শান্তনু কর, জলপাইগুড়ি: দেখলে মনে হবে বিরাট চেহারার একটি অজগর সাপ। সরষে ফুলের মরশুমে জল থেকে দীর্ঘ শরীরটিকে দাঁড় করিয়ে ফুল খেতে দেখে অজগর ভেবেই তটস্থ হয়ে পড়েন তিস্তা ও করলা পাড়ের বাসিন্দারা। কিন্তু এই সর্পভ্রম ভেঙে গেল কিছুক্ষণের মধ্যেই। মৎস্যজীবীরাই বিশালদেহী মাছ চিনতে পারলেন। সেটি ছিল বামোশ মাছ। সঙ্গে সঙ্গে বাজারে নিয়ে আসা হয় মাছটিকে। আর নিলামে তার দাম ওঠে সাড়ে তিনশো টাকা প্রতি কেজি।
আসলে বেশ কয়েক বছর পর সেই বামোশের দেখা মিলল তিস্তায়। মঙ্গলবার স্থানীয় মৎস্যজীবীদের জালে ধরা পড়ে বিরল প্রজাতির এই মাছটি। জলপাইগুড়ি স্টেশন বাজারে তা আসতেই রীতিমতো হইচই পড়ে যায়। প্রায় সাড়ে তিন ফুট লম্বা, সাড়ে পাঁচ কেজি ওজনের বামোশ মাছটিকে নিলামে তোলা হয়। তা কিনে নেন মৎস্য ব্যবসায়ী মৃণাল রায়। তিনি জানান, দীর্ঘ প্রায় ২ বছর পর বাজারে এতো বড় বামোশ এল।
গত বছর সিকিম পাহাড়ে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে তিস্তা নদীর বিস্তীর্ণ এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জলদূষণের পাশাপাশি নদীর একাধিক এলাকায় পলি জমে উচ্চতা বেড়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে তিস্তার অন্যতম সম্পদ বোরোলি, বোয়াল, আড় মাছের মতো বামোশ মাছের প্রজাতি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে ছিলেন পরিবেশ কর্মীরা। এদিন বামোশের উপস্থিতি এই আশঙ্কা থেকে অনেকটা রেহাই মিলল বলে মনে করছে মৎস্য দপ্তর। মৎস্য বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, বামোশ মাছ বড় বাইন, দানব বাইন নামেও বিভিন্ন দেশে পরিচিত। এক সময় ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপালের নদীতে প্রচুর সংখ্যায় এই মাছ পাওয়া যেত। বর্তমানে লুপ্ত প্রায় মাছের তালিকায় জায়গা হয়েছে বামোশ মাছের।
করলা ও তিস্তা নদীতে একসময় ভালো সংখ্যায় পাওয়া যেত এই বামোশ মাছ। স্থানীয় মৎস্যজীবীদের দাবি, গত কয়েক বছর ধরে সেই অর্থে নজরে পড়ছিল না মাছটিকে। স্বাভাবিকভাবেই মঙ্গলের বাজারে বিশালাকৃতির বামোশের আবির্ভাব হতেই হুমড়ি খেয়ে পড়েন অনেকে। মৎস্য ব্যবসায়ী শিবু বর্মন জানান, এদিন নিলামেই সাড়ে তিনশো টাকা কেজিতে বিক্রি হয় মাছটি। তখনই বেশ কয়েকজন ক্রেতা মাছ নেবেন বলে আগাম জানিয়ে দিয়ে যান। জলপাইগুড়ি মৎস্য বিভাগের সহ অধিকর্তা রমেশচন্দ্র বিশ্বাস জানাচ্ছেন, ”অত্যন্ত সুস্বাদু এই মাছ। তাই এর একটা আলাদা চাহিদা রয়েছে। বামোশের মতো বড় মাছ জলে থাকার অর্থ নদীর ভারসাম্য ঠিক রয়েছে।” গত বছর অক্টোবর মাসে সিকিম পাহাড়ে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে তিস্তা নদীর মৎস্য ভান্ডার নিয়ে যে আশঙ্কা তৈরি হয়ে ছিল, তা অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা গিয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.