পুজোয় টানা ছুটি। ভ্রমণপিপাসুরা টুক করে সেরে নিন কাছেপিঠের বিদেশ সফর। খোঁজখবর দিলেন প্রীতিকা দত্ত।
‘দ্য ইয়ার্স গো বাই অ্যাজ কুইকলি অ্যাজ ইউ উইংক। এনজয় ইওরসেলফ হোয়াইল ইউ আর স্টিল ইন ইওর পিঙ্ক…।’ ৬৯ বছর আগে মার্কিন গায়িকা ডরিস ডে গেয়েছিলেন ‘এনজয় ইওরসেল্ফ’। সময় দৌড়চ্ছে। তাকে ধরতে চাওয়া বৃথা। অযথা জীবনটাকে জটিল না করে বেরিয়ে পড়ুন। একা ডরিস নয়। সম্প্রতি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চও বলছে, বেড়ানোর মতো আনন্দ নাকি কিছুতে নেই। দশটা-পাঁচটার ঘষটে যাওয়া মরচে পড়া জীবনে মন ভাল রাখতে এবং মগজের গোড়ায় ফুঁ দিতে, বেড়ানোর কোনও বিকল্প নেই।
তাছাড়া জোড়া ইনকামের বাঙালি ইদানীং দেশের গণ্ডি পেরিয়ে অহরহ বিদেশ যাচ্ছে। ট্যুর কোম্পানি কর্তারা বলছেন, এখন ইউরোপের ক্রেজ সবচেয়ে বেশি। চিন, জাপান, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া- লম্বা তালিকা। ‘গোআইবিবো’ বা ‘বুকিং ডট কম’-এর যুগে আগেভাগে টিকিট আর হোটেল বুক করেও শান্তি নেই। ভিসা অ্যাপ্লাই করো। কখনও সরাসরি দূতাবাসে। কখনও ভিএফএসের দপ্তর হয়ে দূতাবাসে। এত কিছুর পর ভিসা ইন্টারভিউ। ভিসা রিজেকশনের ভয়ও আছে। সুতরাং পকেটে অর্থ থাকলেও চিন্তা কমছে না।
সময় বদলেছে। আর এই বদলে যাওয়া সময়ে বাড়তে থাকা পর্যটক সংখ্যা দেখে বাইরের দেশগুলোও নিয়ম পালটাচ্ছে। ভারতীয় নাগরিকদের জন্য কিছু দেশের এয়ারপোর্টের ইমিগ্রেশনের লাইনে দাঁড়ালেই ট্রাভেল ভিসা স্ট্যাম্প আপনার পাসপোর্টে। যাকে বলে ‘ভিসা অন অ্যারাইভাল’। ভিসা সংক্রান্ত সবরকম ঝক্কি ছাড়া ডেস্টিনেশনের একটা ছোট তালিকা রইল আপনার জন্য।
থাইল্যান্ড
বাঙালির এখন অন্যতম প্রিয় সমুদ্রসৈকত এখন থাইল্যান্ড। সাদা হাতির দেশ। স্কাইস্ক্র্যাপার। চওড়া চকচকে রাস্তা। টুকটুক। বৌদ্ধদের হাসিমুখ। রাজার বাড়ি। সোনার বুদ্ধ। সমস্তটা মিলিয়ে কম খরচে বিদেশের স্বাদ। থাইল্যান্ডের দুটো সবচেয়ে বড় ইউএসপি- থাই ফুড এবং নাইটলাইফ। বছরের যে কোনও সময় থাইল্যান্ড যাওয়া যায়। আর যাঁরা রাতজাগা পাখি, তাঁদের জন্য ব্যাংকক স্বর্গরাজ্য। একবার ব্যাংকক গেলে অবশ্যই বুক করুন চাও-পায়ারা নদীর ওপর ক্রুজে ডিনার। মধ্যবিত্ত জীবনে পরিবার নিয়ে কম খরচে ক্রুজে ডিনারের অভিজ্ঞতা লিখে বোঝানো যাবে না। সেই সঙ্গে দেখুন সিয়াম নিরামিতের কালচারাল শো। ব্যাংকক থেকে পাটায়া ঘণ্টা তিনেকের জার্নি। ব্যাংকক গেলে পাটায়াও ঘুরে আসুন। হাতে সময় থাকলে ফুকেত বা ক্র্যাবি আইল্যান্ডেও যেতে পারেন।
কীভাবে যাবেন
কলকাতা থেকে থাই এয়ারওয়েজ, স্পাইস জেট বা এয়ার এশিয়ার বিমান। সফর সময় চার ঘণ্টা মতো। ফ্লাইটের ভাড়া দিল্লি-মুম্বইয়ের চেয়ে কম।
এক্সপার্ট টিপ্স
কম বাজেটে ট্রিপ সারতে ভরসা রাখুন লোকাল ট্রান্সপোর্টে। ব্যাংককে বাস-মেট্রো-ট্রেন স্টেশনে কানেকশন ভাল। শাকুম্বিতে হোটেল বুক করতে পারেন।
খরচ কেমন
একজনের ৩০ হাজার টাকা।
