বাবুল হক, মালদহ: ঘোড়াও সরকারি চাকরি করে। বেতন পায়। তবে অবসরের পর যে মানুষের মতো ঘোড়াও পেনশন পায়, সেটা হয়তো অনেকেরই অজানা। হ্যাঁ, ঘোড়াও পেনশন পাচ্ছে। সৌজন্যে বিএসএফের মালদহ রেঞ্জ।
মালদহ সীমান্তে সরকারি পেনশনেই টানা সাত বছর ধরে দিন কাটছে ২৩ বছরের ‘মমতা’র। আর ১৮ বছর বয়সী ‘গাইড’ বছর দু’য়েক আগে অবসর নিয়েছে। সে-ও মমতার সঙ্গী। ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর সঙ্গেই দেশরক্ষার কাজ করেছে মমতা আর গাইড। কিন্তু ওদের বয়স ১৬ পেরোলেই নিতে হয় অবসর। তারপর থেকেই ওরা পেনশন পাচ্ছে। মালদহের কালিয়াচক থানার অন্তর্গত ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের শ্মশানি বিএসএফ চৌকির ঘেরাটোপের মধ্যেই অস্থায়ী এক অশ্বশালা। পাকা পাঁচিল। সেখানেই অবসরপ্রাপ্ত দুই সীমান্ত প্রহরী মমতা আর গাইডের দিন কাটছে।
সেই আস্তাবলে গিয়ে দেখা যায়, বিএসএফের একজন কর্মী প্রভীন সিং রাঠোর ওই দুই ঘোড়ার শরীরের পরিচর্যায় ব্যস্ত। হাত, পা থেকে সর্বশরীর মালিশ করে দিচ্ছেন রাজস্থানের যুবক প্রবীণ। তারপর চিকিৎসক এসে মেডিক্যাল ফিটনেস দেখে গেলেন। সুস্থ এখনও। খাবারে টান? বিএসএফের সরকারি কর্মী ‘হর্স হ্যান্ডেলর’ প্রবীন সিং রাঠোর বলেন, “চাকরি জীবনে এরা খুব পরিশ্রম করত। এদের পিঠে সওয়ার হয়ে সশস্ত্র জওয়ানরা ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে টহল দিতেন। তখন এদের একশো শতাংশ খাবার দেওয়া হত। এখন অবসরের পর এরা বসে বসেই খাচ্ছে। এদের নিলামে বিক্রি করার নিয়ম বন্ধ হয়েছে। সত্তর শতাংশ পেনশন পাচ্ছে এরা।” হ্যাঁ, এমনই একজোড়া ঘোড়ার দিন কাটছে সরকারি পেনশনেই। ঘোড়ার নামে তো কোনও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট হয় না। তাহলে পেনশনের টাকা কে পান?
বিএসএফের মালদহ রেঞ্জের ডিআইজি সুধীর হোদার কথায়, “না, নগদ টাকায় পেনশন নয়। পেনশন হিসাবে এখন ৭০ শতাংশ খাবার দেওয়া হচ্ছে।” মমতা আর গাইড, এই নাম দিয়েছেন বিএসএফ কর্তারাই। দুই ঘোড়ার সার্ভিস বুকও রয়েছে। বেতন এবং পেনশন বাবদ সরকারের কত টাকা খরচ হচ্ছে, সেই হিসাবও থাকছে। বিএসএফ সূত্রে খবর, মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়র থেকে প্রায় ৩২ কিলোমিটার দূরে টেকনোপুরে রয়েছে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর বিশেষ ট্রেনিং অ্যাকাডেমি। সেখানে ঘোড়া, হাতি, কুকুরের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সেখান থেকেই ১৩ বছরের মমতাকে আনা হয়েছিল মালদহে। তারপর আনা হয় ১২ বছরের গাইডকে। দীর্ঘদিন সীমান্তে টহলদারির পর মিলেছে অবসর। মিলছে পেনশন। কীভাবে পাচ্ছে?
বিএসএফ সূত্র জানিয়েছে, পেনশন হিসাবে মিলছে ছোলা, লবণ আর ভুসা। চরতে গিয়ে মিলছে সবুজ ঘাস। চাকরিরত অবস্থায় মিলত চিটাগুঁড়, ছোলার ছাতুও। এতেই সুস্থ আছে মমতা আর গাইড। বিএসএফের মালদহ রেঞ্জের ডিআইজি সুধীর হোদা বলেন, “মমতা আর গাইডের অবসরের পর থেকে মালদ সীমান্তে ঘোড়সওয়ার টহল বন্ধ রয়েছে। আমরা নতুন করে একজোড়া প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ঘোড়া চেয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি লিখেছি।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.