শান্তনু কর, জলপাইগুড়ি: বর্ষার দিনে সাপখোপ জঙ্গল থেকে বেরিয়ে লোকালয়ে ঢুকে পড়বে, উত্তরবঙ্গের জঙ্গলঘেরা এলাকায় এ এক পরিচিত দৃশ্য। মানুষজনও কিছুটা অভ্যস্ত। নধর, বিষধর সাপের উপদ্রবে অল্পবিস্তর ক্ষতিও হয়। তবে ময়নাগুড়ির এক বাড়িতে আশ্রয় নেওয়া বিষাক্ত গোখরো (Spectical Cobra) যা করল, তাতে চোখ কপালে ওঠার জোগাড় গৃহকর্তার। সোমবার সন্ধে নাগাদ তিনি ঘরে ঢুকে দেখলেন, খাটের নিচে রাখা ঝুড়ি থেকে অনায়াসে ডিম সাবাড় করে দিচ্ছি বিশালাকার গোখরো! পাশে পড়ে রয়েছে দুটি মুরগির নিথর দেহ।
জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়ির মাধবপুর গ্রামের বাসিন্দা ননী রায়। মুরগির ডিমে তা দেওয়ার জন্য প্রচুর ডিম ঝুড়ি ভরতি করে রেখে দিয়েছিলেন নিজের ঘরে, খাটের তলায়। দুটি মুরগিকে দিন কয়েক ধরে তা দেওয়ানোর চেষ্টা চলছিল। সোমবার সন্ধেবেলা তিনি কাজ থেকে ফিরে ঘরের অবস্থা দেখে চমকে ওঠেন। ঘরে ঢুকে ননীবাবু দেখেন, মুরগি দুটি নিথর অবস্থায় পড়ে আছে। তাদের গায়ে হাত ছোঁয়াতেই তিনি বুঝতে পারেন, মুরগিরা মৃত। এরপর খাটের তলায় উঁকি দিতেই কার্যত শিউড়ে ওঠেন। দেখেন, ঝুড়িভরতি ডিমগুলো একমনে খেয়ে চলেছে বড়সড় একটা সাপ!
দেখেই তিনি সরীসৃপটিকে ‘স্পেকটিক্যাল কোবরা’ বা গোখরো সাপ বলে চিনতে পারেন। তবে বাড়ির মালিকের উপস্থিতি অগ্রাহ্য করে গোখরো তখনও ডিমভক্ষণে ব্যস্ত। ননীবাবু সঙ্গে সঙ্গে খবর দেন স্থানীয় এক পরিবেশ কর্মীকে। তাঁর সহায়তা বনদপ্তরের খবর যায়। বনকর্মীকে ননীবাবুর বাড়িতে এসে উদ্ধার করেন বিষধর গোখরোটিকে। তাঁরা বলছেন, প্রচুর সংখ্যক ডিম খেয়ে ফেলায় গোখরোর শরীর ভারী হয়ে গিয়েছিল। তাই তাকে ঘর থেকে বের করে জঙ্গলে ছাড়তে বেশ বেগ পেতে হয়েছে।
বনকর্মীরা আরও জানাচ্ছেন, এই বর্ষায় লোকালয়ে বন্যপ্রাণীর উৎপাত বেড়েছে, বিশেষত সাপের দল প্রায়শয়ই গেরস্থ বাড়িতে ঢুকে সমস্যা আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। দিনে বহুবার এ ধরনের খবর নিয়ে ফোন আসছে তাঁদের বিভাগে। এই পরিস্থিতিতে বনবিভাগের পরিকল্পনা, পরিবেশ কর্মী ছাড়াও স্থানীয় সাহসী ছেলেমেয়েদের প্রাথমিক ট্রেনিং দেবেন, যাতে তাঁরা নিজেরাই বাড়ি থেকে নিরাপদে সাপেদের বের করে দিতে পারে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.