সৌরভ মাজি, বর্ধমান: গ্রামের প্রাথমিক স্কুলেই হয়েছে ভোটগ্রহণ কেন্দ্র। ব্যালট বাক্স নিয়ে বসেছেন প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং পার্সোনেলরা। পাশে টেবিল পেতে বসেছেন পোলিং এজেন্টরাও। গলায় সচিত্র পরিচয়পত্র ঝুলিয়ে লাইনে দাঁড়িয়েছেন ভোটাররা। একে এক ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে ঢুকে ব্যালট পেপারে পছন্দের প্রার্থীকে ছাপ দিয়ে ব্যালট বাক্সে ভরে দিচ্ছে। যদিও ভোটারদের কারও বয়সই ১৮ বছর ছোঁয়নি। সকলেই খুদে ভোটার। বয়স ৬ থেকে ১১।
শুক্রবার পূর্ব বর্ধমানের (Purba Barddhaman) গলসির কুড়মুনায় এমনই অভিনব ভোটগ্রহণ পর্ব আয়োজিত হয়। ভোট শেষে গণনা ও ফলপ্রকাশও হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী-সহ পাঁচজন মন্ত্রীকে এদিন নির্বাচিত করেছে এই খুদে ভোটাররা। সকলেই কুড়মুনা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়া। এই স্কুলে প্রথমবার এমন ভোটগ্রহণ হয়। যা নিয়ে উচ্ছ্বসিত পড়ুয়া থেকে অভিভাবক, সকলেই। কিন্তু কেন এমন অকাল নির্বাচন? তাও আবার ভোটদাতাদের কেউই প্রাপ্ত বয়স্ক নয়!
আসলে পড়ুয়াদের নেতৃত্বদান, দায়িত্ব পালন, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি, মূল্যবোধ গড়তে, সর্বোপরি গণতান্ত্রিক দেশে ভোটদানের গুরুত্ব বোঝাতেই এমন আয়োজন। শিক্ষা দপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিটি স্কুলেই শিশু সংসদ রাখা হয়। তবে প্রায় সব স্কুলেই এই শিশু সংসদের প্রতিনিধিদের মনোনয়ন করা হয়ে থাকে। ভোটগ্রহণের মধ্য দিয়ে এই শিশু সংসদ নির্বাচন অতীতে দুই-একটি স্কুলে হয়েছে। সাম্প্রতিককালে এই প্রথম জেলার কোনও প্রাথমিক স্কুলে নির্বাচন হল বলে দাবি করেছেন কুড়মুনা প্রাথমিক স্কুল কর্তৃপক্ষ।
স্কুলের শিক্ষক রাজীব কুমার হুই জানান, ভোটের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, মনোনয়নপত্র দাখিল করা, পোলিং এজেন্ট, ব্যালট পেপার, ভোটগণনা (Vote Counting), সার্টিফিকেট প্রদান, শপথ নেওয়া- সবটাই করা হয়েছে। যেভাবে সাধারণ নির্বাচনে হয়, ঠিক সেইভাবে। তিনি জানান, এই স্কুলে মোট ছাত্রছাত্রী ২০৬ জন। প্রাক প্রাথমিক শ্রেণীর ৪০ জন পড়ুয়াকে নির্বাচনের বাইরে রাখা হয়েছিল। প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণীর ১৬৬ জন নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়। তার মধ্যে ১৪৩ জন ছাত্রছাত্রী ভোট দিয়েছে। তার মধ্যে ৩টি ভোট বাতিল হয়। আবার ৩টি নোটায় পড়েছে। প্রার্থীদের মধ্যে যে বেশি ভোট পাবে সে প্রধানমন্ত্রী, তারপর শিক্ষা ও পরিবেশ মন্ত্রী, তারপর স্বাস্থ্যমন্ত্রী, তারপর খাদ্যমন্ত্রী এবং শেষে ক্রীড়া ও সংস্কৃতি মন্ত্রী হবে বলে আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এদিন ভোটগণনা শেষে নির্বাচিতদের শংসাপত্র দেওয়া হয়। শপথবাক্যও পাঠ করানো হয়। মন্ত্রীর কার্ড ও সাদা টুপি পরিয়ে বরণ করা হয় নির্বাচিতদের। এদিন খুদে পড়ুয়াদের ভোটপর্ব দেখতে অনেক অভিভাবক হাজির হয়েছিলেন স্কুলে। বিদ্যালয় পরিদর্শক জয়ন্ত ঢালিও হাজির ছিলেন। সকলেই এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.