টিটুন মল্লিক, বাঁকুড়া: গভীর রাতে আচমকাই অজানা নম্বর থেকে ফোন। ফোনের ওপারের ব্যক্তি নিজেকে ‘জিন’ অর্থাৎ অশরীরী পরিচয় দেন। রাজমিস্ত্রিকে সাত ঘড়া মোহর, মণি-মাণিক্য পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন। ধর্মের ভয় দেখিয়ে ধাপে ধাপে তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে ২ লক্ষ ৭৬ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়া হল। সঞ্চয় খুইয়ে ওই রাজমিস্ত্রি হাজির হলেন সাইবার ক্রাইম থানায়। বাঁকুড়ার (Bankura) ওন্দা ব্লকের শ্যামনগর গ্রামের ঘটনায় তোলপাড়। বাঁকুড়া সাইবার থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
বিভিন্ন উপায়ে সাইবার জালিয়াতি (Cyber Crime) করে মানুষকে আর্থিক প্রতারণার খবর শিরোনামে এসেছে। কখনও লিঙ্ক পাঠিয়ে, কখনও ওটিপি দিয়ে, কখনও আবার আধার-প্যানের তথ্য হাতিয়ে, কখনও বায়োমেট্রিক ফিঙ্গার প্রিন্ট (Finger Print) চুরি করে লক্ষ-কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আর এবার অশরীরীর দোহাই দিয়ে রাজমিস্ত্রির কাছ থেকে যাবতীয় সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠল বাঁকুড়ায়। ওন্দা ব্লকের শ্যামনগর গ্রামের বাসিন্দা আমিনুদ্দিন মণ্ডল। তিনি পেশায় রাজমিস্ত্রি। দিনভর রোজগারের অর্থ তিলে তিলে সঞ্চয় করেছিলেন। কিন্তু ‘জিন’-এর কবলে পড়ে সেটুকুও খোয়াতে হল।
অক্টোবরের শেষ দিকে গভীর রাতে একটি অজানা নম্বর থেকে ফোন আসে আমিনুদ্দিনের কাছে। এত গভীর রাতে ফোন দেখে অবাক হন তিনি। তবে বিস্ময়ের আরও বাকি ছিল। ফোন ধরতেই ফোনের অপর প্রান্তের ব্যক্তি নিজেকে ‘জিন’ বলে পরিচয় দেয়। বলে, দক্ষিণ দিনাজপুর (South Dinajpur) জেলার একটি বিশেষ জায়গায় মণি-মাণিক্য, হিরে-জহরত ও সোনা ভর্তি সাত ঘড়া ধন রাখা আছে। আল্লাহর নির্দেশে ৩৩৬৫ জন জিন সেই সম্পত্তি পাহারা দিচ্ছে। সম্প্রতি দুষ্কৃতীরা ওই এলাকাটিকে অপবিত্র করে দিচ্ছে। তাই আল্লাহর নির্দেশ দ্রুত সেই সম্পদ সরিয়ে তা তুলে দিতে হবে কোনও ধর্মপ্রাণ মানুষের হাতে। সেক্ষেত্রে ধর্মপ্রাণ মানুষ হিসাবে আল্লাহ বেছে নিয়েছেন আমিনুদ্দিনকেই।
ফোনে এমন প্রস্তাব শুনে হকচকিয়ে যান ওই ব্যক্তি। এরপর থেকে প্রায়ই মাঝরাতে ফোন আসতে শুরু করে আমিনুদ্দিনের কাছে। শেষ পর্যন্ত আমিনুদ্দিন সেই কথা বিশ্বাস করেন। ‘জিন’ নির্দিষ্ট একটি দিনে সেই সম্পদ আমিনুদ্দিনের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার কথা জানায়। তবে শেষ মুহুর্তে সে বলে, আমিনুদ্দিনের বাড়িতে বাস্তু দোষ রয়েছে, তাই সম্পদ পৌঁছনো যাচ্ছে না। বাস্তু দোষ কাটাতে বিভিন্ন ধর্মীয় আচার পালনের নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি ধাপে ধাপে আমিনুদ্দিনকে অনলাইনে টাকা দেওয়ার কথা বলে অশরীরী। দেখানো হয় ধর্মের ভয়ও।
আমিনুদ্দিনের দাবি, প্রথমে জিনের প্রলোভনে পা দিয়ে এবং পরে ভয়ে ধারদেনা করে ধাপে ধাপে মোট ২ লক্ষ ৭৬ হাজার ৫০০ টাকা পাঠায় আমিনুদ্দিন। একটা সময় পর বুঝতে পারেন, তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। বাঁকুড়া থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন আমিনুদ্দিন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.