শঙ্করকুমার রায়, রায়গঞ্জ: লিকলিকে পা দু’টো অসার৷ পোলিওয় আক্রান্ত৷ অনেক চিকিৎসা করেও স্বাভাবিক জীবন ফিরে পায়নি সে৷ জোটেনি একটি হুইল চেয়ারও৷ কিন্তু পড়াশুনা তো আর বন্ধ করা যায় না। তাই বাধ্য হয়ে হামাগুড়ি দিয়েই স্কুলে যায় রায়গঞ্জের মছলন্দপুরের বছর আটের গোরবরু বর্মন৷ বাড়ি থেকে প্রায় দু’কিলোমিটার পাকা রাস্তায় হামাগুড়ি দিয়েই স্কুলে যায় মছলন্দপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র গোরবরু৷
বাবা ঘটু বমর্ন পেশায় দিনমজুর৷ মা সলিতাদেবী বাড়িতে বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন৷ তিন পুত্রসন্তানের মধ্যে সবচেয়ে বড় গোরবরু৷ কিন্তু ছোট থেকেই পোলিও আক্রান্ত সে৷ চিকিৎসার জন্য রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতাল থেকে শুরু করে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল-সহ বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছেন মা-বাবা৷ কিন্তু ছেলে ভাল হয়নি৷ চিকিৎসকরাও জানিয়ে দিয়েছেন, পোলিও রোগে একবার আক্রান্ত হলে আর ভাল হয় না৷ ফলে অল্প বয়সেই নেমে এসেছে প্রতিবন্ধকতা৷ নীল-আকাশি কংক্রিটের উঁচুনিচু রাস্তায় দু’হাত রেখে তাকে হামাগুড়ি দিয়ে স্কুলে পৌঁছতে হয়৷ অদম্য মনের জোরে হামাগুড়ি দিয়েই পাকা সিঁড়িও উঠতে হয়৷ বিকেলে ফেরার সময়ও একই বন্দোবস্ত৷ কখনও কখনও মা সময় পেলে কোলে করে বাড়িতে নিয়ে যান৷ কিন্তু অধিকাংশ দিন একাই চলাচল করতে হয়৷
সলিতাদেবী জানান, “রোজগারের জন্য সকাল সকাল রান্না সেরে বাড়ি বাড়ি কাজের জন্য ছুটতে হয়৷ ছোট ছেলে বিক্রম বড় ছেলেকে প্রায়ই ভাত খাইয়ে দেয়৷ সময় পেলে আমি খাওয়াই৷ কিন্তু স্কুলে যাওয়ার জন্য হুইলচেয়ার নেই৷” নিজেদের হুইল চেয়ার কেনার সামর্থ্য নেই৷ তাই অসহায় মায়ের আর্তি, কেউ একটা হুইলচেয়ার দিলে ছেলেটা কিছুটা কষ্টের হাত থেকে রক্ষা পাবে৷ একরত্তি ছেলের মনের জোর দেখে আপ্লুত স্কুলের প্রধান শিক্ষক শঙ্কর মাহাত৷ তিনি বলেন, “ছোটবেলা থেকেই কার্যত পঙ্গু গোরবরু৷ হাঁটতে পারে না৷ কিন্তু রোজ স্কুলে আসে৷ পড়াশোনা করার চেষ্টা করে৷” কিন্তু এতদিনেও একটি হুইলচেয়ার সরবরাহ করা সম্ভব হল না কেন? এব্যাপারে সর্বশিক্ষা মিশনের উত্তর দিনাজপুর জেলা প্রকল্প আধিকারিক প্রবীর পাত্র বলেন, “বিষয়টি জানা ছিল না৷ তবে আবেদন করলে অবশ্যই ব্যবস্থা করা হবে৷” আপাতত এই আশ্বাসের দিকেই তাকিয়ে গোরবরু ও তার মা-বাবা৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.