জিনিয়া সরকার: কখনও স্লিম হতে গিয়ে বাদ পড়ছে ভিটামিন৷ তার জেরে কারও মুখে অল্প বয়সেই বলিরেখা৷ তাহলে ঠিক কী কী ভিটামিন রোজ না নিলেই নয়? প্রেগন্যান্সিতেই বা কোনটা জরুরি? মহিলাদের কখন কোন ভিটামিন নেওয়া আবশ্যিক?
ভিটামিন এ:
‘বিটা ক্যারোটিন’ শরীরে পরিবর্তিত হয়ে তৈরি হয় ভিটামিন-এ৷ চোখের দৃষ্টি ঠিক রাখতে, ত্বক ভাল রাখতে ও নরম টিস্যুর উৎপাদনে ভিটামিন এ গুরুত্বপূর্ণ৷ অ্যাপ্রিকট, গাজর, পেয়ারা, কলা, পেঁপে, পিচ, কুমড়ো, লাল লঙ্কা, পালংশাক, টম্যাটোতে থাকে ভিটামিন-এ৷
ভিটামিন সি:
ভিটামিন সি-তে থাকে অ্যাসকরবিক অ্যাসিড, যা শরীরের বিভিন্ন ক্ষত, সংক্রমণ সারাতে কাজ করে৷ শরীরে লোহিত রক্তকণিকা তৈরি করে, স্মৃতিশক্তি ঠিক রাখতে সাহায্য করে, মনঃসংযোগ বৃদ্ধি করে৷ অতিরিক্ত মানসিক চাপ নিলে বা বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিটামিন সি অথবা অ্যাসকরবিক অ্যাসিডের মাত্রা শরীরে কমে যেতে থাকে৷ ব্রকোলি, আঙুর, কিউই, কমলালেবু, আলু, স্ট্রবেরি ও টম্যাটো ভিটামিন সি সমৃদ্ধ৷
ভিটামিন ই:
ভিটামিন ই মহিলাদের ক্ষেত্রে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না৷ সানফ্লাওয়ার অয়েল, মার্জারিন, কর্ন অয়েল, কড লিভার অয়েল, পিনাট বাটার, হ্যাজেলনাট ও গমে ভিটামিন ই থাকে৷
ভিটামিন কে:
বয়স্ক মহিলাদের হাড় শক্ত রাখতে ও রক্ত জমাট হওয়া আটকাতে ভিটামিন কে ভাল৷ সয়াবিন অয়েল, ব্রকোলি, সবুজ পাতাযুক্ত সবজি, ফিশ অয়েল ভিটামিন কে সমৃদ্ধ৷
ভিটামিন B6:
ভিটামিন B6-কে বলা হয় পেরিডক্সিন৷ নার্ভের কাজ ঠিক রাখতে, শরীরে খাবারকে এনার্জিতে পরিবর্তিত করতে অর্থাৎ মেটাবলিজমের ক্ষেত্রে এই ভিটামিন প্রয়োজনীয়৷ মহিলাদের সন্তান জন্ম দেওয়ার ক্ষমতা ঠিক রাখতে, ডিম্বাণু উৎপাদনে কাজ করে এই ভিটামিন৷ তবে বেশি মাত্রায় এই ভিটামিন শরীরে গেলে ক্ষতিও হয়৷ মাছ, আলু, অ্যাভোগাডো, কলা, বিনস, মাংস, ওটমিল, দানাশস্য ভিটামিন B6 সমৃ৷
ভিটামিন B12:
শরীরের মেটাবলিজম ঠিক রাখার পাশাপাশি, লোহিত রক্তকণিকা তৈরি করতে এই ভিটামিন জরুরি৷ চিজ, ডিম, মাছ, মাংস, দুধ ও দই থেকে ভিটামিন B12 পাওয়া যায়৷ অ্যানিমিয়া থাকলে এবং নিরামিষ ডায়েটে অভ্যস্ত হলে শরীরে এই ভিটামিনের অভাব দেখা যায়৷
ভিটামিন B1:
কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও ফ্যাটের মেটাবলিজমের ক্ষেত্রে কাজ করে৷ যত বেশি ক্যালোরি শরীরে ঢুকবে এটি বেশি দরকার হয়৷ যাঁরা বেশি অ্যালকোহল খান তাঁদের B1-এর অভাব হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে৷ ভিটামিন B1 পাওয়া যায় বিনস, দানাশস্য, যব থেকে৷
ভিটামিন B2:
