ধীমান রায়, কাটোয়া: মহাভারতে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে চক্রব্যুহে ঢুকে পড়েছিলেন অভিমন্যু। কিন্তু চক্রব্যুহ থেকে বের হওয়ার কৌশল তাঁর জানা ছিল না। কৌরবপক্ষের সপ্তরথীর হাতে প্রাণ দিতে হয়েছিল অর্জুনপুত্রকে । পূর্ব বর্ধমানের ভাতারের অভিমন্যু গড়াইয়ের পরিস্থিতি অনেকটা সেরকমই হতে বসেছিল। সপ্তরথী নয়, একা ’বজরংবলী’ই তাঁকে যা জব্দ করে ছেড়েছে, তা সারাজীবন বিলক্ষণ মনে রাখবেন ভাতারের অভিমন্যু। সাইকেলে চড়ে বাজার যাচ্ছিলেন পেশায় কাঠমিস্ত্রি অভিমন্যু গড়াই। মাঝরাস্তায় প্রথমে তাঁর সাইকেল আটকায় এক হনুমান। তারপর সাইকেলের ক্যারিয়ারে উঠে বসে পড়ে সে। নামার নামগন্ধ নেই। বাধ্য হয়ে অভিমন্যুবাবুকে প্রায় আধঘন্টা হনুমানটিকে সাইকেলে চাপিয়ে চক্কর মারতে হয়। তারপর সাইকেলে চড়ার শখ মিটলে নিজে থেকেই নেমে চলে যায় বজরংবলী। হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন অভিমণ্যু।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ছটা নাগাদ সাইকেল চড়ে ভাতার গ্রাম থেকে বাজারে যাচ্ছিলেন অভিমন্যু গড়াই। তাঁর সঙ্গেই অন্য একটি সাইকেলে ছিল তার মেয়ে একাদশ শ্রেণির ছাত্রী সরস্বতী। অভিমন্যু জানিয়েছেন, এদিন এক গৃহশিক্ষকের কাছে টিউশন পড়া শুরু করার কথা ছিল সরস্বতীর। তাই প্রথম দিনে মেয়েকে সঙ্গে করে তিনি নিজেই ভাতার বাজারে যাচ্ছিলেন।
ঘটনার সূত্রপাত ভাতারের কামারপাড়া রোডের সাহাদিঘি নামের একটি পুকুরের কাছে। সেসময় বাজারের দিকে সাইকেলে চড়ে যাচ্ছিলেন স্বপন পাল ও রামপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়। তারা বলেন,” আমরা অভিমন্যুবাবু ও তার মেয়ের আগেপিছু যাচ্ছিলাম। রাস্তার ধারে একটি বড় হনুমান বসেছিল। সেই হনুমান প্রথমে অভিমন্যুর সাইকেলের সামনে এসে তাকে দাঁড় করায়। তারপর সটান সাইকেলের ক্যারিয়ারে বসে পড়ে। আর কিছুতেই নামতে চাইছিল না।”
অভিমন্যুর কথায়, “হনুমানটা আমার সাইকেলে বসে পড়লেও শান্তভাবেই ছিল। সাইকেল দাঁড় করিয়ে বারবার নামানোর চেষ্টা করছিলাম কিন্তু কিছুতেই নামছিল না। আমার ক্ষতিও কিছু করেনি।” জানা গিয়েছে ওই দৃশ্য দেখে বেশকিছু লোকজন জড়ো হয়ে যায়। তাদের মধ্যে একজন অভিমন্যুবাবুকে পরামর্শ দেন,” মনে হয় ওর সাইকেলে চাপার শখ হয়েছে। একটু ঘুরিয়ে নিয়ে এসো।” অগত্যা তাই শোনেন অভিমন্যু। প্রায় আধঘণ্টা ভাতার বাজারের এমাথা থেকে ওমাথা চক্কর কাটার পর, তিনি যথন ভাতার কৃষিবাজারে ঢুকছিলেন, তখনই তড়াক করে সাইকে্ল থেকে নেমে পড়ে হনুমানটি। বাবার সঙ্গে বাধ্য হয়ে মেয়েকেও ঘুরতে হচ্ছিল। সরস্বতী বলে, ” আমার না হয় পড়তে যেতে একটু দেরী হয়ে গেল, কিন্তু হনুমানটার কীর্তি দেখে ভালই লাগল।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.