Advertisement
Advertisement

Breaking News

Dalal racket

ন্যাশনালে ধরা পড়ল ৪২ ‘ভূত’, হুমকির মুখে ‘ওঝা’রা

বিশ্বাস না হলে পড়ুন এই প্রতিবেদন!

Dalal racket busted in Calcutta National Medical College
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:April 9, 2018 1:18 pm
  • Updated:April 11, 2019 4:55 pm  

গৌতম ব্রহ্ম: ‘ভূত’ ধরল ন্যাশনাল মেডিক্যাল। একটা-দুটো নয়, বিয়াল্লিশটি। বিশ্বাস না হলে আবার পড়ুন! হাসপাতালের স্থায়ী কর্মী হয়েও কেউ যদি দু’-তিন দশক হাসপাতালে না আসেন,  তাঁর হয়ে যদি অন্য লোক কাজ করেন,  হাজিরা খাতায় সই করেন,  বেতন তোলেন, তাহলে সেই কর্মীকে ‘ভূত’ ছাড়া আর কী বলা যায়?  সম্প্রতি এমনই ৪২ জন ‘ভূত’-কে পাকড়াও করল ন্যাশনাল কর্তৃপক্ষ।

[‘চার আনা জ্ঞান নেই আপনাদের’, শুভব্রতর কথায় চিকিৎসকদের চক্ষু চড়কগাছ]

ধরা পড়ে কেউ কেউ ‘ওঝাদের’ দেখে নেওয়ার হুমকিও দিলেন। কেউ আবার ‘অশরীরী’ দশা কাটিয়ে আবির্ভূত হলেন! কান্নাকাটি করে ক্ষমা চাইলেন সুপারের কাছে। হাসপাতালের একটি সূত্রের দাবি,  জিডিএ কর্মীদের একাংশ যা খুশি তা-ই করছে। বছরের পর বছর কাজে আসছেন না। অথচ বেতন তুলছেন। কেউ পরিবারের লোক দিয়ে কাজ করাচ্ছেন,  কেউ ওয়ার্ড মাস্টারের সঙ্গে রফা করে ভাড়া করা লোক লাগিয়ে ‘প্রক্সি’ দিচ্ছেন। অনেক সময় কর্মীর মৃত্যুর পরও তাঁর নামে বেতন তোলার মতো সাঙ্ঘাতিক অভিযোগ উঠেছে।

Advertisement

ঘটনার সূত্রপাত নিয়োগ সংক্রান্ত একটি দুর্নীতিকে কেন্দ্র করে। জাল নিয়োগপত্র নিয়ে ন্যাশনালে কাজে যোগ দিতে আসেন তিনজন। সুপারের অফিস কারচুপি ধরে ফেলে পুলিশের হাতে তুলে দেয় জালিয়াতদের। গ্রেপ্তার হন প্রসেনজিৎ নামে একজন ওয়ার্ড মাস্টার। এরপরই তদন্তে নেমে বড়সড় দুর্নীতি চক্রের হদিশ পায় পুলিশ। বিষয়টি নিয়ে পুলিশের তরফে সুপার পীতবরণ চক্রবর্তীকে সতর্ক করা হয়। এরপরই ডেপুটি সুপার ডা. বিমলবন্ধু সাহার নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি তৈরি হয়। কমিটিতে নার্সিং সুপার, ওয়ার্ড মাস্টার ও একজন এমার্জেন্সি মেডিক্যাল অফিসার রয়েছেন। মাস খানেকের মধ্যেই রিপোর্ট জমা দেয় কমিটি। বিমলবাবু তদন্তের কথা স্বীকার করলেও রিপোর্ট নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। জানিয়েছেন,  ন্যাশনালে অনেক ভূত আছে। সব সুপার জানেন। অন্যদিকে সুপার জানিয়েছেন,  “রিপোর্টে কি আছে বলতে পারবনা। স্বাস্থ্য দপ্তরে পাঠিয়ে দিয়েছি।”

বহু বছর ধরে এমন ভূতুড়ে কারবার চলছে নিচুতলার কর্মীদের মধ্যে। শুধু ন্যাশনাল নয়, অন্য মেডিক্যাল কলেজের কর্মীদের মধ্যেও রয়েছে অজস্র ভুত। ন্যাশনালের একজন চিকিৎসক প্রায় দেড় দশক ধরে হাসপাতালে আছেন। তিনি জানালেন,  “বহু ছদ্মবেশী কর্মী কাজ করছে এই হাসপাতালে। কর্মী বলে যাদের আমরা চিনতাম এখন দেখছি তাদের একাংশ ‘ভাড়াটিয়া’। তদন্ত কমিটির একজন জানালেন,  ভূতেরা বেশিরভাগ জিডিএ, সাফাইকর্মী। অনেকে অসুস্থতার কারণে দীর্ঘদিন অনুপস্থিত। তাঁদের বাড়ির লোক কাজ করছেন। কখনও আবার অভিযুক্ত ওয়ার্ড মাস্টারের সঙ্গে রফা করে বাইরের লোক দিয়ে কাজ করাতেন কেউ। সেক্ষেত্রে ১০ জনের কাজ চারজন করছেন। চারজনকে মাথা পিছু সামান্য টাকা দেওয়া হচ্ছে। উপরির আশায় তাতেই কাজ করছেন ছদ্মবেশী কর্মীরা। আর কর্মীরা ওয়ার্ড মাস্টারকে মাসে হাজার পাঁচেক টাকা  নজরানা দিয়ে বাড়ি বসেই বেতন তুলতেন। অভিযোগ,  ওয়ার্ড মাস্টার নিজের স্বার্থে বহু কর্মীকে জীবদ্দশায় ‘ভূত’ বানিয়েছেন।

[সম্প্রীতির বার্তা দিতে শহরের পথে বিদ্বজ্জনদের মিছিল, পায়ে পায়ে বামনেতারাও]

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন,  ভূতুড়ে কর্মীদের হয়ে প্রক্সি দেওয়ার জন্য ওয়ার্ড মাস্টারের একটি ‘পুল’ ছিল। ভূতেরা ওয়ার্ড মাস্টারকে মাসে ৫-১০ হাজার টাকা দিতেন। অন্যদিকে,  ‘প্রক্সি’ দেওয়া কর্মীদের খুব বেশি হলে মাসে ৩০০০ টাকা দিতেন ওয়ার্ড মাস্টার। এভাবেই নিজের একটি ‘মাসিক বন্দোবস্ত’  করেছিলেন অভিযুক্ত ওয়ার্ড মাস্টার। কমিটি তেমনই ইঙ্গিত করেছে। তাঁদের পর্যবেক্ষণ,  এই পুলের লোকজন রোগীর পরিবারের থেকে অন্যায়ভাবে টাকা আদায় করে ‘ঘাটতি’  পূরণ করতেন। যে পরিষেবা রোগীর ফ্রি-তে পাওয়ার কথা, তার জন্য পয়সা নিতেন এই পুলের লোকজন। রক্তের নমুনা সেন্ট্রাল ল্যাবরেটরির বদলে বাইরে পরীক্ষা করাতে পাঠিয়ে মোটা টাকা কমিশন নিতেন।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement