অভিষেক চৌধুরী, কালনা: রাজীব কাজে বেড়িয়ে গেলেও তাঁর পিছু ছাড়তে চায় না মিঠু। অন্যদিকে রাজীবও কিছুই মুখে তুলতে চায় না মিঠুর না খাওয়া পর্যন্ত। সারাদিন দু’জনে দু’জনের গায়েই লেগে থাকে। তাঁদের এই ‘আত্মীক সম্পর্কের’ মাঝে কারও হস্তক্ষেপ করার কোনও জায়গাই নেই। বরং রাজীব-মিঠুর এই গভীর ‘প্রেম’ তাড়িয়ে-তাড়িয়ে উপভোগ করেন পরিবারের সদস্যরা থেকে প্রতিবেশীরাও। অনেকেই হয়তো ভাবছেন প্রেম নিয়ে হঠাৎ করে সমাজ সংসার এতটা কি করে উদারপন্থী হয়ে গেল? আসলে রাজীব জলজ্যান্ত একজন মানুষ হলেও মিঠু তাঁর পোষা শালিক পাখি। পোষা বললেও ভুল হবে। মিঠুকে কোনওদিনই খাঁচাবন্দি করতে চান না রাজীব। বাড়ির একজন সদস্যর মতই তার অধিকার।
মাস দুয়েক আগে গাছের নিচে পড়ে থাকা অসুস্থ ওই শালিক পাখিটিকে রাজীব মণ্ডল নামে ওই যুবক পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বরের বালিজুড়ি গ্রামে নিজের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেবা শুশ্রুষা করে তাকে বাঁচিয়ে তোলে। ভালোবেসে নাম রাখে মিঠু। নতুন জীবন পেয়ে বনের জীবনে ফিরে যায়নি আর পাখিটি। জীবন বাঁচানোর প্রতিদান স্বরূপ সে রাজীবের সঙ্গেই থেকে যায়। বাড়ি থেকে কর্মস্থল, হাটেবাজারে রাজীব যেখানেই যাক না কেন, শালিকটি কিছুতেই তাকে ছাড়তে চায় না। কখনও কাঁধে বসে আবার কখনও মাথায় চড়ে দিব্যি তার সঙ্গে মনের কথাও যেন সে বলে যায়। রাজীব মোটরবাইক নিয়ে হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়লেও আপন খেয়ালে থাকা মিঠু ঠিক উড়ে গিয়ে তার গায়ে বসে পড়ে, তাঁর সঙ্গে বেরিয়ে পড়ে। এমনই এক প্রেম দেখতেই ভিড়ও জমে যায় সর্বত্র।
করোনা (Corona Virus) আবহের আগে একটি গার্মেন্টসের দোকানে প্যান্ট, শার্ট তৈরির কাজ করতেন রাজীব। বাড়ি ফিরে এসে এলাকায় একশো দিনের কাজেও যোগ দেয় সে। এমনই এক সময় মিঠুর সঙ্গে নতুন প্রেম জমে ওঠায় নতুন কাজের সন্ধানে রাজীবও আর বেরোতে পারছে না। কারণ, পাখিটি যে তার নিত্যসঙ্গী। রাজীব জানায়, কাজের তাগিদে তাঁর বেরোনো খুবই প্রয়োজন। পাখিটিকে আড়াল করে বেরোলেও রাজীবকে খুঁজে না পেয়ে সে দাঁতে কিছুই কাটতে চায় না। রাজীবেরও একই পরিস্থিতি। যদিও মিঠুর কোনও বায়না নেই। ভাত,মুড়ি,বিস্কুটেই সে সন্তুষ্ট। কিন্তু হলে কী হবে, রাজীবের কাজের সময় মিঠু ডালে গিয়ে বসলেও কাজ শেষ হতেই সে আবার তার কাঁধে ফিরে আসে। রাজীব মণ্ডল বলেন, “দু’মাস আগে পাখিটিকে অসুস্থ অবস্থায় তুলে নিয়ে আসি। ও তো এখন আমার পরিবারেরই এক সদস্য। রাতের বেলায় ঘুমিয়ে যাওয়ার আগে বাধ্য হয়ে ওকে খাঁচায় রাখি বিড়ালের কারণে। সকাল হতেই আবার তাঁর নাচানাচি ও দাপাদাপি শুরু হয়ে যায়।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.