সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: চিকিৎসা বিজ্ঞানে বড়সড় সাফল্য৷ মৃতার গর্ভাশয়েই জন্ম নিল ফুটফুটে কন্যাসন্তান৷ মৃত মহিলার দেহ থেকে গর্ভাশয় নিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল এক ব্রাজিলীয় মহিলার শরীরে। প্রতিস্থাপিত গর্ভাশয়ে ভ্রূণকে লালন করেই সেই মহিলা জন্ম দিলেন এক ফুটফুটে কন্যাসন্তানের। তিনিই হলেন বিশ্বের প্রথম যিনি মৃতার গর্ভাশয় নিজের শরীরে প্রতিস্থাপন করিয়ে, তা থেকে জন্ম দিলেন সন্তানের।
মস্তিষ্কের রক্তবাহ ফেটে মৃত্যু হয়েছিল ৪৫ বছর বয়সি এক মহিলার। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রায় সাড়ে দশ ঘণ্টা ধরে অস্ত্রোপচার করে মহিলার দেহ থেকে গর্ভাশয় বের করা হয়। তাঁর গর্ভাশয়ের ওজন ছিল ২২৫ গ্রাম। দাতা ওই মহিলা তিনটি সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন। যে ব্রাজিলীয় মহিলার দেহে ওই গর্ভাশয়টি প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল তাঁর বয়স ছিল ৩২ বছর। জন্ম থেকেই তাঁর গর্ভাশয় ছিল না। গর্ভাশয় প্রতিস্থাপনের প্রায় পাঁচমাস পর গ্রহীতার আলট্রা সাউন্ড স্ক্যান করা হয়৷ রিপোর্টে কোনও অস্বাভাবিকতা ছিল না। এমনকী, তাঁর নিয়মিত ঋতুস্রাবও হচ্ছিল। তবে ওই ব্রাজিলীয় মহিলার গর্ভাশয় না থাকলেও ডিম্বাশয় ছিল। তাই তাঁর ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বানু সংগ্রহ করে ‘আইভিএফ’ বা ‘ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন’ পদ্ধতিতে প্রতিস্থাপিত গর্ভাশয়ে রোপন করা হয়েছিল ভ্রূণ। গর্ভাশয় প্রতিস্থাপনের ৭ মাস ১০ দিন পর এই ভ্রূণ রোপনের কাজটি হয়েছিল। চিকিৎসকদের তরফে জানানো হয়েছে, ৩৫ সপ্তাহ ৩ দিন গর্ভধারণ করেন ব্রাজিলীয় মহিলা৷ অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। জন্মের সময় বাচ্চাটির ওজন ছিল ২ কিলোগ্রাম ৫৫০ গ্রাম।
ইউনিভার্সিটি অফ সাও পাওলোর গবেষকদের দাবি, ‘‘অঙ্গদাতা মৃত হলে গোটা প্রক্রিয়ার ঝুঁকি অনেকটা কম হয়। পাশাপাশি গোটা প্রক্রিয়ার খরচ অনেকটা কমে যায়। কারণ, দাতা মৃত হওয়ায়, তাঁকে হাসপাতালে ভরতি করা, তাঁর দীর্ঘ অস্ত্রোপচারের ঝক্কি থাকে না। জীবিত দাতার ক্ষেত্রে কাজটা আরও বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়ায়।” এর আগে প্রতিস্থাপিত গর্ভাশয় থেকে সন্তানের জন্ম হয়নি, তা নয়। কিন্তু সেই প্রতিস্থাপিত গর্ভাশয়ের দাতারা ছিলেন জীবিত। জীবিত মহিলার গর্ভাশয় প্রতিস্থাপন করে প্রথম সন্তানের জন্ম হয়েছিল ২০১৩ সালে সুইডেনে। তখন থেকে মোট ৩৯ বার এই পদ্ধতিতে সন্তানের জন্ম দেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছেন পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের চিকিৎসক-বিজ্ঞানীরা। এর আগে মৃতার গর্ভাশয় প্রতিস্থাপন করে সন্তান জন্ম দেওয়ার চেষ্টা করেছে আমেরিকা, চেক প্রজাতন্ত্র ও তুরস্ক৷ কিন্তু ওই দেশগুলির চিকিৎসকেরা সাফল্য পাননি। অবশেষে বিশ্বে এই প্রথমবার সাফল্য পেলেন ব্রাজিলের সাও পাওলোর চিকিৎসকরা৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.