সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সোশ্যাল মিডিয়া মানেই আত্মপ্রচারের ঢক্কানিনাদ। একে অন্যের পিঠ চাপড়ানি। রসিকতা, মশকরার নামে শ্লেষ-বিদ্রূপ। সত্যি বলতে কি, সোশ্যাল মিডিয়া হাল আমলে অভ্যাসের বদলে বদভ্যাসই হয়ে দাঁড়িয়েছে বেশি। যার প্রভাব পড়ছে ব্যক্তিগত জীবনেও। মোটের উপর এ মাধ্যম আর মোটেও সুখের শান্তিনিকেতন নয়। তবু কোনও কোনও মুহূর্ত যেন খুশির প্রথম আলো। সেরকমই একটি ছবি ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। যেখানে পথশিশুদের পেট পুরে খাইয়েই প্রেম দিবস উদযাপন করছেন যুগল।
[ মৌলবিদের পর এবার প্রিয়ার গান নিষিদ্ধ করার দাবি তুললেন বিজেপি নেতা ]
‘বং নোটিফিকেশন’ নামে এক জনপ্রিয় ফেসবুক পেজে আপলোড করা হয়েছে ছবিটি। সদ্য চলে গেল ভ্যালেন্টাইনস ডে। প্রেমের এ দিন সেলিব্রেশন নিয়ে নানা মুনির নানা মত। কেউ বলেন এ আসলে বিলিতি সংস্কৃতির প্রভাব। পালটা যুক্তি দিয়ে অনেকেই আবার বলেন, আমদের দৈনন্দিনে বিলিতি সংস্কৃতির প্রভাব তো কম নেই! তাহলে একটা দিনকেই বা কেন কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে? কারও মত, প্রেমের জন্য কি সত্যিই একটা দিন নির্দিষ্ট করা যায়? হয়তো যায় না। কিন্তু সে তো পুজো-আচ্চার বা ধর্মাচরণের জন্যও কোনও নির্দিষ্ট দিন হয় না। তবু নির্দিষ্ট সময়েই দুর্গাপুজো করা হয়। তবে সবথেকে বড় যুক্তি বোধহয় বাজারের কৌশল তথা ভোগবাদ। অর্থাৎ একটা বড় বাজার তার পণ্য বিক্রির খাতিরে একটি দিন পালনের সংস্কৃতিতে কৌশলে ঢুকিয়ে দিয়েছে। এর বিপক্ষে যুক্তি দিয়ে বহুজনের মত, এই বাজারি প্রভাব থেকে আমরা এমনিতেই মুক্ত নয়। জীবনের প্রতি ক্ষেত্রেই প্রায় সে থাবা পড়েছে। সুতরাং প্রেমের উদযাপন নিয়ে আলাদা করে তিক্ততা টেনে আনার দরকার নেই। তবে এর সঙ্গে মিশেছে রাজনীতিও। কোনও কোনও কট্টরবাদী সংগঠন ভ্যালেন্টাইনস ডে পালনের বিরুদ্ধে আবার ফতোয়া জারি করে। এই এতকিছুর মধ্যে যেন একঝলক খুশির হাওয়া নিয়ে এসেছে ছবিটি। বুঝিয়ে দিচ্ছে প্রেমের অন্য মানেও।
[ মায়ের পা ধুয়ে ভ্যালেন্টাইনস ডে পালন করল খুদেরা ]
প্রেম মানে শুধু তুমি-আমি আর সুখের বাসরকুঞ্জ নয়। অন্তত এই সেদিনও সেরকমই ভাবত মানুষ। ভাবত, প্রেম কখনও সমাজ নিরপেক্ষ নয়। ফলত রাজনৈতিক মতাদর্শ থেকে এক সূত্রে বাঁধা পড়তেন যুবক-যুবতী। ব্যক্তিগত সুখের থেকেও সেখানে সামাজিক আদর্শই বড় হয়ে দাঁড়াত। আজ হয় লোকমুখে, নয় গল্পে উপন্যাসে সে সব পড়তে আমাদের ভাল লাগে। কিন্তু এই সময়ের বুকে আক্ষেপ জেগে থাকে, আজ আর কালবেলার মাধবীলতা কই? সত্যই কি সময়ের চক্রে সব হারিয়ে গিয়েছে? আপাতভাবে তা মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে এ সময়ের গর্ভে কিছুই হারিয়ে যায় না। সময় অন্তে তা ফিরে ফিরে আসে। যেমন ফিরে এসেছেন যুগল। এই তীব্র আত্মকেন্দ্রিক যুগেও নিজেদের প্রেমের উদযাপন তাঁরা ছড়িয়ে দিয়েছেন পথশিশুদের মধ্যে। ছোটছোট খুদেদের মুখের হাসিই হয়ে উঠেছে তাঁদের উপহার।
ইতিমধ্যেই প্রায় হাজার দুয়েক মানুষ এ ছবি শেয়ার করেছেন, কমেন্টে কমেন্টে তাঁদের আশীর্বাদ করছেন নেটিজেনরা। চাইছেন, এভাবেই প্রেম আসুক। এভাবেই প্রেম খুঁজে পাক তার গুরুত্ব। কিন্তু কারা এই তরুণ-তরুণী। আপাতত তাঁদের পরিচয় জানা যাচ্ছে না। তবে মানবিকতার এ ছবির একটাই পরিচয়, সকলেই মানুষ। এর থেকে বড় সত্যি আর কিছু নেই। এর থেকে বড় পরিচয়ও আর কিছু হতে পারে না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.