গৌতম ব্রহ্ম: পেট নাকি স্টোররুম! লোহার রড? আছে। স্টিলের চামচ? তাও আছে। এমনকী আস্ত একটি জিভছোলাও রয়েছে পাকস্থলীতে। বিশ্বাস না হওয়ার মতোই ঘটনা। দীর্ঘ একমাস ধরে এভাবেই চলছিল। বৃহস্পতিবার হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েন ২১ বছরের তরুণরবি দাস। আর তারপর অস্ত্রোপচার করে তাঁর পেট কেটে এমনই সব জিনিস বের করে নজিরবিহীন সাফল্য পেলেন মালদহ মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকরা।
মালদহ হাবিবপুরের বাসিন্দা তরুণরবি। গতকাল মুখ থেকে রক্ত বেরনোয় ছুটে আসেন হাসপাতালে। চিকিৎসক দেখে প্রথমে পাকস্থলীর এক্স-রে করাতে বলেন। সেই এক্স-রেতেই ধরা পড়ে অভাবনীয় ছবি। পাকস্থলীতে জ্বলজ্বল করছে একটি গোটা স্টিলের চামচ, একটি বড় লোহার রড এবং একটি জিভছোলা। এমন দৃশ্য দেখে হকচকিয়ে গিয়েছিলেন চিকিৎসকরাও। তবে তরুণকে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা ছাড়েননি। ঠিক হয় মেডিক্যাল কলেজেই তাঁর অস্ত্রোপচার হবে। সেই মতো শুক্রবার সকাল ১১টায় শুরু হয় অস্ত্রোপচার। দীর্ঘক্ষণের চেষ্টায় সব জিনিসগুলিই বের করতে সফল হন ডাঃ অরিজিৎ মুখোপাধ্যায় ও ডাঃ অভিষেক মণ্ডল। শুধু পাকস্থলীই নয়, পায়ু থেকেও একটি ভাঙা চামচ বের হয়। কেমন আছেন রোগী? চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, তরুণরবির অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল। বর্তমানে আইসিইউ-তে রাখা হয়েছে তাঁকে।
ইএনটি সার্জেন অতীশ হালদার অস্ত্রোপচারের সময় উপস্থিত ছিলেন। খাবারের অযোগ্য এসব জিনিসগুলি যাতে খাদ্যনালীতে প্রবেশ করে কোনও প্রভাব না ফেলে তা দেখার দায়িত্বে ছিলেন তিনি। অস্ত্রোপচার শেষে সেই অতীশ হালদার বলেন, “এমন ঘটনা নিঃসন্দেহে বিরল। গত বছর কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এক রোগীর পেট থেকে ৬৩৯টি পেরেক বের করা হয়েছিল। সেই ঘটনার মতোই অদ্ভুত তরুণরবির ঘটনাও। মেডিক্যালের ইতিহাসে এমন বিষয় খুব কমই ঘটে। জিনিসগুলি খাদ্যনালীতে আটকে গেলে বড়সড় বিপদ ঘটতে পারত। তবে তেমন কিছু হওয়ার আগেই সফল চিকিৎসকরা।”
প্রায় মাসখানেক আগেই এইসব জিনিসগুলি খেয়েছিলেন তরুণরবি। তারপর থেকেই খাওয়ার পরিমাণ কমে গিয়েছিল। শেষমেশ গতকাল অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। কিন্তু কেন এসব জিনিস খেয়েছিলেন তিনি? চিকিৎসকদের ধারণা, তরুণরবি হয়তো মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। সেই কারণেই এ কাণ্ড ঘটিয়েছেন। তবে এ বিষয়ে মনোবিদরাই সঠিক তথ্য দিতে পারবেন। তাঁরা রোগীর সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানা গিয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.