সৌরভ মাজি, বর্ধমান: চুরি, চুরির সামগ্রী কেনার দায়ে আলাদা আলাদা মামলায় জেলে গিয়েছিল। দেড় দশক আগে জেলেই পরিচয় হয় তিনজনের। সেই থেকে বন্ধুত্ব অটুট! তিনমূর্তি ১৫ বছর ধরে ট্রেডমার্ক করেছিল চুরির আগে গৃহস্থ বাড়িতে ভুরিভোজ করা। বিশেষত ডিমভাজা ও ডিমসিদ্ধ খাওয়া ছিল মাস্ট। চুরির পর কয়েকদিন সংশ্লিষ্ট এলাকার বিভিন্ন সংবাদপত্র খুঁটিয়ে পড়াটাও ছিল বাধ্যতামূলক। তাদের সম্পর্কে কী লেখা হচ্ছে, তাতে কোনও ভুলত্রুটি ধরা পড়লে পরবর্তী চুরির আগে তা সংশোধন করে নিয়ে অপারেশন চালাতো। কিন্তু ইংরেজি নববর্ষের দিন গভীর রাতে বর্ধমানের বড়নীলপুর এলাকায় চুরির ঘটনায় এবার বর্ধমান থানার পুলিশের জালে ওই তিন মূর্তির দুজন।
বুধবার রাতে বর্ধমান শহরের গুডশেড রোডে একটি হোটেলের সামনে থেকে ওই দুইজনকে ধরেছে পুলিশ। ধৃতরা হল পিন্টু কুমার বর্ণমাল ও পলাশ পাল। পিন্টুর বাড়ি হুগলির শ্রীরামপুর থানার শেওড়াফুলি এলাকায়। পলাশের বাড়ি হুগলি জেলার পাণ্ডুয়া থানার পুরুষোত্তমপুর এলাকায়। ধৃতদের বৃহস্পতিবার বর্ধমান আদালতে তোলা হলে বিচারক ৪ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। এই দলের আর একজনে সন্ধান চালাচ্ছে পুলিশ। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) অর্ক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বড়নীলপুর এলাকাতেও চুরির আগে রেইকি করে তবেই চুরি করেছিল। এছাড়াও আরও কিছু চুরি বিভিন্ন থানা এলাকায় এরা করেছে। এদের আরও একজনকে ধরার চেষ্টা করছে পুলিশ।’’
বড়নীলপুরের বাসিন্দা পেশায় রেলকর্মী মৃত্যঞ্জয় দাস ১ জানুয়ারি বিকেলে বাড়িতে তালা দিয়ে সপরিবারে শহরেরই কাঞ্চননগরে শ্বশুরবাড়ি গিয়েছিলেন। পরদিন দুপুরে বাড়ি ফিরে দেখেন তালা ভেঙে সর্বস্ব চুরি গিয়েছে। চুরির সময় ঘরে থাকা অনেকগুলো ডিম রান্না করেও খেয়েছে চোরের দল। যাওয়ার সময় তাঁদের স্কুটিটাও নিয়ে যায়। যদিও সেটি চোরের দল বর্ধমান স্টেশনের কাছে ফেলে গিয়েছিল। পুলিশ সেটি উদ্ধার করে থানায় রেখেছিল। পরদিন থানায় অভিযোগ জানাতে গিয়ে স্কুটিটি দেখে অবাক হয়েছিলেন মৃত্যঞ্জয়বাবুরা। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নামে পুলিশ। বিভিন্ন সূত্র থেকে দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করে পুলিশ। বুধবার রাতে ওই দুজনকে ধরে পুলিশ। ধৃতরা মৃত্যঞ্জয়বাবুর বাড়িতে চুরির ঘটনায় জড়িত বলে স্বীকার করেছে বলে দাবি পুলিশের।
পুলিশ জানিয়েছে, এরা রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় চুরি করত গত ১৫ বছর ধরে। চুরির আগে এলাকায় গিয়ে ডেরা বেঁধে রেইকি করতো। ফাঁকা বাড়ির সন্ধান পেলে সেখানে হানা দিতো। চুরির আগে ডিম রান্না করে খেতো। ফ্রিজ তালাবন্ধ থাকলে সেটা ভেঙে ডিম বের করে রান্না করে খেতো। পিন্টুও পলাশ মূলত চুরি করতো। তাদের এক সঙ্গী চোরি সোনা-গয়না বাজারে বিক্রি করতো। তারপর তিনজনে তা ভাগ করে নিতো। বড়নীলপুরের চুরির মাল স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছে পুলিশ। পিন্টু ও পলাশ শরীর মজবুত রাখতে নিয়মিত জিমে যায়। খবরের কাগজও পড়ে। কিছুদিন আগে শেওড়াফুলিতে চুরি করতে গিয়ে এক সিভিক ভলান্টিয়ারের হাতে প্রায় ধরা পড়ে গিয়েছিল। হাতে থাকা রড দিয়ে ওই সিভিক ভলান্টিয়ারের চোখে খোঁচা মেরে পালিয়েছিল পিন্টু। সেই সিভিক ভলান্টিয়ারের একটা চোখ নষ্টও হয়ে যায় সেই ঘটনার পর।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.