মালদ্বীপ
৮০ টি ছোট ছোট দ্বীপে সমাহার মালদ্বীপে একবার পা রাখলেই ‘গুড টাইমস’ পাক্কা। নিরিবিলি সাদা বালির সৈকত। চারিদিকে টারকোয়েজ জল। জলের নীচে প্রাণীগুলো ধরা পড়বে খালি চোখে। এতটাই স্বচ্ছ জল। এক্সপার্টরা বলছেন, ভারতীয়দের মালদ্বীপ এয়ারপোর্ট থেকে ৩০ দিনের ট্রাভেল ভিসা দেওয়া হয়। শুধুমাত্র রিটার্ন টিকিট আর পাসপোর্ট দেখালেই হবে। সমুদ্রের ধারে ক্যান্ডেল লাইট ডিনার হোক বা সৈকতে একান্তে সময় কাটানো- দু’য়ের জন্যই মালদ্বীপ পারফেক্ট ডেস্টিনেশন। মালদ্বীপের সংস্কৃতির ঝলক পেতে হলে দেখুন বোডু বেরু নাচ। তাছাড়াও রয়েছে নানারকম ওয়াটার স্পোর্ট।
কীভাবে যাবেন
কোচি বা বেঙ্গালুরু থেকে ফ্লাইটে মালে। তারপর সি-প্লেনে মালদ্বীপের আপনার বেছে নেওয়া রিসর্ট।
এক্সপার্ট টিপ্স
সাধারণের পক্ষে মালদ্বীপ কস্টলি। তবে স্থানীয় খাবারে আস্থা রাখুন। পকেটের কড়ি বাঁচবে।
খরচ কেমন
একজনের খরচ ৬০-৭০ হাজার টাকা।
ভুটান
পাহাড়ের কোলে ঝুলন্ত তাকসাং বৌদ্ধ মঠ, ন’হাজার ফুট ওপরে ক্যাফে, পুনাখা জং, পারো জং, বুদ্ধ পয়েন্ট, ফোবজিখায় ব্ল্যাক নেকড ক্রেন। সবুজে ঘেরা স্বপ্নের দেশ ভুটান। শুধু বাঙালি কেন? দেশ-বিদেশের ট্যুর দেখবেন ভুটানে। পূর্ব হিমালয়ের এই দেশ সবচেয়ে আনন্দের জায়গা হিসেবে পরিচিত। বলা হয়, ‘হ্যাপিয়েস্ট প্লেস অফ দ্য আর্থ’। পাহাড়, মনাস্ট্রি, দুর্গ, সবুজের সমারোহ, সব মিলিয়ে বেড়ানোর দারুণ জায়গা। ভুটান সরকারের নিজস্ব ওয়েবসাইটেই খোঁজ পাবেন বিভিন্ন প্যাকেজের। অ্যাডভেঞ্চার, নেচার, ওয়েলনেস আর কালচার- চাররকমের প্যাকেজ আছে। ভুটানে যেতে ভারতীয়দের পাসপোর্ট লাগে না। পারো এয়ারপোর্টে বা ফুন্টসিলিংয়ে অভিবাসন অফিস থেকে পেয়ে যাবেন সাতদিনের বিশেষ পারমিট।
কীভাবে যাবেন
কলকাতা থেকে ড্রুক এয়ারের ফ্লাইট। নাহলে বাগডোগরা বা হাসিমারা হয়ে যেতে পারেন।
এক্সপার্ট টিপ্স
খরচ কমাতে যোগাযোগ করুন ব্লু পপিজের মতো লোকাল গাইডদের সঙ্গে।
খরচ কেমন
একজনের ৪০ হাজার টাকা।
ইন্দোনেশিয়া
থাইল্যান্ডের ভিড় এড়াতে অনেকের নতুন পছন্দ ইন্দোনেশিয়ার এই সমুদ্রসৈকত। সমুদ্র ছাড়াও এখানে রয়েছে পাহাড়, আগ্নেয়গিরি, মন্দির, যোগা রিট্রিট। শপিং আর নাইটলাইফের জন্যও বিখ্যাত বালি। কম বাজেটেও সহজেই সপ্তাহখানেকের জন্য ঘুরে আসতে পারেন বালি। স্থানীয় এয়ারপোর্ট থেকে কিছু অর্থের বিনিময়ে ৩০ দিনের ভিসা মেলে। হাতে রাখবেন আধার অথবা ভোটার আইডি। ইন্দোনেশিয়ার সংস্কৃতি জানতে হলে জাকার্তায় মিউজিয়াম এবং মনুমেন্টে যেতে পারেন।
কীভাবে যাবেন
সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স বা এয়ার এশিয়ায় বালি। টিকিট আগেভাগে কেটে রাখুন খরচ কমবে।
এক্সপার্ট টিপ্স
মে থেকে সেপ্টেম্বর বালি যাওয়ার ভাল সময়। ক্যামেরা এবং সানস্ক্রিন নিতে ভুলবেন না।
খরচ কেমন
একজনের ৪৫ হাজার টাকা।
মাথায় রাখুন এগুলি-
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.