সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: চমকের এই দুনিয়ায় অনেক অদ্ভুত ঘটনাটিই ঘটে। কখনও দু’মাথার শিশু জন্ম নেয় তো কখন কলার কাঁদি হয় হিন্দুদের গণেশ দেবতার আদলে। কিন্তু, মানুষের পাকস্থলীতে বাসা বাঁধা ছত্রাকের কারণে শর্করার বিয়ারে পরিণত হওয়ার ঘটনা মনে হয় এই প্রথম শোনা গেল। চমকে দেওয়া এই ঘটনাটি ঘটেছে আমেরিকার নিউইয়র্কে।
সেখানকার একটি মেডিক্যাল জার্নাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনাটির সূত্রপাত হয় ২০১৪ সালে। ৪৬ বছরের এক ব্যক্তিকে অতিরিক্ত অ্যালকোহল খেয়ে গাড়ি চালানোর অভিযোগে আটক করে নিউইয়র্ক পুলিশ। ব্রেথলাইজার টেস্টে ধরা পড়ে ছিল, গাড়ি চালানোর সময় শরীরে যতটা অ্যালকোহল থাকার বিষয়টিকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। তার থেকে পাঁচগুণ বেশি তাঁর শরীরে রয়েছে। কিন্তু, ওই ব্যক্তির দাবি ছিল যে তিনি মদ্যপান করেননি। এরপর থেকে প্রায় প্রতিদিনই তাঁর সঙ্গে এই ধরনের বিপত্তি ঘটতে থাকে। তিনি অবাক হয়ে লক্ষ্য করেন, মদ না খেলেও তাঁর শরীরে অ্যালকোহলের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর অযথা পুলিশ ও পরিবারের লোকেরা তাঁকে মাতাল ভাবছে। কোনওভাবেই বিনা কারণে অপদস্ত হওয়ার ঘটনা থেকে রেহাই পাচ্ছেন না তিনি।
তিন বছর ধরে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখে নিউইয়র্কের রিচমন্ড বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের এক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন তিনি। আর তারপরই জানা যায় তাঁর শরীরে থাকা অটো-ব্রেউয়ারি সিন্ড্রোম নামে বিরল রোগের কারণে এই অভিনব ঘটনা ঘটছে। তাঁর পায়খানা পরীক্ষা করে স্যাকারোমাইসিস সেরাভিসি নামে বিশেষ প্রজাতির ছত্রাক পাওয়া যায়। যে ছত্রাকটি ব্যবহার করে শর্করাকে অ্যালকোহলে পরিণত করেন বিয়ার নির্মাতাকারীরা। আরও জানা যায়, তাঁর পাকস্থলীতে ওই বিশেষ ধরনের ছত্রাকটি রয়েছে। যার ফলে তিনি যখনই শর্করা জাতীয় খাবার খান তখনই তা অ্যালকোহলে পরিণত হয়। ২০১১ সালে তাঁর আঙুলে একটি চোট লেগেছিল। তারপর এক চিকিৎসকের পরামর্শে কয়েকটি অ্যান্টিবায়োটিক খেয়েছিলেন তিনি। তারপর থেকেই তাঁর স্মৃতিবিভ্রাট হতে থাকে। কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ার পাশাপাশি মাথাঘোরার রোগ বাসা বাঁধে শরীরে। সব কথা শুনে ওই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তাঁকে কিছু ওষুধ খেতে দেন। যারপর থেকে ভালই আছেন তিনি। আর কোনওদিন এই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়নি তাঁকে।
চিকিৎসকদের কেউ কেউ বলছেন, এই ধরনের রোগ খুবই বিরল। গত ৩০ বছরে সারা বিশ্বের মাত্র পাঁচজনের শরীরে এই রোগের লক্ষণ দেখা গিয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.