সুকুমার সরকার, ঢাকা: শাশুড়ি-বউমা দ্বন্দ্ব আবহমানকাল থেকে চলে আসছে বাঙালি পরিবারে। তবে এর ব্যতিক্রম যে নেই তা নয়। সেই ধারণা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে উপজেলার সুফলাকাটি ইউনিয়নের কানাইডাঙ্গা গ্রামের কমিউনিটি ক্লিনিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উদ্যোগে শনিবার ব্যতিক্রমী শাশুড়ি-বউমা সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পশ্চিম জনপদ জেলা যশোরের কেশবপুর উপজেলার ডহুরি গ্রামের অশীতিপর কবিতা বিশ্বাস (৮০) বলেন, “নিজের মেয়েকে বিয়ে দিয়ে পর করেছি। সাতটি ছেলেকে বিয়ে দিয়ে সাতটি মেয়ে পেয়েছি। কাউকে বউমা বলে ডাকি না। সবাইকে বড় মা, ছোট মা বলে ডাকি। প্রত্যেকের সঙ্গে আমার মধুর সম্পর্ক। কোনও দিন কারও সঙ্গে একটু হলেও মনোমালিন্য হয়নি।” কবিতা বিশ্বাসের ছেলের বউ অলোকা বিশ্বাস জানান, তাঁদের বাড়িতে সাত বউ। সবাই শাশুড়ির দিকে নজর রাখেন। তিনি অসুস্থ হলে তাঁকে খাইয়ে দেন, চান করিয়ে দেন। আজ পর্যন্ত কোনও দিন কোনও বউকে তাঁদের শাশুড়ি বউমা বলে ডাকেননি। সবাইকে মা বলে সম্বোধন করেন। ডহুরি গ্রামের শংকর মল্লিক বলেন, কবিতা বিশ্বাস তাঁদের গ্রামে শ্রেষ্ঠ মা। সবাই তাঁকে সম্মান করেন।
[ অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পথে মৃত্যু জেহাদি বধূ শামিমার অন্তিম সন্তানের ]
অনুষ্ঠানের আয়োজক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শেখ আবু শাহিন বলেন, মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করার মধ্যেও তাঁরা কিছু সামাজিক দায়বদ্ধতার কাজ করেন। কমিউনিটি ক্লিনিকের সঙ্গে এলাকার মানুষের যোগাযোগ ভাল। প্রত্যন্ত গ্রামে মানুষের স্বাস্থ্যসেবার বাইরে গিয়ে শাশুড়ি ও ছেলের বউদের মধ্যে যেসব সমস্যা হয়ে থাকে, তা থেকে কীভাবে বেরিয়ে আসা যায়, তার জন্য মহিলাদের কিছু ধারণা দেওয়ার লক্ষ্যে শাশুড়ি-বউমার এ সমাবেশ আয়োজন। এর মাধ্যমে বিন্দুমাত্র সচেতনতা তৈরি করা গেলেও সেটাই সাফল্য।
সন্তানসম্ভবা মায়েদের যথাসময়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আনা ও নিয়মিত পরীক্ষার ব্যবস্থার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন শেখ আবু শাহিন। কানাইডাঙ্গা কমিউনিটি ক্লিনিকের সামনে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সুফলাকাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুস সামাদ। প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানgর রহমান। বক্তব্য রাখেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক সৌমেন বিশ্বাস ও স্বাস্থ্য সহকারী আমিনুল ইসলাম। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মতে, শাশুড়িদের সঙ্গে ছেলেদের স্ত্রীদের মনোমালিন্যের প্রধান কারণ হয় যদি মেয়েটি অপ্রাপ্তবয়স্ক হয়। তিনি সবাইকে শপথ করান, ‘কাউকে বাল্যবিবাহ দেবেন না। কারও বাল্যবিবাহ হতে দেবেন না।’ তিনি আরও বলেন, অন্যের বাড়ি থেকে যে মেয়েটি আপনার বাড়িতে আসে, তাঁকে মানিয়ে নিতে একটু সময় দিতে হয়। বেশিরভাগ সময়ে সেই সময় না দেওয়ায় অশান্তি তৈরি হয়। তাই সবাইকে এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে।
[ পরিণতি খারাপ হবে, ভিডিও বার্তায় হাসিনাকে হুমকি রোহিঙ্গা যুবকের ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.