনআরএস (NRS Medical College) হাসপাতালের মর্গ আর অ্যানাটমির মাঝ বরাবর একটি শ্যাওড়া গাছ হল এই ভূতের উৎসস্থল বা ‘এপিসেন্টার’। প্রকাশ্যে কেউ স্বীকার করতে চান না। উল্টে একগাল চওড়া হাসি দিয়ে বলেন, ‘‘ওদের নিজেদের মতো থাকতে দিন।’’ কিন্তু ফি বছর নিয়ম করে ভূতপুজো হয়। প্রসাদ বিতরণ হয়। অপদেবতাকে তুষ্ট রাখতে খাতিরযত্নের শেষ নেই লাশকাটা ঘরের ডোমদের। কলেজের অধ্যক্ষ ডা. পীতবরণ চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘আমি ভাই এসব নিয়ে বলতে পারব না। আপনি মর্গের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলুন।’’
খুব স্বাভাবিক, কলেজ অধ্যক্ষ কেনই বা ভূত নিয়ে কথা বলবেন। ভূত তো রোগী নয়। কিন্তু ডোমদের কথায়, ‘‘এখানে যেসব তেনাদের দেখা যায় তাঁদের মধ্যে কয়েকজন তো হাসপাতালেই মারা গেছেন!’’ কী করে জানলেন? উত্তরে লাশ কাটা ঘরের ডোম রাজেশ মল্লিকের পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘আপনার কী দরকার? রাম, রাম, জয় শ্রীরাম!’’ তা হলে কী সত্যিই ভূত…? রবিবার দুপুরে মুখ ঝামটা দিয়ে রাজেশ বলেছেন,‘‘বললাম না জানি না। ওরা ওদের মতো আছে। বছরে একবার পুজো হয়। আরেকটা কথা, তেনারা জানতে পারলে কুদৃষ্টি পড়বে। সাবধান।’’ যাওয়ার আগে কানের কাছে মুখ রেখে বলেছেন, “জানেন গাছটা একইরকমের। বাড়েও না, কমেও না।”
প্রায় চার বছর আগে পূর্ত ও পরিবেশ দফতরের অনুমোদন নিয়ে মর্গ ও অ্যানাটমির মাঝ বরাবর অন্তত সাত-আটটি গাছ কাটা হয়। দু’টি বিল্ডিংয়ের মধ্যে ফুটব্রিজ করতে। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও শ্যাওড়া গাছটি কাটা যায়নি। যতবারই কাটার উদ্যোগ হয়েছে, রে রে করে উঠেছেন হাসপাতালের অ্যানাটমি আর লাশকাটা ঘরের কর্মীরা। উল্টে গাছটির গোড়া যত্ন করে সিমেন্টের করা হয়েছে। অ্যানাটমির এক কর্মীর কথায়, রাতবিরেতে অনেকরকম শব্দ শোনা যায়। কেউ কাঁদে, কেউ আবার হো হো করে হাসে। আবার অমাবস্যার রাতে সুগন্ধে ভেসে যায় লাশকাটা ঘরের চারপাশ। সঙ্গে খুটখাট শব্দ। মনে হয় কেউ বুঝি দৌড়ে গেল। তবে শনিবার সন্ধ্যার ঘটনা ইতিমধ্যে চাউর হয়ে গিয়েছে। তাই এই নিয়ে সবাই মুখে কুলুপ এঁটেছেন। খাস নীলরতনের মর্গের গাছে ভূত-পেত্নী বসে থাকে, এমনটা শুনে কলেজের অ্যানাটমির অধ্যাপক ডা. অভিজিৎ ভক্তর কথায়, ‘‘ঈশ্বরে বিশ্বাস করি। ভূতে নয়। অনেকদিন অপেক্ষা করে আছি। যদি ভূতের দেখা পাই?’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.