ছবি: সংগৃহীত
নানা অসুখ থেকে মুক্তির পথ লুকিয়ে ভেজ ডায়াটে। প্রয়োজনীয় পুষ্টির এদিক-ওদিক না করে মাছ-মাংসের বদলে তবে কী খাবেন? জানাচ্ছেন ফর্টিস হাসপাতালের বিশিষ্ট ডায়াটেশিয়ান সোহিনী শীল সাউ। শুনলেন জিনিয়া সরকার।
শরীর সচেতনের আসল মানে পেট সচেতন। তাই খাদ্যাভ্যাসে রাশ টানুন। এখন যেকোনও রোগ নিয়ে চিকিৎসকের দ্বারস্থ হওয়া মানেই এই নির্দেশ। এছাড়া হলি-বলি-টলির তারকা থেকে খেলার মাঠের ফিটনেস আইকনদের অধিকাংশেরই পছন্দ নিরামিষ বা ভেজ খাবার। তাই বাড়ির মা-ঠাকুরমা যতই মনে করুক যে মাছ-মাংস-ডিম ছাড়া অপুষ্টি, এখন সময় সেই ধারণা বদলানোর। খাদ্যরসিক বাঙালির একটা বয়সের পর চিংড়ি-মটনের স্বাদবদল জরুরি। তা না হলে রোগের প্রকোপ ঠেকানো দুরূহ।
কেন?
বার্ধক্যের দোরগোড়ায় যখন একজন পৌঁছবেন তখন নিরামিষভোজী হলে প্রায় ১০ বছর আয়ু বেড়ে যেতে পারে। হঠাৎ এই পরিবর্তন শরীরের কোনও ক্ষতি করবেই না বরং বয়সকালে রোগের প্রকোপে মোক্ষম দাওয়াই হতে পারে। অনেকের ধারণা মাছ-মাংস-ডিম খাদ্যতালিকা থেকে বাদ পড়া মানে শরীরের অনেক প্রয়োজনীয় উপাদানের জোগান বন্ধ হয়ে যাওয়া। তা কিন্তু একেবারেই নয়। উলটোভাবে ভেবে দেখলে বোঝা সহজ। মাংস, মাছ, ডিমের উপকার রয়েছে কিন্তু আমিষ বাঙালি রোজ ঘরে-বাইরে যে হারে মাংস-ডিমে মজে থাকেন তাতে উপকার যা হয় তার চেয়ে বেশি অপকারের লিস্ট। তার চেয়ে ভাল আমিষের চাহিদা নিরামিষ দিয়ে পূরণ করা। এর প্রভাবে শরীরের প্রয়োজন যেমন মিটবে অন্যদিকে ক্ষতি হওয়ারও কোনও জায়গা থাকবে না।
বয়স বাড়লে চাই
সাধারণত ৩৫ বছরের পর থেকে শরীর নানা দিক থেকে দুর্বল হতে থাকে। পুরুষদের ক্ষেত্রে হার্টের অসুখ ও ওজন বৃদ্ধির প্রবণতা বাড়তে থাকে। মেয়েদের ক্ষেত্রে সন্তানধারণের পর বা ৩০-৩৫ বছর বয়সের পর ওজন প্রায় ১০-১৫ কেজি বৃদ্ধি হতে থাকে। এক্ষেত্রে প্রেগন্যান্সির পর শরীর সম্পর্কে খুবই সচেতন হওয়া জরুরি। আর এই সময় সন্তানের প্রতি বেশি নজর থাকায় নিজের শরীর সম্পর্কে খুব কম মহিলাই সচেতন হতে পারে। তাই সবচেয়ে সহজ উপায় খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন ঘটিয়ে শরীর ঠিক রাখা। এছাড়া কর্মরত পুরুষ-মহিলা সকলেরই শরীরচর্চার সময় আজ প্রায় নেই বললেই চলে, তার উপর খাওয়ার ব্যাপারে কোনও রাশ নেই। তাই এই বয়সে যদি কেউ ভেজ ডায়েটে চলে আসেন সেক্ষেত্রে সুস্থ থাকা যায় অনেক বেশি। এতে মহিলাদের মেনোপজ শুরুর সময় অনেকদিন পর্যন্ত আটকে রাখা সম্ভব। ডায়াবেটিস, হার্টের সমস্যা ও নানান অপ্রত্যাশিত অসুখের প্রকোপ দূর করা সম্ভব। এছাড়া ফল, সবজি বেশি করে খেলে তা ক্যানসারের মতো মারণরোগ অনেক অংশেই রোধ করে। কারণ সবজি-ফলে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। তাই যে বয়সে শরীর দুর্বল হতে শুরু করে সেই সময় যদি এই ধরনের খাবার খেয়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো যায় তবে লাভ অনেক বেশি।
[ কলকাতায় কান্নার ক্লাস চাইছেন মনোবিদরা, কেন জানেন? ]
ডায়েট চেঞ্জ
আজ পর্যন্ত ননভেজ খেয়েই জীবন চলছে। তবে কি কাল থেকেই ভেজ খাওয়া শুরু করা সম্ভব? হঠাৎ করে খাদ্যাভ্যাসের এমন পরিবর্তন শরীর মেনে নিতে নাও পারে। তাই অভ্যাস ধীরে ধীরে বদলানো উচিত। পাশাপাশি যে খাবার খেতে ভালবাসি তা থেকে হঠাৎ করে বিরত থাকা কঠিন, এতে খাওয়ার ইচ্ছা আরও বাড়তে থাকে। তাই শুরুতে প্রথম দু’সপ্তাহ ডায়েটে মাছ-মাংস বন্ধ রেখে ডিম খাওয়ার অভ্যাস চালু রাখতে হবে। এরপর ধীরে ধীরে ডিম খাওয়ার অভ্যাস কমাতে হবে। একমাস পর থেকে পুরো ভেজ খেয়ে থাকার অভ্যাস শুরু করতে হবে। তাই শরীরের এই প্রয়োজন মেটাতে ডায়েটে বিশেষ কিছু ভেজ খাবার রাখতেই হবে।
মাছ-মাংস-ডিম নয়
রোজ ভাতের সঙ্গে এক-দু’পিস মাছ খেলে ক্ষতি হবে তা নয়। কিংবা ডিম সেদ্ধ খাওয়া যেতে পারে। তবে রোস্ট করা চিকেন-মটন, খুব মশলা মেশান মাছ-ডিম রোজ খেতে থাকলে একটা সময়ের পর তার খাওয়ার প্রভাব শরীরে পড়বেই। পাশাপাশি শরীরে অযাচিতভাবে অতিরিক্ত তেলের প্রবেশ ক্যালোরি বাড়ায়।
[ নাইট শিফটে অফিস? জানেন কী বিপদ হতে পারে আপনার? ]
নো রিস্ক
ডায়াবেটিস, থাইরয়েড কিংবা হার্টে অসুখ থাকলে এই ডায়েটে ক্ষতি নেই বরং আরও সুস্থ থাকা সম্ভব। তবে অন্যান্য অসুখ থাকলে চিকিৎসক অথবা ডায়াটেশিয়ানের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। টিবি ও ক্যানসারে আক্রান্ত বা কেমোথেরাপি কিংবা অন্যান্য চিকিৎসা চলছে পুরোপুরি নিরামিষ ডায়াটে পরিবর্তিত হওয়া চলবে না।
পরামর্শ : ০৩৩ ৬৬২৮ ৪৪৪৪
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.