Advertisement
Advertisement

মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরেই ফের সাপ উদ্ধারে ছুট পশুপ্রেমী চন্দনের

হাতের সাপের ছোবলের ক্ষত এখনও ভাল করে শুকায়নি।

Meet The 'Snake man' Chandan Clement Singh
Published by: Subhamay Mandal
  • Posted:December 23, 2018 4:33 pm
  • Updated:December 23, 2018 4:33 pm  

দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরেও ফের ‘ভয়ঙ্কর সুন্দর’-এর রক্ষায় ছুট পশুপ্রেমীর। সম্প্রতি হুগলির বাঁশবেড়িয়ায় কার্তিক পুজোর প্যান্ডেল থেকে একটি বিষধর চন্দ্রবোড়া সাপকে উদ্ধার করে প্রকৃতির বুকে ছেড়ে দিতে গিয়ে ছোবল খেয়েছিলেন ব্যান্ডেলের বাসিন্দা চন্দন ক্লেমেন্ট সিং। সবার কাছে পশুপ্রেমী হিসাবেই পরিচিত তিনি। নিশ্চিত মৃত্যুর সঙ্গে প্রায় তিন সপ্তাহ পাঞ্জা কষে ফিরে এসেছিলেন চন্দন। বাঁ-হাতের সাপের ছোবলের ক্ষত এখনও ভাল করে শুকায়নি। নিয়মিত ড্রেসিং চলছে। এরকম পরিস্থিতিতে শনিবার বিকেলে ফের সাপ উদ্ধারে বেরিয়ে পড়লেন চন্দন। ব্যান্ডেলের দেবানন্দপুরে ব্যান্ডেজ বাঁধা হাতে একটি পরিত্যক্ত কুয়ো থেকে দুটি বিষধর শাখামুটি উদ্ধার করে তাদের নতুন জীবন দিলেন তিনি। যে তাঁকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছিল, সেই সাপকেই উদ্ধার করতে ত্রাতার ভূমিকায় ফের দেখা গেল চন্দনকে।

আসলে কোনও জীবের কষ্ট দেখলে তাঁর মন উচাটন হয়ে ওঠে। জীবঅন্ত প্রাণ। তাঁর কথায়, মানুষের যদি বাঁচার অধিকার থাকে তবে এই জীবজগতের প্রাণীদেরও বাঁচার অধিকার আছে। তাই পশুপাখিদের দুঃখেও তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়ান তিনি। পশুপ্রেমী চন্দন এর আগে দু’বার সাপের কামড়ে প্রায় মৃত্যুর দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছিলেন। তাই বাঁশবেড়িয়ায় সাপের ছোবল খাওয়ার পর পরিজনরা বলেছিলেন, পরিবারের কথা চিন্তা করে এবার এইসব বিপজ্জনক কাজ থেকে বিরত থাকতে। কিন্তু যাঁর সকালে ঘুম থেকে ওঠা থেকে শুরু করে রাতে শুতে যাওয়ার আগে পর্যন্ত সমস্ত কাজের মাঝে পশুপাখিরাই বিরাজ করে, তারা ভাল আছে কিনা সেই চিন্তায় উতলা করে, সে কী করে এই বারণ শুনবে। তাই শনিবার বিকেলে তিনি যখন শুনলেন দেবানন্দপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ভোতো গ্রামে খেতের মধ্যে চাষের জমিতে জল দেওয়ার জন্য একটি পনেরো ফুট গভীর কুয়োর মধ্যে দুটি শাখামুটি সাপ বাঁচার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে তখন আর তিনি নিজেকে ঠিক রাখতে পারেননি। নিজের হাতের ক্ষতের কথা ভুলে গিয়ে তিনি তখন ছুটে গিয়েছিলেন ওই গ্রামে। গ্রামের মানুষের ডাকেই সাড়া দিয়ে ছুটে যান চন্দন। তারপর লম্বা তার কুঁয়োর মধ্যে ফেলে তাতে করে দুটি শাখামুটিকে উপরে তুলে আনেন।

Advertisement

[গো-মড়কের হাত থেকে নিষ্কৃতি পেতে একযোগে আমিষ বর্জন হিন্দু-মুসলিমদের!]

সাপ দুটিকে তোলার পর সকলের চক্ষু চড়কগাছ। একটি সাপ লম্বায় প্রায় ছয় ফুট, আরেকটি লম্বায় প্রায় চার ফুট। পরে সেই সাপ দু’টিকে নিয়ে গিয়ে ব্যান্ডেলের জঙ্গলে মুক্ত পরিবেশে ছেড়ে দেন। বারবার সাপের ছোবল খেয়েও ভীত নন চন্দন। আসলে মৃত্যুকে যে অবলীলায় হারিয়ে দিতে পারেন তাঁর কাছে এটা কোনও ব্যাপারই নয়। চন্দন জানান, প্রকৃতিতে পশুপাখির সংখ্যা কমে গেলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে। এই জীবজগতে সকলেই সকলের পরিপূরক। সেখানে মানুষকেও দেখতে হবে কী করলে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকে। পাশাপাশি তিনি জানান, এই প্রচণ্ড ঠান্ডায় জলের মধ্যে থাকলে সাপ দু’টি মরে যেতে পারত। এদিকে ভোতো গ্রামের মানুষ চন্দনকে দু’হাত তুলে আশীর্বাদ করে বলেন, ‘বাবা, তোমার মাথার উপর মা মনসার হাত আছে। তাই তো তোমার কাছে মৃত্যু হার মেনেছে।’

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement