Advertisement
Advertisement

Breaking News

সূর্য রহস্য সন্ধানে পাড়ি দিল নাসার মহাকাশ যান ডেল্টা ফোর

নবতিপর বিজ্ঞানী ইউজিন পার্কারের নামে অভিযানের নাম 'পার্কার'।

Parker Solar Probe is headed for the Sun
Published by: Tanujit Das
  • Posted:August 12, 2018 2:46 pm
  • Updated:August 3, 2019 7:32 pm  

ঐন্দ্রিলা বসু সিংহ: স্বপ্ন সত্যির পথে যাত্রা শুরু করল নাসা। সূর্যের উদ্দেশে পাড়ি দিল নাসার মহাকাশ যান৷ ভারতীয় সময় রবিবার দুপুরে ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল থেকে পাড়ি দেয় যানটি। প্রথমে শনিবার ভোর সাড়ে তিনটে নাগাদ যাত্রা শুরুর কথা থাকলেও তা সম্ভবপর হয় না৷ ছাড়ার কয়েক মিনিট আগেই হঠাৎ পিছিয়ে দেওয়া হয় পার্কার অভিযানের সময়। প্রথমে ২০ মিনিট। তারপর আরও ৩৫ মিনিট। এবং শেষে ২৪ ঘণ্টার জন্য।

কারণ, জ্বালানি সমস্যা। যে বিশাল ডেল্টা ফোর রকেটে চড়ে পার্কার সৌর তদন্তের সৌর আবর্তন যানটির পৃথিবী থেকে রওনা হওয়ার কথা ছিল, সেই রকেটটিতেই জ্বালানি সংক্রান্ত গোলযোগ দেখা দেয় শেষমুহূর্তে। আর তার জেরে পিছিয়ে দেওয়া হয় উৎক্ষেপণের সময়। নাসার টিম তাই শনিবার দিনরাত কাজ করে এই সমস্যার সমাধানের। সব ঠিকঠাক করে, মার্কিন সময় অনুযায়ী রবিবার ভোরে পাকার্র সৌর তদন্ত অভিযান নিয়ে মহাকাশে পাড়ি দেয় ম্যামথ রকেট ডেল্টা ফোর। কিন্তু, কেন শুরুতেই থমকে গেল সূর্য ছোঁওয়ার অভিযান? এই দেরির প্রভাব কি পড়বে অভিযানের অন্যান্য হিসাব নিকাশেও? বিশেষ করে, নাসার দেওয়া একটি তথ্যে এ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে আগ্রহী মহলে। যার উত্তরে বিড়লা তারামণ্ডলের ডিরেক্টর বিজ্ঞানী দেবীপ্রসাদ দুয়ারি জানান, তেমন কোনও সম্ভাবনা নেই।

Advertisement

[OMG! প্রশিক্ষণ নিয়ে থিম পার্ক পরিষ্কার রাখছে ৬টি কাক!]

প্রশ্ন উঠে, রবিবার মাত্র ৬৫ মিনিটের জন্য রকেট উৎক্ষেপণের অনুকূল ‘মহাকাশ জানলা’ খোলা পাওয়া যাবে। অর্থাৎ ওই সময়ে উৎক্ষেপণ করা হলে তবেই কাঙ্ক্ষিত কক্ষপথে পৌঁছাতে পারবে পার্কার। আর সেই সুযোগও যদি হাতছাড়া হয়ে যায়, তবে সোমবার পর্যন্ত আর উৎক্ষেপণের সুযোগ পাবে না নাসা। তারপরেও যদি ব্যর্থ হয়, তবে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত উৎক্ষেপণের সুযোগ থাকছে। তাতেও না হলে আরও কিছুটা পিছিয়ে যাবে পার্কারের উৎক্ষেপণ। সেক্ষেত্রে কি পার্কারের পরবর্তী পথে কোনও প্রভাব পড়বে। ক্ষতি হবে কি সৌর তদন্ত অভিযানটির? বিজ্ঞানী দুয়ারি জানান, পার্কার অভিযানের সৌর আবর্তন যানের পথে প্রভাব পড়ার আশঙ্কা নেই। আসলে, পার্কার সৌর তদন্ত অভিযানের সৌর আবর্তন যানটিকে মহাকাশে তার কক্ষপথে স্থাপন করে ফিরে আসার কথা ডেল্টা ফোর রকেটের। প্রায় একটি চারচাকা গাড়ির আকৃতির ওই সৌর আবর্তন যান তার পর এগোবে নিজের কক্ষপথ ধরে।তারপর সূর্যের যত কাছে এগোবে ততই গতিবেগ বাড়বে পার্কারের। সেই গতিবেগ নিয়ন্ত্রণের জন্যও একটি পরিকল্পনা রয়েছে বিজ্ঞানীদের। নাসা জানিয়েছে, শুক্রের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি ব্যবহার করে পার্কারের গতিবেগ কমানোর পরিকল্পনা করেছেন বিজ্ঞানীরা। ড. দুয়ারি জানান, সেই হিসাবে ভুলচুক হওয়ার সম্ভাবনা নেই একেবারেই।

