সুমন করাতি, হুগলি: এ এক মায়ের জীবনযুদ্ধের কাহিনি। মারণরোগ ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই করে জীবনের মূলস্রোতে ফিরে আসা। এই জীবন যুদ্ধের কাহিনি যেন হার মানাবে সিনেমাকে। হুগলির সারমেয়র জীবনের সংগ্রাম হার মানাবে রূপকথাকেও। আদুরে আতুর জীবনযুদ্ধ এখন অনেক মানুষকে লড়াইয়ের রসদ জোগাচ্ছে।
হুগলির বাঁশবেড়িয়ার হংসেশ্বরী মন্দিরে গেলে হামেশাই দেখা মেলে আতুর। ছোট থেকে মন্দির চত্বরে বেড়ে ওঠা। মন্দিরে আসা ভক্তদের পায়ে পায়ে ঘুরে বড় হওয়া। মায়ের বাড়িই যেন আতুর বাড়ি। এহেন সারমেয়র শরীরেই একদিন দানা বাঁধে মারণরোগ ক্যানসার। বছর খানেকের লড়াইয়ের পর এখন স্বাভাবিক জীবন কাটাচ্ছে এই সারমেয়। মন্দির কর্তৃপক্ষ জানায়, ছোটবেলা একটি হঠাৎই এখানে ঠাঁই নেয় আতু। দেবীর ভোগের উচ্ছিষ্ট খেয়েই বড় হয়ে উঠেছিল। শান্ত স্বভাবের পথকুকুর আতু মন্দিরের পুরোহিত থেকে ভক্ত, সকলের প্রিয়। হঠাৎ অসুস্থতা কাবু করে ফেলে তাকে। জরায়ু থেকে শুরু হয় রক্তক্ষরণ। বন্ধ হয়ে গিয়েছিল খাওয়াদাওয়া। হংসেশ্বরী মন্দির পুরাতত্ত্ব বিভাগের আওতাধীন। সেই দপ্তরের অস্থায়ী কর্মী প্রতাপ সিংহ আতুর এই অবস্থা দেখে চিন্তিত হয়ে পড়েন।
আতুকে নিয়ে শুরু হয় ছোটাছুটি। মন্দিরের কর্মী গণেশ দাস এই কাজে প্রতাপকে সাহায্য করেন। বাংলাদেশের জনপ্রিয় পোষ্য কুকুর সন্তুর নামে সোশাল মিডিয়ায় একটি পেজ রয়েছে। সেই পেজের সদস্যরা একদিন হংসেশ্বরী মন্দিরে পুজো দিতে আসেন। আতুর চিকিৎসায় তাঁদের দ্বারস্থ হন প্রতাপ ও গণেশ। সন্ত গ্রুপের সদস্যরাই আতুর কেমোথেরাপির ব্যবস্থা করেন। পাঁচটি কেমোর পর ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠে আতু। কেমোর ফলে শরীর থেকে উঠে গিয়েছিল লোম। কিন্তু ওষুধের জোরে ফের তা ফিরে আসে। তার পর জীবনের মূলস্রোতে ফেরা। কয়েকদিন আগেও অবধিও অধিকাংশ সময় হংসেশ্বরী মন্দিরে বসে থাকতে দেখা যেত তাকে। তবে সন্তান প্রসবের পর এখন মন্দিরের সামনেই একটি গাছের নিচে তার বর্তমান আস্তানা।
প্রতাপের সাহায্য ছাড়া ক্যানসার জয় অধরাই থেকে যেত আতুর। পুরাতত্ত্ব বিভাগের অস্থায়ী কর্মী বলেন, “সম্প্রতি আতু তিন সন্তানের জন্ম দিয়েছে। সম্ভবত দুটি ছানা জন্মের পর মারা যায়। মন্দির সংলগ্ন এলাকার একটি গাছের নিচেই এখন আতু থাকছে। তার সন্তানও সেখানে রয়েছে। আমরা দুবেলা সেখানে গিয়েই ওকে খাবার দিয়ে আসছি। তবে এখন ও সুস্থ রয়েছে।” সারমেয় আতুর জীবনযুদ্ধ সাহস জোগাচ্ছে অনেককেই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.