ধীমান রায়, কাটোয়া: গোটা বাড়ি দখল নিয়েছে মশকবাহিনী। কানের কাছে নাগারে ভেসে আসছে মশা ওড়ার পোঁ পোঁ শব্দ। মশার এই উপদ্রব নতুন নয়। সারাবছরই কমবেশি মশা ঘরে ঘরে দেখা যায়। কিন্তু গৃহকর্তার চিন্তা অন্য কারণে। কারণ এই ধরনের মশা তিনি আগে দেখেননি। সাইজে দশাশই। পা গুলিও লম্বা লম্বা। আর এই ধরনের মশা দেখেই চিন্তা বেড়েছে। গৃহকর্তার ধারণা, এগুলি নির্ঘাত ডেঙ্গি মশাই হবে। ডেঙ্গি আতঙ্কে বুধবার একটি প্লাস্টিক ব্যাগে শদেড়েক মশা বন্দি করে সটান হাসপাতালে পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোট থানার খুর্তুবা গ্রামের বাসিন্দা মনসুর আলি শেখ।
তিনি মঙ্গলকোট ব্লক হাসপাতালে যান। কর্তব্যরত চিকিৎসকের কাছে যেতেই চিকিৎসক তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন, “বলুন আপনার শরীরে কী সমস্যা?” মনসুর আলি শেখের উত্তর, “এখনও পর্যন্ত কিছু হয়নি স্যার। তবে আর কিছুদিন পরেই মনে হয় এন্তেকাল হয়ে যাবে। আপনারা এভাবে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে হবে?” তখনও কিছু বুঝতে পারেননি হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ জুলফিকার আলি। তিনি হাঁ করে ‘রোগীর’ মুখের দিকে চেয়ে রইলেন। তখন মনসুর আলি শেখ ব্যাগ থেকে বের করলেন একটি প্যাকেট। সেটি ডাক্তারবাবুর সামনে তুলে ধরে বলতে শুরু করেন, “এই দেখুন। এইরকম ডেঙ্গি মশায় গ্রাম ছেয়ে গিয়েছে। চলাফেরা করার সময়েও মশা এসে ছেঁকে ধরছে। ডেঙ্গু মশার সঙ্গে থাকলে আর কতদিন বাঁচতে পারব স্যার? আমার ওষুধ চাই না। মশা মারার ওষুধ কিছু দিন।”
এরপর চিকিৎসক জুলফিকার আলি দেখেন, প্লাস্টিক ব্যাগে অন্তত শদেড়েক মশা। সেগুলির মধ্যে বেশকিছু জ্যান্ত মশাও রয়েছে। মনসুর আলি শেখের এই কাণ্ড দেখে হেসে খুন চিকিৎসক। দুজনের কথোপকথন শুনে আরও কয়েকজন স্বাস্থ্যকর্মী এগিয়ে এসে মনসুর আলি শেখের কাণ্ডকারখানা দেখতে থাকেন। তাঁরাও হেসে লুটোপুটি।
জুলফিকার আলি বলেন, “এই আবহাওয়ার কারণে মশার উপদ্রব বেড়েছে একথা সত্য। আগে দেখেছি সাপে কাটলে সেই সাপ ধরে নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসতে। এভাবে কাউকে মশা ধরে হাসপাতালে আসতে দেখেনি।” জুলফিকার আলি বলেন, “এমনিতেই আমরা মশার লার্ভা নিধনে এলাকায় পদক্ষেপ করছি। পাশাপাশি মানুষদের সচেতন করছি। তবে এই কাজে সকলের আরও সচেতন হওয়ার প্রয়োজন।” মনসুর আলি শেখের দাবি, তাঁদের গ্রামে ব্লিচিং পাউডার ছড়াতে হবে। এলাকায় নোংরা আবর্জনা পরিষ্কার করতে হবে।
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.