ছবি: সংগৃহীত
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: চেনা পথের পথিক অনেকেই হয়। তবে অচেনা পথে হাঁটার আনন্দই আলাদা। প্রকৃতির কোলে এমনই এক শান্ত-সুন্দর গ্রাম রঙ্গারুন বা ‘রাজেরু’। শৈলশহর দার্জিলিংয়ের খুব কাছে এর অবস্থান। চারদিক চা বাগানের সবুজে মোড়া। তার মাঝে থাকলে শহরের এই ইঁদুর দৌড়ে ক্লান্তি একেবারে ভুলে যাবেন।
ব্রিটিশ আমলে এখানে গড়ে ওঠে ৪৯.৯৩ হেক্টরের এই চা বাগান৷ এনজেপি থেকে পৌঁছতে সময় লাগে আড়াই-তিন ঘণ্টা। পাহাড়ের কোল কেটে এঁকেবেঁকে চলে গিয়েছে প্রায় ৭০-৭৫ কিলোমিটার পথ৷ তার পর? মেঘ এখানে হাতে ধরা দেয়৷ পিচ বাঁধানো পাহাড়ি পথ ঝুপ করে নেমে আসা মেঘের মায়াজালে হয়ে পড়ে ঝাপসা৷ রঙ্গারুন পৌঁছানোর পথে পাশে ঘন গাছের সারিতে রয়েছে প্রায় ৩০ রকমের ঔষধি গাছপালা৷ কুইনাইন গাছও রয়েছে বিস্তর৷ সঙ্গে রয়েছে কমলার অগুনতি গাছ। শীতের সময় তা ফলে ভরে যায়।
রোদ উঠলে ঝকঝকে আকাশে এখান থেকেই দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘার শিখর৷ আলো ঠিকরে পড়া চূড়া রাঙিয়ে দেয় রঙ্গারুনের রূপ৷ আতিথেয়তার কথা এখানে বলে শেষ করা দায়৷ হোম স্টে, কটেজে রয়েছে আন্তরিকতার ছোঁয়া। অচেনা মানুষগুলোর সঙ্গে একবেলা কথা বললেই মনে হয় যেন কতদিনের চেনা সবাই৷ খাবারের আয়োজনও বাড়ির মতোই পেয়ে যাবেন৷ দার্জিলিং থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরে বলে এখানে দুপুরের খাবার বাইরে সারারও প্রচুর অপশন পেয়ে যাবেন।
রঙ্গারুনের চারদিক স্বপ্নের মতো৷ সেনচেল অভয়ারণ্যের অন্তবর্তী গ্রাম হওয়ার দরুণ ভোরের দিকে বেরিয়ে পড়ুন পথে, বরাতজোরে চোখে পড়তে পারে ওরিয়েন্টাল টার্টল ডাভ, রেড ভেন্টেড বুলবুল, গ্রিন ফ্লেম ব্যাক ও অন্যান্য বিরল প্রজাতির পাখি৷ তবে পাখি দেখার সেরা সময় জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস৷ অভয়ারণ্যে রয়েছে ভাল্লুক, হরিণ, শজারু, এমনকী চিতাও৷ স্থানীয় মানুষের মধ্যে চাক্ষুষ চিতা দেখার অভিজ্ঞতাও রয়েছে, তবে তা বিরল৷
রঙ্গারুন চা-বাগানে হেঁটে যাওয়া যায় অনেকটা পথ, চারদিক ঘন সবুজ, মাঝে হঠাত্ ঘিরে ধরবে মেঘের দল৷ ঝাপসা করে দেবে চারদিক৷ গ্রামের অন্যদিকে পথ ধরে চলে যান রুংদাং খোলায়৷ এপথে গাড়ি যায় না, সুতরাং একমাত্র ভরসা পায়ে হাঁটা, সূর্য ওঠার পরই প্রাতরাশ সেরে বেরিয়ে পড়ুন রুমদাং খোলার পথে৷ পথ শেষে চোখে পড়বে অপরূপ পাহাড়ি ঝোরা৷ ঝোরার জল কাচের মতো ঝকঝকে৷ রুংদাং খোলার সূত্রে রুংদাং নদী৷ রঙ্গারুনের নামও এসেছে নদীর সূত্রেই৷ লেপচা ভাষায় ‘রাঙ্গেরুন’ কথার অর্থ ‘এক বড় নদীর বাঁক’৷ এখানেই রুংদাং নদী সোজার বদলে বাঁকা পথ নেয়, তাই এমন নাম৷ রক ক্লাইম্বিং, মাউন্টেন বাইকিং, ফরেস্ট ক্যাম্পিং, ট্রেকিং, হাইকিং–সবেরই ব্যবস্থা রয়েছে ছোট্ট এই গ্রামে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.