বিপ্লবচন্দ্র দত্ত, কৃষ্ণনগর: হাতের ছোঁয়ায় এতকাল সেজে উঠত মণ্ডপ। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পুঁথিগত কোনও জ্ঞান না থাকা সত্ত্বেও আস্ত গাড়ি তৈরি করলেন নদিয়ার শান্তিপুরের বৈষ্ণবপাড়ার বাসিন্দা সঞ্জয় প্রামাণিক। ফেলে দেওয়া নানারকমের বাতিল জিনিস দিয়ে গাড়িটি তৈরি করেছেন তিনি। ব্যাটারিতে একবার চার্জ দিলে ঘন্টায় ২২-২৩ কিলোমিটার পর্যন্ত অনায়াসেই চলতে পারে গাড়িটি। বিশেষভাবে সক্ষমদের কথা ভেবেই মূলত তৈরি অভিনব এই গাড়ি। তবে সাধারণ মানুষরা যে চালাতে পারবেন না তা নয়। মোটর ও ব্যাটারি বাদ দিয়ে গাড়ি তৈরির খরচ মাত্র ১০ হাজার টাকা।
গাড়ির তৈরির ভাবনার জন্ম বছরদুয়েক আগে। সেই সময় রাজ্যে বিরাটাকার নিয়েছে করোনা। মহামারীর আতঙ্কে সকলে ঘরের দরজায় খিল দিয়েছেন। বছর ষাটের সঞ্জয় প্রামাণিকের ছোট ভাইপো বায়না করে বসল কিছু একটা বানিয়ে দিতে হবে। ব্যস, কাকার মাথাতেও খেলে গেল পরিকল্পনা। ফেলে দেওয়া বিভিন্নরকম জিনিস দিয়ে গাড়ি তৈরির কাজে হাত লাগান। বেশ কয়েকদিনেই অসাধ্যসাধন। তৈরি হল অভিনব গাড়ি। গাড়িটির নাম দেন ‘আমি একা’। গাড়ির দরজা, সিলিং, চাকা, ব্যাকলাইট, হ্যান্ডেল, চেসিস সবই বাতিল জিনিসপত্র দিয়ে তৈকি। গাড়িটিতে থাকা ব্যাটারিতে ঘন্টাতিনেক চার্জ দিতে লাগে। ঘন্টায় ২২-২৩ কিলোমিটার পর্যন্ত চলে গাড়িটি। মাত্র ১০ হাজার টাকা দিয়ে গাড়ি নিয়ে যে কেউ নিজেদের প্রয়োজনমতো মোটর এবং ব্যাটারি লাগিয়ে নিতে পারেন।
গাড়িটি বিশেষভাবে সক্ষম এক কলেজ পড়ুয়ার মায়ের নজর কাড়ে। তাঁর ছেলের জন্য সঞ্জয়কে একটি গাড়ি তৈরি করার অর্ডার দেন। সঞ্জয় প্রামাণিক জানিয়েছেন, “বিশেষভাবে সক্ষম কলেজ পড়ুয়ার জন্য তৈরি করা গাড়িটির খরচ পড়েছে ১০ হাজার টাকা। গাড়িতে চালকের সঙ্গে আরও একজনের বসার আসন রয়েছে। গাড়িতে জলের বোতল, ছোটখাটো কিছু সামগ্রী রাখার ব্যবস্থাও রয়েছে। গাড়ির পিছনে রয়েছে আরও কিছু জিনিস রাখার ব্যবস্থা। রয়েছে হর্ন, হেডলাইট, ইন্ডিকেটর। গান শোনার ব্যবস্থা-সহ আরও বেশ কিছু সুবিধাও পাবেন গাড়িচালক।”
শনিবারই তিনি গাড়িটি কলেজ পড়ুয়ার হাতে তুলে দেন। যদিও তার আগে নিজেই বেরিয়েছিলেন গাড়িটিকে ট্রায়াল দিতে। রাস্তায় বেরনোর পর তাঁর অভিনব গাড়ির দিকে নজর পড়ে প্রায় সকলেরই। বাস, লরি থামিয়ে অভিনব গাড়িটি দেখেন অনেকে। কেউ কেউ গাড়িটি চালিয়ে দেখার আবদার করেন। গাড়িটিকে সঙ্গে রেখে সেলফি তুলতেও দেখা গিয়েছে একাধিক পথচারীকে। গাড়িটির ট্রায়াল রানের সময় সঞ্জয় প্রামাণিকের সঙ্গে রাস্তার মাঝে হঠাৎই দেখা হয়েছিল শান্তিপুর পুরসভার চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিলের সদস্য শুভজিৎ দে’র। অভিনব এমন গাড়ি আবিষ্কারের জন্য সঞ্জয়বাবুকে শুভজিৎ দে ফুল দিয়ে সংবর্ধনা জানান। অর্ডার পেলে আরও এমন কয়েকটি গাড়ি তৈরি করার ইচ্ছে রয়েছে সঞ্জয় প্রামাণিকের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.