Advertisement
Advertisement
Bangladesh

ষোড়শ শতাব্দীতে ৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে দুর্গাপুজো বাংলাদেশে! চমকে যাবেন ইতিহাস জানলে

বর্তমান হিসাব অনুযায়ী ওই টাকার পরিমাণ প্রায় ৩০০ কোটিরও বেশি।

Durga Puja in Bangladesh costed 8 lakh rupees in 16th century
Published by: Suchinta Pal Chowdhury
  • Posted:October 11, 2024 4:56 pm
  • Updated:October 11, 2024 4:56 pm  

সুকুমার সরকার, ঢাকা: ত্রেতাযুগে স্বয়ং ভগবান রামচন্দ্র রাবণ বধের জন্য অকালে এই দুর্গাপুজো করেছিলেন। আর কলিযুগের ষোড়শ শতাব্দীর শেষ ভাগে রাজা কংস নারায়ণ সাড়ে আট লক্ষ টাকা ব্যয়ে শারদীয় দুর্গোৎসবের আয়োজন করেন। এই মহাযজ্ঞই মাত্রা ছাড়িয়ে আজ সর্বজনীন হয়ে উঠেছে। আজও বাংলাদেশের তাহেরপুরে বজায় রয়েছে সেই ধারা। এই স্থানটি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার একটি পৌরসভা। তাহিরপুর রাজবংশ বাংলাদেশের প্রাচীন রাজবংশগুলোর মধ্যে অন্যতম। তবে কালক্রমে ‘তাহিরপুর’ নামটি তাহেরপুর বলে উচ্চারিত হচ্ছে। 

জানা যায়, এই রাজবংশের আদিপুরুষ ছিলেন মৌনভট্ট। আর বংশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সামন্ত রাজা ছিলেন ইতিহাসখ্যাত কংস নারায়ণ রায়। তিনি সুলতানি আমলে চট্টগ্রামে মগ দমনে বীরের ভূমিকা পালন করেন। পাঠান আমলে কিছুদিন ফৌজদারের দায়িত্বও পালন করেন। মোঘল আমলে এসে কিছুকাল বাংলা-বিহারের অস্থায়ী দেওয়ান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। এই সময়ে তিনি ‘রাজা’ উপাধি পান। বাংলা মোঘলদের অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এলে সম্রাট আকবর রাজা কংস নারায়ণকে সুবেবাংলার দেওয়ান নিযুক্ত করেন। কিন্তু যথেষ্ট বয়স হওয়ায় তিনি দেওয়ানের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে তাহেরপুরে ফিরে ধর্মীয় ও সামাজিক কাজে আত্মনিয়োগ করেন। সমসাময়িক বাংলার হিন্দু সমাজে নারায়ণ রায় চিরভাস্বর হয়ে থাকার মানসে এক মহাযজ্ঞ সাধন করতে আগ্রহী হলেন। এই লক্ষ্যে তাঁর পরগণার সব শাস্ত্রজ্ঞ ব্রাহ্মণ পণ্ডিতদের দরবারে আহ্বান করে তাঁদের মত চাইলেন।

Advertisement

প্রচলিত আছে, তাঁর মনোবাসনার কথা শুনে পণ্ডিত রমেশ শাস্ত্রী বলেছিলেন, “বিশ্বজিৎ, রাজসুয়, অশ্বমেধ ও গোমেধ—এই চারটি মহাযজ্ঞ নামে কথিত। প্রথম দুটি কেবল সার্বভৌম সম্রাটেরা করতে পারেন আর পরের দুটি কলিতে নিষিদ্ধ। তোমার পক্ষে দুর্গোৎসব ভিন্ন অন্য কোনও মহাযজ্ঞ উপযুক্ত নেই। এই যজ্ঞ সকল যুগে সকল জাতীয় লোকেই করতে পারে এবং এক যজ্ঞেই সব যজ্ঞের ফল লাভ হয়।” অন্যান্য সব পণ্ডিত রমেশ শাস্ত্রীর এই মতে সমর্থন জানান। ষোড়শ শতাব্দীর শেষ ভাগে রাজা কংস নারায়ণ সাড়ে আট লক্ষ টাকা ব্যয়ে শারদীয় দুর্গোৎসবের আয়োজন করেন। বর্তমান হিসাব অনুযায়ী ওই টাকার পরিমাণ প্রায় ৩০০ কোটিরও বেশি। সেসময় উৎসবটি হয়েছিল বারনই নদের পূর্ব তীরে রামরামা গ্রামের দুর্গামন্দিরে।

আজও সেই পদ্ধতিতেই দুর্গাপুজো অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে ইতিহাস ঘাটলে জানা যাবে যে, কংস নারায়ণের পরবর্তী চতুর্থ পুরুষ লক্ষ্মী নারায়ণের সময় সম্রাট ঔরঙ্গজেবের ছোট ভাই বাংলার সুবেদার শাহ সুজা বারনই নদের পূর্ব তীরে অবস্থিত রাজা কংসের প্রাসাদ ধ্বংস করে দিয়ে যায়। পরে অবশ্য লক্ষ্মী নারায়ণ ঔরঙ্গজেবের কাছ থেকে নদীর পশ্চিম তীরে একটি পরগনা লাভ করেন। সেখানেই রাজবাড়ি নির্মাণ করে রাজত্ব করেন। ১৮৬২ সালে রাজা বীরেশ্বর রায়ের স্ত্রী রানী জয় সুন্দরী রাজবাড়ির সঙ্গে একটি দুর্গামন্দির নির্মাণ করেন। মন্দিরের নামফলকটি বর্তমানে রাজশাহীতে বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে। এই রাজবংশের শেষ রাজা ছিলেন শিবশেখরেশ্বর। তাঁর বাবা শশী শেখরেশ্বরের সময় থেকে রাজারা কলকাতায় গিয়ে থাকতেন। শুধু পুজোর সময়ে এখানে আসতেন। ১৯২৭ সালে শেষবারের মতো তিনি তাহেরপুরে এসেছিলেন। একপর্যায়ে রাজবাড়ির এই মন্দিরটি প্রায় পরিত্যক্ত হয়ে যায়। ১৯৬৭ সালে রাজবাড়িতে কলেজ করা হয়।

শেষ রাজার ম্যানেজারের নাতির নাম সত্যজিৎ রায়। তিনি ওই কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক। তিনি বলেন, তাঁর দাদা রসিক কুমার রায় শেষ রাজার ম্যানেজার ছিলেন। নদীর পূর্বতীরে রাজা কংসের প্রাসাদের কিছু অবশেষ এখনও রয়েছে। নদীর ধার দিয়ে আশির দশকেও পাহাড়ের মতো উঁচু মাটির দেওয়াল ছিল। এর ভিতরেই ছিল রাজা কংসের প্রাসাদ। তিন কিলোমিটার পথ হাঁটতে গিয়ে পায়ের নিচে মিলবে প্রাসাদের ছোট ইট। পাওয়া যাবে ঔরঙ্গজেবের নামানুসারে প্রতিষ্ঠিত আওরঙ্গবাদ নামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আর একটি লক্ষ্মী মন্দির। মন্দিরের তত্ত্বাবধায়ক নির্মল চন্দ্র মহন্তের দাবি, মন্দিরটি ৬০০ বছর আগের।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement