বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: করোনাতঙ্কে বাসিন্দারা ঘরবন্দি হতে পালটে যাচ্ছে ডুয়ার্সের ছবি। এতদিন গাছের ডাল বেয়ে চুপিসারে লোকালয়ে ঢুকে পড়লেই হল, পছন্দের খাবারদাবার মিলত অনায়াসে। সেজন্য খুব একটা কসরত করতে হয়নি। বাড়ির গিন্নির অন্যমনস্কতার সুযোগে হেঁসেলে ঢুঁ মেরে কলা, আপেলের মতো ফল তো বটেই। আলমারির ছিটকিনি খুলে রান্না করা খাবার তুলে নিয়ে উধাও হয়েছে ওরা। কিন্তু লকডাউনের পর এই দৈনন্দিনতায় সহসা বদল।
এক মুহূর্ত গেরস্থের ঘরদোর ফাঁকা থাকছে না। দিনরাত লোকজন ঘরের ভিতরে কী করছে, সেটা বুঝতেই যেন মাসের অর্ধেক চলে গিয়েছে কপি বাহিনীর। প্রথমদিকে দাঁত খিঁচিয়ে, ভেঙছে চেষ্টা চালিয়েছে। লাভ হয়নি। উলটে দরজা-জানলায় নজরদারি বেড়েছে। অবশেষে রণে ভঙ্গ দিয়েছে বুনোদের দল। খাবার জোগাড় করতে সংঘাতের পথে না গিয়ে অনেকে সরাসরি ভিক্ষাবৃত্তিই করছে। আশ্চর্য হচ্ছেন? কিন্তু এটাই বাস্তব চিত্র। জঙ্গল থেকে লোকালয়ে ঢুকে বাড়ির দেওয়াল, কার্নিশ, ছাদে বসে অপেক্ষা করছে বাঁদরের দল। গৃহস্বামী বা গিন্নি কথন সদয় হন, কিছু খাবার ছুঁড়ে দেন, সেই অপেক্ষাই চলছে এখন দিনভর। জলপাইগুড়ির ডিএফও (বন্যপ্রাণ) নিশা গোস্বামী অবশ্য বলেন, “বাঁদরের দল জঙ্গলের আশপাশে ঘুরে বেড়ায়। লকডাউনে ওদের সমস্যা হওয়ার কথা নয়।”
তবে বনকর্তারা যাই বলুন না কেন, ডুয়ার্সের জঙ্গল লাগোয়া লাটাগুড়ি, রামশাই, বড়দিঘি, চালসা, মেটেলি, নাগরাকাটা জুড়ে একই ছবি। সামান্য অপেক্ষা করতে নজর কাড়বে অভুক্ত ভিক্ষাজীবী বাঁদরবাহিনী। লাটাগুড়ির বাসিন্দা পরিবেশপ্রেমী অনির্বাণ মজুমদার জানিয়েছেন, এখানে বাঁদরের দল যখন-তখন ঘরে ঢুকে খাবার খুজে নিতে অভ্যস্ত হয়েছে। আগে কিছু সময়ের জন্য হলেও বাড়ি ফাঁকা মিলত। চুরি করতে সমস্যা হয়নি।
কিন্তু লকডাউনের পর বাড়ির পুরুষরা বাড়িতে। তাই আগের মতো চুরি করে খাবার জোটানো সম্ভব হচ্ছে না। এখন নিরুপায় হয়ে যে যতটুকু খুশি মনে দিচ্ছে, সেটা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। একই অভিজ্ঞতা গরুমারা জঙ্গল লাগোয়া পানবাড়ি গ্রামের অনন্ত রায়ের। চালসার বিক্রম ছেত্রী বলেন, “জঙ্গল সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা বাঁদরকে ভালবাসার নজরে দেখতে অভ্যস্ত। কিন্তু সমস্যা হয়েছে লকডাউন। ঘরে খাবার নেই। নিজেদের খাওয়া মিলছে না বাঁদরকে কি দেবে?” এই পরিস্থিতিতে কপি বাহিনীও যে অনেকটাই সংকটে, তা অস্বীকার করছেন না বনকর্মীরা। যদিও তাঁদের দাবি, কিছুদিন পর আম, কাঁঠাল, লিচু পাকলে সমস্যা থাকবে না। জঙ্গল লাগোয়া এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, জঙ্গলে ফল পাকলেও ওরা লোকালয়ে আসবে। রুচি পালটে যাওয়াতেই এমন পরিবর্তন। তাই বাঁদরের দল এখন ভিখারির বেশ নিতেও পিছপা হচ্ছে না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.