সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: পিস্তল বা আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে লুট নয়। কিংবা চোখে লঙ্কা গুঁড়ো ছিটিয়েও ছিনতাই নয়। লুটপাটের এ এক অভিনব পন্থা৷ যা কিছুটা মনস্তাত্বিকও বটে৷ মানুষজনকে অন্যমনস্ক করে ছিনতাই করতে সিদ্ধহস্ত এই দলটি। সম্প্রতি তারা উত্তর চব্বিশ পরগনা থেকে পুরুলিয়ায় আস্তানা গেড়েছে। তবে এই কৌশল খুব একটা কার্যকরী হয়নি৷ পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে ২ লুটেরা৷
ঘটনা গত ৬ জুলাইয়ের৷ বলরামপুর শহরে ব্যাংক থেকে বার হয়ে আসা এক গ্রাহকের জামায় আঠা লাগিয়ে তাকে সেই দিকে মনোযোগী করে তুলেছিল দুষ্কৃতীরা৷ আর সেই সুযোগে লুট করেছিল তাঁর তিরিশ হাজার টাকা। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি৷ পুলিশের নাকা চেকিংয়ে হাতেনাতে ধরা পড়ে যায় তারা। ধৃতদের লাগাতার জেরা করে লুটের এমন অভিনব পদ্ধতি জানতে পেরেই বিষয়টি সামনে আনল পুরুলিয়া জেলা পুলিশ।
বলরামপুর থানার পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত দুই ছিনতাইবাজের নাম যতন বিশ্বাস ও সুমিত নাথ। তাদের দু’জনের বাড়িই উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বীজপুর থানা এলাকায়। যতন থাকে কাঁচরাপাড়ার জোড়াপুকুরে। সুমিতের বাড়ি হালিশহরের সাধু মোড়ে। এভাবে লোককে অন্যমনস্ক করে লুটের কাজে তারা দীর্ঘদিন ধরে হাত পাকিয়েছিল বলে জানা গিয়েছে। তবে অপারেশন করতে গিয়ে তারা অতীতেও ধরা পড়ে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এর আগে হুগলি এবং হাওড়া থেকে তারা গ্রেপ্তার হয়।
কিন্তু তারপরও শিক্ষা হয়নি৷ লুটের জন্য সেই অভিনব পদ্ধতিই প্রয়োগ করে যাচ্ছিল যতন এবং সুমিত৷ জেলায়–জেলায় ঘুরে অপরাধের পরিধি বাড়িয়ে তুলছিল বলে অভিযোগ৷ গত ৬ জুলাই মঙ্গলবার বেলা এগারোটা নাগাদ বলরামপুর স্টেট ব্যাংক থেকে বাঘমুন্ডির চড়কপাথর গ্রামের বাসিন্দা হরমোহন সিং সর্দার টাকা তুলে একটি ব্যাগে করে নিয়ে যাচ্ছিল। দীর্ঘক্ষণ ধরে ওই গ্রাহককে নজরে রেখে তারপর তাঁর জামায় আঠা লাগিয়ে দেয়। ওই গ্রাহক তা বুঝতেই পারেননি। ছিনতাইবাজদেরই একজন জামায় আঠা লেগেছে বলে তাঁকে জানায়৷ তখন ওই গ্রাহক ব্যাগ রেখে জামার দিকে মনোযোগী হয়ে পড়েন৷ সেই ফাঁকেই সেই ব্যাগ নিয়ে চম্পট দেয় আরেক ছিনতাইবাজ।
তবে টাকা লুট করে পালিয়ে যাওয়ার সময় সড়কপথে পুলিশের নাকা চেকিংয়ের মুখে পড়ে আর নিস্তার পায়নি তারা। তাদের গ্রেপ্তার করে জেরার পরই সমগ্র বিষয়টি জানতে পারে পুলিশ। শুক্রবার যতন ও সুমিতকে পুরুলিয়া আদালতে তোলা হলে তাদের চার দিনের পুলিশ হেফাজত হয়। এইরকম ছিনতাবাজের দল জেলায় আরও ঢুকেছে কি না, সে বিষয়ে অত্যন্ত সতর্ক পুরুলিয়া জেলা পুলিশ। ফলে জেলাজুড়েই নাকা চেকিং আরও জোরদার হয়েছে।
ছবি: অমিত সিং দেও৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.