টিটুন মল্লিক, বাঁকুড়া: মাথায় উঠেছে নিজের চাকরি। প্রধান কাজ এখন দু’বেলা গরুর (Cow) মুখে খড়ের আঁটি, জলের বালতি তুলে দেওয়া। রাত জেগেও দিতে হচ্ছে পাহারা। ভয়াবহ দুর্ঘটনার হাত থেকে রেহাই পাওয়া ২৭টি গরু নিয়ে সব করতে গিয়ে নিজের গাঁট থেকেই খসছে দিনে প্রায় ১০০০ টাকা। গরু বোঝাই গাড়ি পথ দুর্ঘটনার কবলে পড়ায় চরম বিপাকে পড়তে হল বাঁকুড়ার কোতুলপুর থানার পুলিশকে। এখানেই শেষ নয়। এই দুর্ঘটনার কবলে পড়া ১৩টি গরুকে দাহ করতে হয়েছে। আর অসুস্থ গরুদের ওষুধ ও ইঞ্জেকশনও দিতে হচ্ছে পুলিশকেই।
উল্লেখ্য, গত বুধবার ভোররাতে বাঁকুড়ার (Bankura) কোতুলপুর ব্লকের রায়দিঘি এলাকায় রাজ্য সড়কের উপর গবাদি পশু বোঝাই একটি লরিকে পিছনে থেকে ধাক্কা মারে একটি বালি বোঝাই ডাম্পার। পুলিশ জানিয়েছে, পুরুলিয়া থেকে বাঁকুড়ার উপর দিয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড় (Bhangar) যাচ্ছিল এই লরিটি। কিন্তু গাড়িটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ায় আহত গরুদের উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় একটি হিমঘরে। সেখানে ত্রিপল টাঙিয়ে কোনওরকমে সামাল দেন পুলিশ কর্মীরা।
কিন্তু সন্ধের পর প্রবল ঝড়বৃষ্টি হওয়ায় সব পরিকল্পনা মাটি হয়ে যায়। বৃষ্টির পরে ওই হিমঘরেই ছাউনির নিচে নিয়ে যাওয়া হয় উদ্ধার হওয়া গরুগুলিকে। সেখানে নিয়মিত দেখভাল করছেন চারজন সিভিক পুলিশ। অসুস্থ পশুদের শুশ্রূষার জন্য সরকারি পশু চিকিৎসককে দিয়ে চিকিৎসাও করানো হয়েছে। কোতুলপুর থানার ওসি রামনারয়ণ পাল বলছেন, ”নিজের তদন্তের কাজে ব্যস্ততার মাঝে আমাদের ওই গবাদি পশুগুলির দেখভালও করতে হচ্ছে।”
বাঁকুড়ার প্রাণীসম্পদ উন্নয়ন দপ্তরের আধিকারিক এ ডি ফার্ম চিকিৎসক অনন্ত দাস বলছেন, “নিজেদের ব্যস্ততার মাঝেও পুলিশ যেভাবে পশুদের দেখাশোনা করছে, তার জন্য সত্যিই ওঁদের সাধুবাদ দেওয়া প্রয়োজন”। আর হবে নাই বা কেন? অসুস্থ গরুগুলির রোজ খোঁজখবর নিচ্ছন বিষ্ণুপুর মহকুমা পুলিশের কর্তারা। ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কোতুলপুর থানার ওসি রামনারায়ণ পাল।
তবে বেআইনি গরু পাচার নিয়ে বিরোধীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে বিষ্ণুপুর মহকুমা পুলিশ আধিকারিক কুতুবুদ্দিন খান জানান, “গত সোমবার পুরুলিয়ার হাট থেকে ওই গরুগুলি কিনে ভাঙড় নিয়ে যাচ্ছিলেন এক ব্যবসায়ী। কোতুলপুর থানা এলাকায় গরু বোঝাই গাড়িটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।” তবে ওই গবাদি পশু পরিবহণের জন্য ব্যবহৃত গাড়িটির ‘ট্রান্সপোর্টেশন অফ অ্যানিম্যাল রুল ২০০১’ অনুযায়ী সার্টিফিকেট ছিল কিনা, সে প্রশ্নের কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি কারও কাছে। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক পুলিশ আধিকারিক বলছেন, ‘‘আপাতত ওই গবাদি পশুগুলির ভাগ্য ঝুলছে আদালতের রায়ের উপর।’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.