সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ৪০ বছর পর গুগলের সাহায্যে মহারাষ্ট্রে নিজের বাড়ি ফিরলেন নবতিপর বৃদ্ধা। জীবন সায়াহ্নে এসে দেখতে পেলেন নাতি-নাতনি-সহ পরিবারের বাকি সদস্যদের। এত বছর পর বৃদ্ধাকে ফিরে পেয়ে আনন্দে কেঁদে ভাসালেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা।
মৌমাছির হামলায় ৪০ বছর আগে পরিবারের থেকে বিচ্ছিন্ন হয় যান এক মহিলা, পঞ্চুবাই (Panchubhai)। সর্বাঙ্গে ক্ষত নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে পার করে ফেলেন মহারাষ্ট্রের সীমান্ত। এসে পৌঁছন মধ্যপ্রদেশের (Madhya Pradesh) দামোশ জেলায়। শরীরে ক্ষত নিয়ে এইভাবে এক মহিলাকে উদ্দেশ্যহীনভাবে রাস্তায় ঘুরতে দেখে কষ্ট হয় মহারাষ্ট্রের এক ট্রাকচালকের। তিনি সেই মহিলাকে বাড়ি এনে সেবা করেন। সুস্থ করে তোলেন তাঁকে। কিন্তু মহিলার নাম কী? বাড়ি কোথায়? কারা রয়েছেন বাড়িতে? এই সব প্রশ্নের উত্তর অজানাই থেকে যায় সেই টাকচালকের। মহিলা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলায় দীর্ঘদিন ধরে মনে করতে পারেননি বাড়ির কথা, পরিবারের কথা। ফলে সব থেকেও অজানার গহ্বরে তলিয়ে বিশ্বের সকলের থেকেই হারিয়ে যান পঞ্চুবাই। এমনকি এই নামটুকুও হারিয়ে যায় তাঁর স্মৃতি থেকে। তাই ট্রাকচালকের ছেলে ইসরার খানের ‘আচ্চন মৌসি’ নামেই সেই পরিবার ও সকলের কাছের একজন হয়ে ওঠেন বৃদ্ধা। তবে ছোট থেকেই ইসরারের সমস্যা হয় ‘আচ্চন মৌসি’-র সঙ্গে কথা বলতে। কারণ, মৌসির মারাঠি ভাষা, যা সবসময়ই ভাবাত ছোট্ট ইসরারকে। তাই ছোট্ট ইসরার মৌসির স্নেহের ভাষা বুঝলেও মুখের ভাষা বিশেষ বুঝতে পারত না।
বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইসরারের সেই ভাষা সম্পর্কে কৌতুহল বাড়তে শুরু করে। জানতে চেষ্টা করে মৌসির পরিবারের কথা। তাঁর বাড়ির কথা। কিন্তু ভাঙা ভাঙা কয়েকটা শব্দ ছাড়া কিছুই বুঝতে পারা যেত না। অবশেষে ‘আচ্চন মৌসি’-র নবতিপর হওয়া ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে ইসরার। কিন্তু তাতেও খোঁজ মেলেনি পরিবারের। অবশেষে বৃদ্ধাকে অনেক জিজ্ঞাসার পর ‘খানজম নগর’, ‘পরশপুর’ নাম দুটি জানতে পারে ইসরার। তারপরই গুগল, সোশ্যাল মিডিয়ার সাহায্যে খুঁজতে শুরু করেন সে। সেখানেই মহারাষ্ট্রের এক ব্যক্তির সঙ্গে আলাপে ‘খানজম নগর’-এর খোঁজ পান ইসরার। তাতেই উৎসাহী হয়ে বৃদ্ধার একটি ভিডিও পাঠিয়ে ফের শুরু হয় তাঁর বাড়ির খোঁজ। আর তাতেই কেল্লাফতে। ৪০ বছর পর খোঁজ মেলে মৌসির পরিবারের। জানা যায় ‘আচ্চন মৌসি’-র আসল নাম পঞ্চুবাই।
[আরও পড়ুন:দোকানি ছাড়াই বিক্রিবাটা! মিজোরামের এই দোকানের গল্প জানলে অবাক হবেন]
ঠাকুমার ছবি দেখে চিনতে পারেন পঞ্চুবাইয়ের নাতি পৃথ্বী ভাইয়ালাল সিঙ্গানে। তাঁরাই পঞ্চুবাইকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চান। কিন্তু ততদিনে লকডাউন শুরু হয়ে যাওয়ায় ফের চলে অপেক্ষার দিন গোনা। অবশেষে ১৭ জুন ঠাকুমাকে মধ্যপ্রদেশ থেকে নাগপুরে নিয়ে আসেন নাতি। জানান ঠাকুমার পুরো নাম পঞ্চফুলাবাই তেজপালসিং সিঙ্গানে। প্রায় পাঁচ দশক আগে মানসিকভাবে অসুস্থ এই মহিলা চিকিৎসা চলাকালীনই হঠাৎ একদিন বাড়ি থেকে বেরিয়ে হারিয়ে যান। তারপরের গল্পটা তো সকলেরই জানা। তবে এত বছর পর বৃদ্ধাকে বাড়ি ফেরাতে পেরে আপ্লুত পঞ্চুবাইয়ের পরিজনেরা ধন্যবাদ জানান মধ্যপ্রদেশে ইসরারের পরিবারকেও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.