সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: একশৃঙ্গ ঘোড়া। সাহিত্যজগতের এক কল্পিত প্রাণী। বাস্তবে যার অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি আজ পর্যন্ত। তবু কল্পনায় ভর করেই প্রোফেসর শঙ্কুকে এই চারপেয়ে প্রাণীদর্শনে সত্যজিৎ রায় পাঠিয়ে দিয়েছিলেন সুদূর তিব্বত সীমান্তে। কিন্তু মন্টানার ৫ বছরের খুদে ওয়াট হাস কোথা থেকে এই একশৃঙ্গের কথা জানতে পেরেছিল কে জানে! তার বড় ইচ্ছে, সেই কল্পিত প্রাণীর পিঠে চড়ে ঘুরতে যাবে, যার মাথায় একটি শিং।
আসলে, ছোট্ট ওয়াটের মাথাতেও ‘শিং’ গজিয়েছে। কিন্তু এ শিং মোটেই ইউনিকর্নের মতো মজার নয়। তার আসলে ব্রেন টিউমার হয়েছে। যা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে দ্রুত না সারালে, ক্যানসারের দিকে এগোবে। এমনই জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। আর সেকথা শুনে ছোট্ট ছেলেটি মাকে জানিয়েছে, অপারেশন থিয়েটারে যাওয়ার আগে সে একটিবার ইউনিকর্নের পিঠে উঠতে চায়। অসুস্থ ছেলেটিকে বোঝানো যায়নি যে প্রাণীটি আসলে কল্পিত। তা হলে তার ইউনিকর্নে চড়ে ঘোরার স্বপ্নের কী হবে? এসব ভেবে চিন্তিত ওয়াটের মা, বাবা। ছেলেকে স্কুলে পৌঁছে দিতে গিয়ে অভিভাবকদের কাছে এই মনখারাপের কথা প্রকাশ করেছিলেন ওয়াটের মা কোরিসা। তা থেকেই তার এক বন্ধুর মা, জেনিফার নিয়েলসনের মাথায় খেলে যায় আইডিয়া। ছেলের অসুস্থ বন্ধুর জন্য তিনিই আয়োজন করেন এক অভিনব পার্টির, যেখানে ওয়াটের জন্য বিশেষভাবে হাজির ছিল ‘ইউনিকর্ন’।
জেনিফারের পোষা ধবধবে সাদা ঘোড়াটি লিলিকেই ইউনিকর্নের মতো করে সাজিয়েছিলেন তিনি। ছোট্ট ওয়াটের মুখে একটু হাসি ফোটাতে, তার এতদিনের স্বপ্ন সত্যি করতে এটাই তাঁরই ভাবনা। কোরিসার থেকে তিনি শুনেছিলেন যে ওয়াট রঙিন সামগ্রী পছন্দ করে। তাই সাদা ঘোড়ার নাকের উপর কেবল একটি শিং জুড়ে দিয়েই থেমে যাননি জেনিফার। দাঁড়িয়ে থেকে ঘোড়ার গায়ে রঙের ছোঁয়া দিয়েছেন। কেশরও রঙে রঙে সাজিয়ে দিয়েছেন। আর তাতেই যেন পৃথিবীর মাটিতে নেমে এসেছে ওয়াটের স্বপ্নের ‘ইউনিকর্ন’।
পার্টির কথা আগে থেকেই জানত ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত ছ বছরের ছেলেটি, যার আগামী সপ্তাহেই অপারেশন। তার আগে তাকে হাসিখুশি রাখতে বন্ধুর মায়ের এই আয়োজন। ছোটদের পার্টিতে রংবেরঙের কেক আর ফ্রুট জুস ছিল আকর্ষণ। কিন্তু সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ছিল ওয়াটের স্বপ্নের ইউনিকর্ন। যার পিঠে চাপিয়ে দেওয়া হয় অসুস্থ খুদেকে। তারপর কিছুক্ষণ চরকিপাক। হাসি যেন আর ধরে না তার।
এই পার্টি থেকে ওয়াটের অপারেশনের বিপুল খরচ সংগ্রহের জন্য GoFundMe ক্যাম্প খোলা হয়। ইতিমধ্যেই সেখান থেকে ৮ হাজার ডলার সংগৃহীত হয়েছে। ওয়াটকে দেখে এখন কিছুটা নিশ্চিন্ত মা,বাবা। যাক, জীবনের কঠিন একটা অধ্যায়ে পা ফেলার আগে ছেলেটা স্বপ্ন তো ছুঁতে পারল। ইউনিকর্নে চড়ে পৃথিবী ভ্রমণের শখ পূরণ না হোক, রোজ রাতে জড়িয়ে থাকা পুতুলগুলোকে চাক্ষুষ তো করল সে। বাকি যুদ্ধের মুখোমুখি সে হতে পারবে অকুতোভয় হয়েই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.