আগস্টে যাত্রা শুরুর পর পার্কার সৌর অভিযান সূর্যের সবচেয়ে কাছে প্রথমবার আসবে এবছরেরই নভেম্বর মাসে। সূর্যের কাছে যখন পৌঁছাবে তখন পার্কারের সৌর আবর্তন যানটির গতিবেগ হবে ঘণ্টায় সাত লক্ষ কিলোমিটার। সেক্ষেত্রে পার্কারের সৌর আবর্তন যানটিই হবে মানবনির্মিত সবচেয়ে গতিময় বস্তু। এই প্রবল গতিময় পার্কারকেই শুক্রের মাধ্যাকর্ষণ শক্তিকে কাজে লাগিয়ে নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা করে রেখেছে নাসা। সূর্য আর শুক্রের মাঝখান দিয়ে যখন পার্কার যাবে, তখনই শুক্রের মাধ্যাকর্ষণ ক্ষেত্রে প্রবেশ করার কথা পার্কারের। তখন শুক্রের আকর্ষণ ক্ষমতার সাহায্য নিয়েই কাঙ্ক্ষিত গতিবেগের লক্ষ্যে পৌঁছাবে পার্কার। তবে উৎক্ষেপণে দেরি হলেও সেই হিসেব গুলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। ১৫০ কোটি মার্কিন ডলারের সূর্য ছোঁওয়া তদন্তও বিন্দুমাত্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে না তাতে। জানান ড. দুয়ারি।

[১৫ বছর ধরে গুহায় যৌনদাসীর জীবন, মুক্ত হয়ে পুনর্জন্ম মহিলার]

প্রথমবার সূর্যের কাছে পৌঁছানোর পর সাত বছরে সাতবার সূর্য এবং বুধ গ্রহের মাঝখান দিয়ে যাওয়া আসা করবে পার্কার। যার মধ্যে সূর্যের সবচেয়ে কাছে সেটি পৌঁছাবে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে। তখন সূর্যের সঙ্গে পার্কারের দূরত্ব থাকবে মাত্র ৬৩ লক্ষ কিলোমিটার। সূর্যের এত কাছে তার প্রখর তাপমাত্রা যাতে পার্কারের কোনও ক্ষতি না করতে পারে সেজন্য, বিশেষ তাপমাত্রা প্রতিরোধক আস্তরণ লাগানো হয়েছে পার্কারের সৌর আবর্তন যানটির গায়ে। সাড়ে চার ইঞ্চি পুরু ওই আস্তরণকে আল্ট্রা পাওয়ারফুল হিট শিল্ড বলে বর্ণনা করেছে নাসা। সাড়ে চার ইঞ্চির ওই তাপমাত্রা প্রতিরোধক আস্তরণের ক্ষমতা নাকি এতটাই যে, একটা সূর্য তো বটেই সূর্যের থেকে ৫০০ গুন বেশি তেজস্ক্রিয়তাকেও মোকাবিলা করতে পারবে অনায়াসে। তাই সূর্যের কাছে পৌঁছানোর পরও ওই হিট শিল্ড পার্কারের সৌর আবর্তন যানের ভিতরের তাপমাত্রা বেঁধে রাখবে কেবলমাত্র ২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসেই। এছাড়াও তাপমাত্রা বজায় রাখার জন্য পার্কারের সৌর আবর্তন যানে থাকছে সোলার অ্যারে কুলিং সিস্টেম। সব মিলিয়ে ২৪টি আবর্তন পথে এই লক্ষ্যে পৌঁছাবে পার্কারের সৌর আবর্তন যান।

এই প্রথম কোনও মানব তদন্ত অভিযান পৌঁছাবে সূর্যের পরিমণ্ডল ‘করোনা’তে। উল্লেখ্য, সূর্যের পরিমণ্ডল করোনায় পৌছে সেখানকার ছবি তুলবে পার্কার। করোনা, যা কিনা সূর্যপৃষ্ঠের থেকেও ৩০০ গুণ বেশি তপ্ত এবং যেখানে সর্বক্ষণই তপ্ত সৌর প্লাজমা উদগীরণ হয়, তা কাছ থেকে দেখবে পার্কার। তথ্য সংগ্রহ করবে সৌর ঝড় এবং সৌর পরিমণ্ডলে ক্রমাগত ঘটে চলা অন্যান্য অজানা কার্যকলাপ সম্পর্কেও। আর তাই প্রথম সোলার উইন্ড -এর কথা বলেছিলেন যে বিজ্ঞানী সেই ইউজিন পার্কারের নামে এই তদন্ত অভিযানের নামকরণ করেছে নাসা। বিজ্ঞানী ইউজিনের বয়স ৯১ বছর। সেদিক থেকে দেখলে এই প্রথম কোনও অভিযানের নাম রাখা হল জীবিত ব্যক্তির নামে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement