সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মাইলের পর মাইল শুধু গ্রাম। কিন্তু বাসিন্দা নেই৷ যতদূর চোখ যায়, কোথায় কারও দেখা নেই। জনমানসহীন, অথচ দেখলে মনে হবে, ক’দিন আগেও এই গ্রামে মানুষ বাস করতেন। স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ছিল। জলাভূমি, খেত – সবকিছুরই যত্ন নেওয়ার লোক ছিল। কিন্তু এখন সবই নেহাতই অযত্নে কিংবা রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হতে বসেছে। কোথাও কোথাও আবার দেখা যাবে পশুপাখির কঙ্কাল। পরিত্যক্ত জনশূন্য বাড়িগুলি ভীতির উদ্রেক করার জন্য যথেষ্ট। গ্রামগুলি এতটাই নীরব এবং জনশূন্য যে একা গেলে দিনের বেলাতেও ভয় লাগতে পারে। এরকমই কয়েকশো গ্রাম নিলামে উঠছে স্পেনে।
ভাবছেন, এ আবার কী? গ্রামগুলি জনশূন্য কেন? তবে, কী কোনও প্রাকৃতিক দুর্ঘটনা নাকি ভৌতিক কাণ্ডকারখানা? এর জন্য দায়ী কে? না, কাউকেই দায়ী করা যাবে না। গ্রামগুলি ফাঁকা কারণ, এখানে কেউ বাস করেন না। যারা বাস করতেন, তাঁরা চাকরি নিয়ে শহরে চলে গিয়েছেন। আর নয়ত বাসিন্দাদের কোনও উত্তরসূরীর খোঁজ নেই। আসলে, স্পেনে জনসংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কম। অধিকাংশ ছোট শহরের জনসংখ্যা ১ হাজাররেও কম। আবার, অনেক গ্রাম রয়েছে যেখানে একজনও বাস করেননা। গ্রাম না বলে অবশ্য এগুলিকে পল্লি বলাই ভাল। এই পল্লিগুলির আবার মালিকও রয়েছে। এই মালিকদের বিপদটাই সবচেয়ে বেশি।
কেন বিপদ? স্পেনের আইন অনুযায়ী, সম্পত্তি যাঁর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও তাঁর। কিন্তু মুশকিল হল যারা এই পল্লিগুলির মালিক তাদের প্রতিপত্তি সে অর্থ নেই। অধুনা প্রজন্মের প্রতিনিধিরা ভালভাবে জীবনযাপনের আশায় পাড়ি দিয়েছেন শহরে। মোটামুটি মাইনের চাকরি করলেও জীবনযাত্রার মান গ্রামের চেয়ে শহরে অনেক উন্নত। ফলে, গ্রামে তাদের পূর্বপুরুষদের রেখে যাওয়া সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণের দায় তাঁরা নিতে নারাজ।
যার ফলে বছরের পর বছর এই পল্লিগুলি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে হয়ে পরিত্যক্ত এবং মনুষ্য বসতির অনুপযুক্ত হয়ে গিয়েছে। কোথাও জঙ্গল, কোথাও পোড়ো বাড়ি, কোথাও বাগানবাড়ি মতো, আবার ফাঁকা মাঠের মাঝখানে কুঠিরও রয়েছে। কিন্তু সবই জনশূন্য। এই অন্তত শূন্যতা এই গ্রামগুলিকে ভূতুড়ে গ্রামের তকমা দিয়েছে। এখন মালিকরা চাইছেন কোনওক্রমে এই গ্রাম রক্ষণাবেক্ষণের দায় নিজেদের ঘাড় থেকে ঝেড়ে ফেলতে। তাই অতি সস্তায় গ্রামগুলি বিক্রি করছেন তাঁরা। আশার কথা, স্পেনের মানুষ এই রক্ষণাবেক্ষণের দায় নিজেদের ঘাড়ে না নিতে চাইলেও, সস্তায় গ্রামগুলি কিনে নিচ্ছে একাধিক বিদেশী সংস্থা। তাঁরা এই গ্রামগুলিকে পর্যটন কেন্দ্র বানানোর চেষ্টায় আছেন। সেই সঙ্গে এই গ্রামের প্রাকৃতিক সম্পদ বিক্রি করে উপার্জনও করতে পারবেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.