অর্ণব আইচ: বাঘের ছানার দাম সাড়ে তিন হাজার থেকে সাড়ে সাত হাজার ডলারের মধ্যে। সিংহ শাবকের দাম প্রায় একইরকম। তবে সাদা বাঘ বা সাদা সিংহের শাবক চাইলে আরও বেশি খরচ করতে হবে। হাজার তিনেক ডলার বা তার একটু বেশি খরচ করলে মিলতে পারে জাগুয়ার, চিতা বা লেপার্ডের শাবকও। অনলাইনে বিটকয়েনের মাধ্যমে ডলার মেটালেই হাতে চলে আসবে বাঘ, সিংহ, লেপার্ডের মতো ‘বিগ ক্যাট’ পোষ্য।
বন্যপ্রাণের ব্রিডিংয়ের জন্য ফার্ম। তাতেই ‘তৈরি হচ্ছে’ বাঘ, সিংহ, লেপার্ড, বিভিন্ন দেশের বাঁদরের শাবক। সেই ফার্ম থেকেই বাংলাদেশ ও এই রাজ্য হয়ে বন্যপশুদের শাবক পাচার হচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। শনিবার বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে থেকে পাচার হওয়ার সময়ই হাতেনাতে রাজ্যের বন দপ্তরের গোয়েন্দা বাহিনী ও কেন্দ্রীয় সরকারের ওয়াইল্ড লাইফ ক্রাইম কন্ট্রোল ব্যুরোর গোয়েন্দাদের হাতে ধরা পড়েছে একটি সিংহ শাবক ও তিনটি ভিন্ন প্রজাতির বাঁদর। গ্রেপ্তার হয় হাওড়ার তিন বাসিন্দা। প্রাথমিক তদন্তের পর গোয়েন্দারা জেনেছেন, এই চক্রটি গত ৬ মাসের মধ্যে আরও দু’বার বন্য পশু একই রুটে পাচার করেছে। ফলে গত কয়েক মাসের মধ্যে কলকাতা হয়ে বাঘ বা সিংহের শাবক পাচার হয়েছে, এমন সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও শেষ পর্যন্ত এই পশু শাবকগুলি কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তা নিয়ে ধন্দে গোয়েন্দারা। প্রাথমিকভাবে তাঁরা নিশ্চিত যে, কোনও প্রভাবশালী ধনী ব্যক্তির নিজস্ব চিড়িয়াখানার জন্য ওই পশুগুলি নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। আবার নেপাল হয়ে চিন অথবা মুম্বই থেকে মধ্যপ্রাচ্যে এই সিংহ শাবক পাচার হচ্ছিল কি না, তা-ও গোয়েন্দারা খতিয়ে দেখছেন। আবার দেশের কোথাও কোনও ব্যক্তির বাড়িতে এই ধরনের নিজস্ব চিড়িয়াখানা রয়েছে কি না, তারও সন্ধান চালানো শুরু হয়েছে।
বন দপ্তরের গোয়েন্দারা জেনেছেন, ২০১৭ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশের যশোরের চাঁসরা এলাকায় গাড়ি করে পাচার হচ্ছিল দু’টি সিংহ ও দু’টি লেপার্ডের শাবক। বাংলাদেশ পুলিশের হাতে তখন ধরা পড়ে রানা মিঞা ও মানজুরুল আলম নামে দুই পাচারকারী। বাংলাদেশ পুলিশ তাদের এক মাথার সন্ধানও পেয়েছিল, যে বাংলাদেশ ও ভারতে এই ধরনের পাচারের সঙ্গে যুক্ত। গোয়েন্দারা জেনেছেন, আমেরিকা থেকে জার্মানি, বহু জায়গায় রয়েছে বন্য পশুদের খামার, যেখানে ব্রিডিং করানো হয় বন্য পশুদের। এছাড়াও থাইল্যান্ডের কিছু জায়গায় যে বাঘের ব্রিডিং হয়, তা-ও জেনেছেন গোয়েন্দারা।
তাঁদের মতে, থাইল্যান্ডের কোনও খামারে গোপনে বাঘ, সিংহ, লেপার্ডের মতো ‘বড় বিড়াল’ ও ভিন্ন প্রজাতির বাঁদরদের মধ্যেও ব্রিডিং করানো হয়। এমনকী, এ-ও জানা গিয়েছে, প্রাকৃতিক নিয়ম বহির্ভূতভাবেই বাঘ ও সিংহের সংকর প্রজাতির টাইগন বা লাইগারও ‘তৈরি’ করে পাচার করা হয়। অর্ডার অনুযায়ী থাইল্যান্ডের খামার থেকে ব্যাগে করে মায়ানমারের সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশ। মূলত যশোর থেকে বনগাঁ সীমান্ত পেরিয়েই এই রাজ্যে ওই পশুগুলি পাচার করা হয়েছে। তবে বিদেশে বহু খামার যে বন্যপ্রাণ ‘ব্রিড’ করিয়ে অনলাইনে বিজ্ঞাপন দেয়, তা জানা গিয়েছে। যাঁরা বাঘ বা সিংহকে পোষ্য বানাতে চান, তাঁরা এজেন্ট মারফত অনলাইনে ওই খামার সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বিটকয়েনের মাধ্যমে আগাম পাওনা মেটাতে হয়। এর পর ওই খামার পাচারকারীদের মাধ্যমে মায়নমার, বাংলাদেশ থেকে সেগুলি পাচার করে গন্তব্যে। ভারত ও বাংলাদেশের মূল এজেন্টদের সন্ধান চালিয়ে পাচারকারীদের ধরার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দারা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.