সুব্রত বিশ্বাস: উত্তর চব্বিশ পরগনার হাসনাবাদ শাখার কদম্বগাছি স্টেশন। লাইনের মাঝে সাজানো ফুল, বেলপাতা। পাশে ভীড় স্থানীয় বাসিন্দাদের। কারোর হাতে ফুলের মালা। কেউ দাঁড়িয়ে কলাগাছের চারা হাতে। মন্ত্রপাঠ করছেন পুরোহিত। ট্রেন আসতেই চারাগাছ, মালা দিয়ে সাজানো হল। আরও তাড়াতাড়ি মন্ত্র পড়তে লাগলেন তিন পুরোহিত। সবাই প্রণাম করলেন। নির্দিষ্ট সময়ে ছেড়ে গেল ট্রেনটি। প্রতিবছর ১৭ আগস্ট শিয়ালদহগামী হাসনাবাদ লোকালকে দেবজ্ঞানে পুজো করেন স্থানীয়রা।
ট্রেনকে ঘিরে কেন এই উপাচার? স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, আগে এই স্টেশনের কাছে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটত। মাঝেমধ্যেই পারিবারিক কলহে অনেকেই বিরক্ত হয়ে আত্মহত্যা করতেন। এই অকাল দুর্ঘটনা রোধে স্থানীয়রা এক সময় সেখানে পুজো দিয়ে মনস্কামনা করেন।
তাতেই মিরাকল! কয়েক বছর আগে ৩৩৫১৫ ট্রেনটির তলায় পড়ে যায় এক শিশু। অকল্পনীয়ভাবে রক্ষা পায় সে । এর পরই স্বাধীনতা দিবসের দুই দিন পরে ১৭ তারিখ চরম বিশ্বাসে আপ ৩৩৫১৫ ও ডাউন ৩৩৫১৮ ট্রেন দুটিকে স্থানীয়রা নিয়ম করে পুজো দেন। সঙ্কল্প আর দুর্ঘটনা যেন না ঘটে।
রবিবার সকাল ৮.৫১ মিনিটে ট্রেনটি কদম্বগাছিতে ঢুকতেই গ্রামবাসীরা পুজো শুরু করেন। স্থানীয় বাসিন্দা সবিতা দাস জানান, ‘তিনজন পুরোহিত ভগবান শিব ও সঙ্কটমোচনের পুজো করা হয়। গ্রহ দেবতাদের মন্ত্র ১০৮ বার উচ্চারণ করে এই পুজো করেন। ট্রেনটি যেহেতু সামান্য সময় দাঁড়ায়, তাই ট্রেন আসার আগেই লাইনে ফুল, বেলপাতা ছড়িয়ে এই পুজো শুরু হয়। ট্রেনটি এলে সেটাকে ফুলের মালায় সাজিয়ে দেওয়া হয়। ট্রেনের সামনে বাঁধা হয় কলাগাছের চারা। মন্ত্র উচ্চারণ করে ট্রেনকে প্রণাম করেন সবাই।’
স্থানীয় বাসিন্দা ও ট্রেন যাত্রী তাপস মজুমদার বলেন, “আপাতদৃষ্টিতে এই ধরনের দুর্ঘটনা কমে এসেছে। ভৌগোলিক পরিস্থিতি বা পরিকাঠামোগত পরিবর্তনের প্রভাব হলেও হতে পারে।” তবে সব কিছুকে ছাড়িয়ে গিয়ে মানুষের এই ভাবাবেগ এখনও সমান তালে চলেছে।শিয়ালদহের সিনিয়র ডিসিএম পবন কুমার বলেন, “মানুষ ট্রেনকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করতে পারেন যে কোনও উপায়ে। ট্রেনকে না আটকালেই হল। এতে রেলের কোনও পদক্ষেপ করার নেই।” পাশাপাশি তিনি এও জানান, ‘পুজো দিলেই দুর্ঘটনা রোখা যাবে এটা যেমন বলা যায় না, তেমনই মানুষের ভাবাবেগে আঘাত করাও সম্ভব নয়।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.