সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কর্পূর উবে যায়। কিন্তু, গ্রহ? একটা আস্ত গ্রহ বেমালুম উবে যেতে পারে কি? উত্তর, পারে। শুধু পারেই না, ইতিমধ্যেই পেরে গিয়েছে। আমাদের পৃথিবী থেকে ৯৭ আলোকবর্ষ দূরের এক নক্ষত্রপুঞ্জ ক্যানসারে এমনটা হয় ঘটে গিয়েছে। নয়তো এই মুহূর্তে ঘটে যাওয়ার একেবারে শেষ পর্যায়ে। কারণ এই মূহূর্তে ওই গ্রহের উবে যেতে বসা যে ছবি বিজ্ঞানীদের নজরে পড়ছে তা ৯৭ বছর আগেই হয়ে গিয়েছে। তাই কে বলতে পারে এই ৯৭ বছরে গ্রহটি ইতিমধ্যেই উবে গিয়েছে কি না! ১৩ ডিসেম্বর একটি বিজ্ঞান পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে প্রতিবেদনটি। তাতেই সামনে এসেছে উবে যাওয়া গ্রহটির সম্পর্কে বিশদ তথ্য।
জানা গিয়েছে, ক্যানসার নক্ষত্রপুঞ্জের একটি নক্ষত্র, যার নাম ‘গ্লিয়েসি ৩৪৭০’, নিজেই নিজের গ্রহকে গিলে খাচ্ছে। শুধু খাচ্ছেই না, জ্বালিয়ে পুড়িয়ে খাক করে দিচ্ছে ওই গ্রহের বায়ুমণ্ডলকে। গ্রহটির নাম ‘গ্লিয়েসি ৩৪৭০-বি’ বা ‘জিজে ৩৪৭০ বি’। আর তা আকারে আমাদের পৃথিবীর প্রায় ৫৭গুণ। অর্থাৎ আমাদের সৌরমণ্ডলের নেপচুনের মতোই আকৃতি ওই গ্রহের। আর এই গ্রহের সঙ্গে তার সূর্যের দূরত্ব মাত্র ৩৭ লক্ষ মাইল। অর্থাৎ আমাদের সূর্যের সঙ্গে তার সবচেয়ে কাছের গ্রহ বুধের যা দূরত্ব তার দশভাগের একভাগেরও কম দূরত্ব এই গ্রহের সঙ্গে তার নক্ষত্রের। স্বাভাবিক ভাবেই নক্ষত্রের মারাত্মক তাপমাত্রা সহ্য করতে হয় তাকে। অবশ্য গ্লিয়েসি ৩৪৭০ নক্ষত্রটি আকৃতিতে সূর্যের চেয়ে অনেকটাই ছোট। কিন্তু, বয়সও সূর্যের থেকে অনেকটাই কম তার। সূর্যের বয়স যেখানে ৫০০ কোটি বছর। গ্লিয়েসি ৩৪৭০ সেখানে ২০০ কোটি বছরের তরুণ। তাই তার তেজও বেশি। আর তার সবচেয়ে কাছের গ্রহটিই সেই তেজের শিকার।
১ হাজার ৭০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটেরও বেশি তাপমাত্রায় গ্লিয়েসি ৩৪৭০ পুড়িয়ে দিচ্ছে তার গ্রহ ‘গ্লিয়েসি ৩৪৭০ বি’কে। এরইমধ্যে গ্রহের বায়ুমণ্ডলের ৩৫ শতাংশ উবে গিয়েছে মহাকাশে। উড়ে গিয়েছে গ্রহটির বায়ুমণ্ডলে থাকা হাইড্রোজেনের অনেকখানিই। গবেষকদের অনুমান, গ্রহটি প্রচুর পরিমাণে হারিয়ে ফেলেছে তার বায়ুমণ্ডলের হিলিয়াম গ্যাসও। এমনকি, বায়ুমণ্ডলের অনেক নিচের স্তরে থাকা কার্বনও খুইয়ে ফেলেছে বলে অনুমান বিশেষজ্ঞদের। নাসার হাবল স্পেস টেলিস্কোপের নজরে ওই ভিনগ্রহটি ধরা পড়ে বছর ছ’য়েক আগে। কিন্তু তখনও জানা যায়নি, তা উবে যাচ্ছে। আর সেটা হচ্ছে অত্যন্ত দ্রুত হারে। গত ৬ বছর ধরে গ্রহটির উপর নজর রেখে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বোঝেন ক্রমশ আকারে কমছে ওই গ্রহ। এই বিষয়টি নিয়েই গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স’-এর ১৩ ডিসেম্বর সংখ্যায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.