মৌশাখী বোস: কেউ বলেন ছোঁয়াচে, কারও মতে শ্বেতী বংশগত৷ এসব বুজরুকি! কান দেবেন না৷ প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা করালে সাদা দাগ মিলিয়ে যায়৷
আসলে ভিটিলিগো বা শ্বেতী হল চামড়ার অসুখ৷ এই রোগে ত্বক তার সাধারণ রং হারাতে শুরু করে৷ যার ফলে গায়ের রং অতিরিক্ত সাদা হয়ে যায়৷
কারণ:
আজ পর্যন্ত চিকিৎসাবিদ্যায় শ্বেতীর সঠিক কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি৷ তাই একে অটোইমিউন ডিজিজও বলা হয়৷ এ ক্ষেত্রে দেহের অ্যান্টিবডি কোনও অজ্ঞাত কারণে দেহের রং উৎপাদক কোষগুলিকে (মেলানোসাইট কোষ) শত্রু ভেবে ধ্বংস করতে থাকে৷
ধরন:
• ফোকাল শ্বেতী (Focal Vitiligo): এই প্রকার রোগে দেহের বিশেষ কোনও স্থানে দাগ হতে পারে৷
• বুলগেরিক শ্বেতী (Bulgeric Vitiligo): এই ধরনের শ্বেতীতে দেহের অনেক জায়গায় সাদা দাগ হয়৷
• অ্যাক্রাল শ্বেতী (Acral Vitiligo): এই প্রকার শ্বেতীতে হাতে, পায়ে ও ঠোঁটে সাদা দাগ আসে৷
• মিক্সড শ্বেতী (Mixed Vitiligo): এই ধরনের শ্বেতী হাত-পা ও গায়ে হতে পারে৷
চিকিৎসা:
শ্বেতীর প্রথম ও প্রধান চিকিৎসা হল রোগীর পূর্বের রং ফিরিয়ে আনা৷ এর জন্য কিছু ওষুধ ব্যবহৃত হয়৷
• দাগযুক্ত স্থানে স্টেরয়েড মলম লাগানো৷
• সোরোলিন জাতীয় ওষুধ মেখে রোদে বসা৷
• স্টেরয়েড ওষুধ খাওয়া৷
• শ্বেতী বেড়ে গেলে সোরালিন জাতীয় ওষুধ খাওয়া৷
• ওষুধে যদি ভাল কাজ না হয় তখন চিকিৎসক আল্ট্রাভায়োলেট লাইট TLOI অথবা Exeimer Laser-এর সাহায্যে রং ফেরানোর চেষ্টা করেন৷
• যখন অল্প স্থানে রং ফেরানো সম্ভব হয় না, তখন পিগমেন্ট গ্রাফটিং করা হয়৷
ছুঁৎমার্গ:
বিদেশে শ্বেতী নামক রোগটিকে কেউই আমল দেন না, কারণ এতে চামড়ার রং পরিবর্তন ছাড়া অন্য কোনও শারীরিক সমস্যা হয় না৷ কিন্তু আমাদের দেশে শ্বেতী নিয়ে মানুষের মনে নানা কুসংস্কার রয়েছে৷ ফলে শ্বেতী হলে অনেককেই প্রায় একঘরে করে দেওয়া হয়৷ মেয়েদের বিয়েতে সমস্যা হয়, রোগীর সংস্পর্শে যেতে মানুষ ভয় পান৷ এ নিয়ে চিকিৎসা মহলে বহু আলোচনার পর এখন মানুষের মধ্যে মানসিকতার কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে৷ আশা করা যায় ভবিষ্যতে শ্বেতী নামক রোগটি আর অভিশাপ হয়ে থাকবে না!
জেনে রাখুন:
• এটি ছোঁয়াচে অসুখ নয়।
• বংশগত অসুখও নয়।
• লিভার খারাপ হলে শ্বেতী হয় না।
• রক্ত অশুদ্ধ হলে শ্বেতী হয় না।
• বিশেষ কিছু কড়া ওষুধ খেলেও শ্বেতী হয় না।
• সাদা খাবার, যেমন ডিম, দুধ ও টক জাতীয় খাবার খেলে এই রোগ বাড়ে না৷
• মায়ের শ্বেতী থাকলে ভাবী সন্তানেরও শ্বেতী হবে, তার কোনও মানে নেই৷
সতর্কতা:
• যাঁদের গায়ের রং ফর্সা, তাঁদের প্রাথমিক অবস্থায় রোগ ধরা পড়ে না৷ তাই শরীরে কোনও সাদা দাগ দেখলেই দ্রুত ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন৷
• ত্বকের সঙ্গে চেপে রেখে বেল্ট বা দড়ি বাঁধবেন না৷
• খেয়াল রাখবেন- কোথাও চোট পেয়ে যেন ত্বকের ক্ষতি না হয়৷
• কোথাও পুড়ে গেলে দ্রুত তার চিকিৎসা করান৷
• রোদে বেরনোর আগে সানস্ক্রিন লোশন ব্যবহার করুন৷
• যদি দেহে জ্বালা বা চুলকানি হয়, চিকিৎসককে জানান৷
আরও জানতে ইন্ডিয়ান সোসাইটি ফর পেডিয়াট্রিক ডার্মাটোলজির চেয়ারম্যান ডা. সন্দীপন ধরকে ফোন করুন এই নম্বরে- 9874968139। এছাড়া ক্লিক করে দেখে নিন epaper.sangbadpratidin.in
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.