কার্টুন- সুযোগ বন্দ্যোপাধ্যায়
অর্ণব দাস, বারাসত: সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া একটি বাংলা ছবিতে ব্যাঙ্ক লুঠ করতে আসা ডাকাতদের ‘সবিনয় আর্জি’ রীতিমতো নজর কেড়েছিল। ‘রিলের’ সেই ডাকাতি-কৌশল এবার ‘রিয়েল’ হল দেগঙ্গায়। মহিলাদের মা বলে সম্বোধন করা থেকে শুরু করে অসুস্থ বোধ করলে জল এনে দেওয়া, এমনকি কাউকে আঘাত তো নয়ই, বরং স্রেফ মৃদু স্বরে হুমকি, কী না করল দুষ্কৃতীরা! কোথায় ঘটল এমন কাণ্ড?
ঘরে ঢুকে করজোড়ে রীতিমতো বিনয়ী ভঙ্গিতে ‘ডাকাতিতে সহযোগিতা করুন’ বলে আবেদন জানিয়েই বৃহস্পতিবার রাতে আমুলিয়ার কলাপোল গ্রামের রাস্তার ধারের দু’দিকের দুটি বাড়ি সাফ করে পালাল ডাকাতদল। যা নিয়ে রবিবার দিনভর চর্চা চলল দেগঙ্গা ব্লকের গ্রামে-গ্রামে। এহেন ডাকাতদের ধরতে পুলিশকে গঠন করতে হয়েছে ‘বিশেষ তদন্তকারী দল’। তাতে রয়েছেন একাধিক ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার অফিসার, জেলা পুলিশের এক শীর্ষকর্তাও। গ্রামে সাধারণত সিসি ক্যামেরার নজরদারি থাকে না। কলাপোল গ্রামের ঘটনাস্থল থেকে পাঁচ-সাতশো মিটারের মধ্যেও কোনও সিসি ক্যামেরা ছিল না। সেই সুযোগকেই কাজে লাগায় ডাকাতদল। পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দুটি বাইকে ছয় জন দুষ্কৃতীর নজরে আসে মৃণাল চৌধুরির বাড়ি। রাস্তার উপর এই বাড়িতে কোনও পাঁচিল নেই, গেটও ছিল খোলা। সেই সুযোগে ছয়জন বোমা-বন্দুক হাতে সোজা ঢুকে পড়ে বাড়িতে। উপস্থিত সকলকে বন্দুক দেখিয়ে, মহিলাদের মা বলে সম্বোধন করে ডাকাতিতে সহযোগিতার অনুরোধ করে দুষ্কৃতীরা।
ভয়ে, বিস্ময়ে তাঁরা হতভম্ব হয়ে গেলে ডাকাতদের অনুরোধ, মায়েরা মোবাইল সুইচ অফ করে দিয়ে দিন। একজন গেটে পাহারায় দাঁড়ায়, আরেকজন বিনয়ের স্বরে আলমারির চাবি নিয়ে নগদ টাকা ও গয়না লুঠ করতে শুরু করে। এরই মধ্যে বাড়িতে আসেন চৌধুরিবাড়ির সদস্য, পেশায় আইনজীবী প্রতিম। তাঁকে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে পাহারায় থাকা ডাকাত স্বাগত জানায়। তারপর হাতে বোমা ধরিয়ে এক জায়গায় বসিয়ে ফের ডাকাতিতে সহযোগিতা করতে বলে। প্রতিমের কথায়, “আমি বাজার থেকে ফিরে বাড়িতে ঢুকতেই পাহারায় থাকা ডাকাত আমার হাতে বোমা দিয়ে বসিয়ে দেয়। মহিলাদের মা বলে সম্বোধন করেছে, সম্মান দিয়েছে। কারও সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেনি, আঘাত করেনি। ওরা হিন্দি বাংলা মিশিয়ে কথা বলছিল। শুধু হুমকি দিয়ে বলেছিল, পুলিশকে জানালে পরবর্তীতে যে কোনও বিপদ আমাদের ঘটতে পারে।”
চৌধুরিবাড়িতে অপারেশন শেষ হওয়ার কিছু সময় আগে ঠিক উলটো দিকের নিপন দেবের বাড়িতে গিয়ে দিদি-দিদি বলে ডাকতে শুরু করে কয়েকজন দুষ্কৃতী। দেব বাড়ির এক মহিলা বেরিয়ে আসতেই বন্দুক-বোমা দেখিয়ে একই কায়দায় গৃহে প্রবেশ করে দুষ্কৃতীরা। এখানেও ঠিক ‘ডাকাতিতে সহযোগিতা করুন’ কায়দায় শুরু হয় ডাকাতি। পাহারায় থাকা এক দুষ্কৃতী আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে পরনের গয়না খুলে দিতে বলে। তখন এক মহিলা হাত থেকে নিজের সোনার শাঁখা বাঁধানো খুলতে না পারলে, যাতে ব্যথা না লাগে তার জন্য হাতে সাবান মাখিয়ে শাঁখা খুলতে সাহায্যও করে ডাকাত। অপারেশন চলাকালীন অসুস্থ লাগছে জানালে মা বলে সম্বোধন করে রান্নাঘর থেকে জল এনেও খাওয়ায় ডাকাতরা।
চৌধুরিবাড়ির সদস্যা অপর্ণাদেবী বলেন, “জোরে দিদি দিদি বলে ডাকলে বড় জা বেরিয়ে আসতেই আগ্নেয়াস্ত্র, বোমা, দা দেখিয়ে বাড়িতে ঢোকে। হনুমান টুপি পরে মুখ ঢাকা ছিল, শুধু চোখ দেখতে পেয়েছি। নগদ টাকা পায়নি, তবে অনেক সোনার গয়না নিয়ে গেছে।” দুই পরিবারের অভিযোগ, দুটি বাড়ি মিলিয়ে প্রায় ৩০ ভরির বেশি সোনার গয়না ডাকাতি হয়েছে। পাশাপাশি নগদ টাকাও নিয়েছে দুষ্কৃতীরা। তবে প্রত্যেকের মোবাইল ফেরত দিয়েছে ডাকাতরা। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক মাস আগে বাদুড়িয়া থানা এলাকায় ডাকাতির ঘটনা ঘটেছিল। সেই ঘটনার সঙ্গে এর অনেকটা মিল পাওয়া গিয়েছে। সংলগ্ন এলাকার যে যে দোকানে সিসি ক্যামেরা রয়েছে, সেগুলির ফুটেজ সংগ্রহ করে দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.