হেলদি ব্লাড সেল তৈরি করতে, এনার্জি বাড়াতে, হজম শক্তি ঠিক রাখতে, চোখ ও ত্বক ভালো রাখতে দরকার ভিটামিন B2৷ দুগ্ধ জাতীয় খাবার, মাংস, ডিম, সবুজ সবজি, বাদাম এই ভিটামিন সমৃদ্ধ৷
নিয়াসিন:
নিয়াসিন হল ভিটামিন B3৷ হার্টের সমস্যা এড়াতে, রক্তে সুগারের মাত্রা ঠিক রাখতে, ধমনীতে রক্ত চলাচল, হজমশক্তি ও নার্ভ ফাংশন ঠিক রাখতে দরকার৷ গাজর, বিনস, সবুজ সবজিতে এই ভিটামিন পাওয়া যায়৷
ভিটামিন ডি:
যদিও এটাকে বলা হয় ভিটামিন, কিন্তু এটি কাজ করে হরমোনের মতোই৷ শরীরে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের জোগান দিয়ে হাড় শক্ত করতে সাহায্য করে৷ যখন শরীরে ভিটামিন ডি-র অভাব দেখা যায়, তখন হাড় থেকে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস শরীর নেয়৷ ফলে দেখা যায় হাড় ক্রমশই নরম হতে থাকে৷ যা থেকে হয় অস্টিওপোরোসিস৷ ভিটামিন ডি-এর অভাব মেটাতে খান ডিম, মাছ৷ ভিটামিন ডি-র সবচেয়ে ভালো উৎস রোদ৷ তবে একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর বিশেষ করে মহিলাদের ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়ার পর ক্যালসিয়াম বা ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট খাওয়া অত্যন্ত জরুরি৷
ফোলেট (ফলিক অ্যাসিড):
গর্ভস্থ সন্তানের সুস্থ মস্তিষ্ক ও শিরদাঁড়া তৈরি করতে প্রয়োজন ফলিক অ্যাসিড৷ কোষে ডিএনএ ও আরএএএ তৈরি করতেও সাহায্য করে এবং ডিএনএ-র পরিবর্তন আটকে ক্যানসার প্রতিরোধ করে৷ প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশুদের লোহিত রক্তকণিকা তৈরি করে অ্যানিমিয়া রোধ করে এই ভিটামিন৷ প্রেগন্যান্ট মহিলাদের জন্য ফলিক অ্যাসিড অত্যন্ত জরুরি৷ পালংশাক, সবুজ সবজি, স্ট্রবেরি, রাজমা, কালো বিনস, দানাশস্য, ডিম ও মেটে ফলিক অ্যাসিডযুক্ত৷
অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট:
অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হল সেই সকল উপাদান, যেগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে সাহায্য করে৷ অ্যান্টি অক্সিডেন্টের মধ্যে পরে ‘ভিটামিন এ’, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই৷ শরীরের রোগ প্রতিরোধের সঙ্গে বয়স ধরে রাখতে অ্যান্টি অক্সিডেন্টের ভূমিকা অনবদ্য৷ এ ছাড়া যে কোনও ধরনের ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া থেকে শরীরকে বাঁচায়৷
আরও জানতে যোগাযোগ করুন: ডা. অরবিন্দ ওঝা, ডায়াবেটোলজিস্ট, আইএলএস হসপিটাল, 9051460000। অথবা পড়ুন epaper.sangbadpratidin.in
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.