গৌতম ব্রহ্ম:‘জেগে ঘুমিয়ে থাকা’। যৌগিক নিদ্রা এমনই। ঘুমন্ত ও জাগ্রত অবস্থার মাঝামাঝি নিয়ে গিয়ে ২০ মিনিটের এই যৌগিক ক্রিয়া ৫ ঘণ্টা ঘুমের সমতুল সতেজতা দেয়। জন্ম দেয় এক নতুন আমি-র।
ঘুমের সময় আমরা স্বপ্ন দেখি, কিন্তু চোখে কিছু দেখতে পাই? গন্ধ পাই নাকে? কানে কিছু শুনতে পাই? ঘুমের সময় পঞ্চ ইন্দ্রিয় নিজেদের গুটিয়ে নেয়। ব্রেনে কোনও ইনপুট দেয় না। ফলে ব্রেনে ইলেক্ট্রিক্যাল নিউরোলজিক্যাল সক্রিয়তা কমে। নিউরো ট্রান্সমিটারগুলির কাজ নিয়ন্ত্রিত হয়। যোগনিদ্রা আমাদের এমন একটি পর্যায়ে নিয়ে যাবে যেখানে জাগ্রত অবস্থাতেই আমরা ঘুমের সমস্ত সুফল পাব।
উপকারিতা
অবসাদ কাটাতে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে, স্মৃতিশক্তি এবং রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে যোগনিন্দ্রা অত্যন্ত উপযোগী। আসলে এই যৌগিকক্রিয়ার সময় আমাদের ব্রেনে থিটাওয়েব চলে। যা একমাত্র গভীর ঘুমের সময়ই সম্ভব। তবে মনে রাখতে হবে, যোগনিদ্রা কিন্তু ঘুমিয়ে পড়া নয়। ঘুমের সতেজতা নিয়ে আসে বলে একে নিদ্রার সঙ্গে তুলনা করা হয়। তবে শরীর-মনের সতেজতা ফেরাতে ঘুমের থেকেও বেশি কার্যকরী। ঘুম শুধু মাসকিউলার টেনশনকে কমায়। কিন্তু যোগনিদ্রা মাসকিউলার, ইমোশনাল, মেন্টাল– তিন রকম টেনশনকেই কমায়। সেই অর্থে যোগনিদ্রা সচেতন অবস্থা ও গভীর নিদ্রার মধ্যে বিবাহ!
ইতিহাস
যোগনিদ্রার উদ্ভাবক স্বামী সত্যানন্দ সরস্বতী। সাধন জীবনের প্রথম দিকে তিনি হৃষিকেশে একটি আশ্রমে থাকতেন। সারারাত আশ্রম পাহারা দেওয়ার গুরুদায়িত্ব ছিল তাঁর উপর। পড়ুয়ারা ভোর ৪টের সময় উঠে বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণ শুরু করলে ঘুমাতে যেতেন স্বামীজি। একবার আশ্রমের এক অনুষ্ঠানে বৈদিক মন্ত্র উচ্চারিত হচ্ছিল। স্বামীজির মন্ত্রগুলো খুব চেনা লাগছিল। যেন কোথায় শুনেছেন এগুলি। পরে গুরুর সঙ্গে কথা বলে গোটা বিষয়টি তিনি বুঝতে পারেন। শুরু হয় ‘জেগে ঘুমিয়ে থাকা’ নিয়ে তাঁর গবেষণা। আসলে ৬-৮ ঘণ্টা ঘুমোলেও আমরা ইমোশনাল এবং মেন্টাল টেনশন থেকে মুক্তি পাই না। কিন্তু যোগনিদ্রা বিটা, আলফা, থিটা হয়ে ব্রেনকে ডেল্টা ওয়েবের দিকে নিয়ে যেতে থাকে। আমেরিকায় যোগনিদ্রারত এক যোগীর উপর গবেষণা করে এই তথ্যই মিলেছে।
যোগনিদ্রা কীভাবে?
এই যোগিক ক্রিয়া এমন এক তুরীয় অবস্থায় অনুভূতিকে নিয়ে যাবে যে মনে হবে আপনি গভীর ঘুম থেকে উঠলেন। হ্যাঁ, ২০ মিনিটের যোগনিদ্রায় ৫ ঘণ্টা ঘুমের সতেজতা। অলীক কল্পনা নয়। এটা বিজ্ঞানসম্মত বাস্তব।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.