নন্দন দত্ত, সিউড়ি: ‘বুলেটরানি’ ফুলনদেবী নববর্ষে অস্ত্র উপহার দিচ্ছে শিশুদের! তবে এই ফুলনদেবী চম্বলের দস্যুরানি নন। কিন্তু তার পোশাকে ছাপানো চিপসের প্যাকেটের সঙ্গে বাচ্চাদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে একটি ধারালো চাকু! যা নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা। বৃহস্পতিবার নলহাটি ২ ব্লকের নোয়াপাড়া এক নম্বর প্রাথমিক স্কুলের তরফে ‘বুলেটরানি’র এই উপহার বন্ধ করতে বিডিওকে লিখিতভাবে জানানো হল।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাইনুল হোসেন জানালেন, প্রাথমিকের নলহাটি পূর্বচক্রের তাদের স্কুলের সামনের গুমটির দোকান থেকে চিপস কিনলেই তার সঙ্গে উপহার দেওয়া চাকু সঙ্গে নিয়ে খুদে ছাত্রছাত্রীরা স্কুলে ঢুকছে। এই চাকু যে কতটা বিপজ্জনক, তা ছাত্রছাত্রীদের সামনে দাঁড় করিয়ে তাদের সচেতন করা হল। তাদের বোঝাতে দেখানো হয়েছে, ওই উপহারের চাকু দিয়ে শুধু খসখস করে কাগজ নয়, প্লাস্টিকের জারও কেটে যাচ্ছে। অতএব, তা কতটা মারাত্মক এবং অবিলম্বে বর্জনীয়।
বছরের প্রথমে দেখা যাচ্ছে, শিশুরা সকলে স্কুলে ঢুকছে চাকু হাতে নিয়ে। প্রথম কয়েকদিন সেই চাকুগুলি বাজেয়াপ্ত করে নেয় স্কুলের শিক্ষকরা। কিন্তু দিনের পর দিন প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীর হাতে সেই চাকু দেখে চিন্তায় পড়েন শিক্ষকরা। তারা এর উৎস্য খুঁজতে গিয়ে দেখেন, স্কুলের গেটের বাইরের গুমটিতে বিক্রি হচ্ছে নানান ধরনের আলুর চিপস। তার মধ্যে ‘বুলেটরানি’ নামে একটি চিপসের প্যাকেটের সঙ্গে উপরে লাগানো থাকছে একটি প্লাস্টিকের ঢাকনা দেওয়া চাকু। স্কুলের শিক্ষক মহম্মদ রাফিকুর জামান জানান, ‘‘আমরা বুলেট রানি প্যাকেটটা কিনে আনি। দেখি তাতে না আছে উৎপাদকের নাম। না তাদের ঠিকানা। এমনকী কোনও তারিখও নেই। আর বাচ্চা শিশুদের হাতে চাকু কতটা বিপজ্জনক, তা সব অভিভাবকই জানেন।’’
স্কুলের সহ-শিক্ষক অমিত সরকার জানান, ‘‘আমরা প্রথমে বিষয়টি নিয়ে গুরুত্ব দিইনি। কিন্তু দিন দিন যেভাবে চাকু উপহার দিচ্ছে ‘বুলেটরানি’, তাতে আমরা চিন্তায় পড়েছি।’’ এলাকার জনপ্রতিনিধি তথা জেলা জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ নাগরচন্দ্র কোনাই বলেন, ‘‘আমরা এই বিপজ্জনক চিপস বন্ধে সব দপ্তরে যাব। এই খাবার শিশুদের পেটের পক্ষেও খারাপ। হাতে ছুরি পাওয়ায় সেটাও খারাপ। এটা বন্ধ করতেই হবে।’’
প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের জেলা চেয়ারম্যান প্রলয় নায়েক জানান, ‘‘এটা ভয়াবহ প্রবণতা। চোখেমুখে লেগে যেতে পারে। জীবন সংশয় হতে পারে। আমি এলাকার সার্কেল পরিদর্শকের কাছে রিপোর্ট চাইব। স্কুলের একটি নির্দিষ্ট সীমার বাইরে গুমটি থাকার কথা। সেখানে বিপজ্জনক অস্বাস্থ্যকর কোনও জিনিস বিক্রি করা যাবে না।’’ জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শোভন দে জানান, ‘প্যাকেটজাত খাবার জিনিস বিক্রির গুণমান বজায় রাখতে একটি নির্দিষ্ট বিধি আছে। স্বাস্থ্যদপ্তরের আলাদা দল আছে, সেগুলি দেখার। অভিযোগ পেলেই আমরা সেখানে হানা দেব। আর শিশুদের হাতে চাকু এটা শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের চরম ক্ষতি করছে।’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.