গৌতম ব্রহ্ম: সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে প্রেসক্রিপশন অডিট চলছে। এবার অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার রুখতে মুরগি-মাছ চাষেও নজরদারি শুরু করল রাজ্যের স্বাস্থ্যদপ্তর। পোলট্রি-ফিশারিজে কী কী অ্যান্টিবায়োটিক, কতটা ব্যবহার হচ্ছে তা জানতে মুরগির খামার ও মাছের ভেড়ি থেকে নমুনা সংগ্রহের কাজও চলছে। এমনটাই জানাল স্বাস্থ্যদপ্তর।
সম্প্রতি রাজ্যের সরকারি হাসপাতালগুলিতে ৩২ হাজার কেস স্টাডি করে দেখা যায়, এ রাজ্যে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। সিসিইউ বা আইসিইউ-কে প্রোটোকল মেনে জীবাণুমুক্ত করা হচ্ছে না। যার জেরে অনেক রোগীই হাসপাতাল গিয়ে নতুন করে সংক্রমিত হচ্ছেন। কেউ ছুটির সময় সংক্রমণ নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। ফলে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার বাড়ছে। বাড়ছে সেপসিসে মৃত্যু। এ যেন দুষ্টচক্রের এক ভয়ংকর আবর্তন। বিষয়টি স্বাস্থ্যদপ্তর সরেজমিনে খতিয়ে দেখছে। মাইক্রোবায়োলজি বিভাগকে সতর্ক করা হয়েছে। কিন্তু সমস্যা হল, হাঁস, মুরগি, মাছ চাষেও অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ অপব্যবহার হচ্ছে। রোগ প্রতিরোধের জন্য আগে থেকেই অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো হচ্ছে হাঁস-মুরগিকে। অসুস্থ হাঁস-মুরগিকেও সব সময় অ্যান্টিবায়োটিকের কোর্স সম্পূর্ণ করা হয় না। ফলে, বেশ কিছু ব্যাকটিরিয়া অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট হয়ে যাচ্ছে। যা মানুষের খাদ্যশৃঙ্খলের মধ্যে অনুপ্রবেশ করে সর্বনাশ করছে। ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. সিদ্ধার্থ জোয়ারদারের পর্যবেক্ষণ, গবাদি প্রাণী, মুরগি, শূকরের মতো ফিড অ্যানিম্যাল এবং মাছ ও চিংড়ির মতো জলজ প্রাণীতে অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার পরিবেশে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটিরিয়া সৃষ্টির অন্যতম কারণ বলে জানা গিয়েছে।
সিদ্ধার্থবাবুর দাবি, প্রাণী চিকিৎসকদের প্রেশক্রিপশন ছাড়া দোকান থেকে অ্যান্টিবায়োটিকের বিক্রি সম্পূর্ণ বন্ধ করা প্রয়োজন। ‘গ্রোথ প্রোমোটার’ হিসাবে মুরগি ও মাছকে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো একেবারেই অনুচিত। এই ব্যাপারে প্রশাসনকে নজরদারি চালাতে হবে ও কড়া আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে। ডাক্তারি প্রেসক্রিপশনের পাশাপাশি এবার এই বিষয়টিতেও নজরদারি শুরু করেছে স্বাস্থ্যদপ্তর। শীঘ্রই সবটা মিলিয়ে একটা অ্যান্টিবায়োটিক নীতি গ্রহণ করবে রাজ্য। এমনটাই জানালেন রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডা. সিদ্ধার্থ নিয়োগী। তাঁর পর্যবেক্ষণ, ‘‘গোটা রাজ্যজুড়েই কাজ চলছে। হাসপাতালের পাশাপাশি বিভিন্ন খামার ও জলাশয় থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। কোনওদিকে কোনও ফাঁক রাখতে চাই না আমরা। দ্রুত নীতি প্রণয়ন করা হবে।’’
আসলে ব্রয়লার মুরগির ওজন বাড়ানোর জন্য এবং বেশি পরিমাণে ডিম উৎপাদনের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক সাপ্লিমেন্ট দেওয়া হচ্ছে। মাছের রোগ ঠেকাতেও ব্যবহার হচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক। যা নিয়ে উদ্বিগ্ন ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (এফএসএসএআই) এবং ফুড সেফটি অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ)-র কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা কমিটি। বিশেষজ্ঞদের মতে, অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার প্রাণীদের মধ্যে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) তৈরি করে। এএমআর এমন একটি পর্যায়, যেখানে কোনও রোগ নিরাময়ের জন্য দেওয়া ওষুধ বা অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করা বন্ধ করে দেয়। এর কারণ,কিছু ব্যাকটিরিয়া অনেক ওষুধের বিরুদ্ধে শক্তিশালী হয়ে উঠে ওষুধগুলি কার্যকর হওয়া বন্ধ করে দেয়। এই অবস্থাকে বলা হয় সুপার বাগ। যা প্রতি বছর ১০ লক্ষেরও বেশি মানুষের প্রাণ কাড়ছে। ৬০ শতাংশ ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করছে না। যেমন, ‘আপার রেসপিরেটরি ট্র্যাক্ট’ সংক্রমণ নিরাময়ে আগে পেনিসিলিন গ্রুপের ড্রাগ ব্যবহার করা হত। কিন্তু এখন বহুক্ষেত্রেই সেফালোস্ফোরিন ছাড়া কাজ হচ্ছে না। এমন উদাহরণ ভূরিভূরি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.