পাক তরুণী আয়েশা রশান।
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দেশে দেশে সীমারেখা টানা থাকে। কিন্তু মানুষের হৃদয়ে কোনও সীমারেখা থাকে না। এই পৃথিবীতে মানুষ যে একটাই জাতি সেটা বিভেদের রাজনীতি বহু যুগ আগেই ভুলিয়ে দিয়েছে। কিন্তু আজকের দিনে দাঁড়িয়েও এমন কিছু ঘটনা ঘটে যা ফের মনে করিয়ে দেয় সব মানুষই আসলে পরস্পরের ‘আত্মীয়’। সম্প্রতি এক ভারতীয়র হৃৎযন্ত্রে পুনর্জন্ম লাভ করলেন পাকিস্তানের এক তরুণী। এই ঘটনা ফের নতুন করে বুঝিয়ে দিল ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’ কথাটির সারমর্ম।
এই গল্প বছর উনিশের পাক তরুণী আয়েশা রশানের। ছোটবেলা থেকে তাঁর স্বপ্ন ছিল ফ্যাশন ডিজাইনার হওয়ার। করাচির একটি স্কুলে পড়াশোনা করতেন আয়েশা। সব কিছুই ঠিকঠাক চলছিল। হঠাৎই বাধ সাধে তাঁর শরীর। হৃদযন্ত্রে জটিল সমস্যা ধরা পড়ে আয়েশার। এমনকী ২০১৯ সালে হৃদরোগেও আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। ওই বছরই চিকিৎসার জন্য আয়েশাকে ভারতে নিয়ে আসে তাঁর পরিবার। ক্রমশ হৃদযন্ত্রের অবস্থা দুর্বল হয়ে যায় আয়েশার। দীর্ঘদিন চিকিৎসা চলার পর ২০২৩ সালে সেপ্টেম্বর মাসে চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন, হৃদযন্ত্রের প্রতিস্থাপন করা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। কিন্তু সেজন্য খরচ পড়বে প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকা।
বড় অঙ্কের এই অর্থের পরিমাণ শুনে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে আয়েশার পরিবারের। সেই আর্থিক সচ্ছলতা যে তাঁদের নেই। এমন বিপদের দিনে এই পাক পরিবারের কাছে ভগবান হয়ে আসে চেন্নাইয়ের ঐশ্বর্য ট্রাস্ট ও এমজিএম হেলথকেয়ার হাসপাতাল। অস্ত্রোপচারের কোনও খরচই দিতে হয়নি আয়েশার পরিবারকে। গত ১৭ এপ্রিল সফলভাবে আয়েশার শরীরে হৃদযন্ত্র প্রতিষ্ঠাপন হয়। যেন নতুন জীবন ফিরে পান এই পাক তরুণী।
এখন খোলা হাওয়ার শ্বাস নিতে পারছেন আয়েশা। এর জন্য তাঁর পরিবারের সদস্যরা অসংখ্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন ওই হাসপাতালের সমস্ত চিকিৎসক, স্টাফ ও ঐশ্বর্য ট্রাস্টকে। সংবাদমাধ্যমে নিজের পুনর্জন্মের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়েছেন আয়েশা। তাঁর কথায়, “আমি এখন খুব সহজেই নিশ্বাস নিতে পারছি।” জানা গিয়েছে, দিল্লির এক হাসপাতাল থেকে আয়েশার জন্য হৃদযন্ত্র নিয়ে আসা হয়েছিল। সেই ‘অজ্ঞাতপরিচয়’ মানুষটির কাছে সারা জীবনের জন্য কৃতজ্ঞ হয়ে রইলেন পাক তরুণী। কাঁটাতারের হিসেবে তিনি হয়তো অন্য দেশের মানুষই ছিলেন। কিন্তু হৃদয়ের সংযোগে ভিনদেশী আয়েশাকে নতুন জীবন পাইয়ে দিলেন তিনিই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.