দেবলীনা দে: হাতে মাত্র দু’দিনের ছুটি৷ মন ছুটেছে ঘরের চৌকাঠ পেরিয়ে কাছে কোথাও–মালদহ সফর সেক্ষেত্রে আদর্শ৷ ঐতিহাসিক স্থান পছন্দ করেন যাঁরা, তাঁদের মালদহ নিরাশ করবে না৷ আমের জন্য জগত্বিখ্যাত, তা আমাদের সবার জানা৷ এই ভরা গরমে আম সঙ্গে নিয়েও চলে আসতে পারেন শহরে৷ তবে এর পাশাপাশি পাটজাত দ্রব্য, রেশম সিল্ক এই জেলায় বেশ প্রসিদ্ধ৷
প্রথমদিন গাড়ি রিজার্ভ করে মালদহ শহর থেকে বেশ খানিকটা দূরে আমবাগানের মধ্যে যে জহুরা মন্দির রয়েছে, তা দর্শন করে সফর শুরু করা যেতে পারে৷ এই মন্দির জনসাধারণের জন্য প্রতি মঙ্গল-শনিবার খোলা থাকে৷ এখান থেকে রামকেলির উদ্দেশে রওনা হয়ে, ধুলো উড়িয়ে মেঠোপথে আমবাগানের মধ্য দিয়ে মহানন্দা নদীকে সঙ্গী করে এগিয়ে চলে পথ৷ ইতিহাস মতে, শ্রীচৈতন্যদেব এখানে কিছুদিনের জন্য থেকেছিলেন৷ এরপর গৌড়ের দিকে রওনা দিন৷ শশাঙ্কের সাম্রাজ্যের সময় গৌড় রাজধানী ছিল৷ এখানে প্রথমেই দেখে নিন বড় সোনা মসজিদ, ইট-পাথর দিয়ে তৈরি এই মসজিদের বারোটি দরজা রয়েছে৷ গন্তব্য দাখিল দরওয়াজা বা সেলামি গেট৷ ৭০ ফুট উঁচু ও ১১৪ ফুট চওড়া বিশাল প্রবেশ তোরণটি অতীতে হাভেলি খাস প্রাসাদে প্রবেশ করার প্রধান দ্বার ছিল৷
এবার ফিরোজ মিনার-এর পথে রওনা দিন৷ সুলতান সইফুদ্দিন ফিরোজ শাহ-এর হাতে তৈরি এই মিনার৷ ফিরোজা রঙের টাইল্স লাগানো এই মিনার একেবারে সুদূর দিল্লির কুতুবমিনারের আদলে তৈরি৷ পাঁচতলা উঁচু এই মিনার৷ এরপর কদমরসুল-এর পথে রওনা দিন৷ চতুষ্কোণ গম্বুজ বিশিষ্ট এই গৃহটিতে প্রস্তরের ওপর হজরত মহম্মদের পদচিহ্ন অবস্থিত, তার গা ঘেঁষেই রয়েছে ফতে খাঁ-র সমাধি৷ এর পাশেই রয়েছে লুকোচুরি দরওয়াজা৷ শাহজাহানের পুত্র সুজা এই ৬৫ ফুট উচ্চতাসম্পন্ন দরজাটি নির্মাণ করেন ১৬৫৫ সালে৷ তবে এখানকার বেশ কিছু স্থাপত্য দেখভালের অভাবে ধ্বংসের পথে৷
এবার গন্তব্য চিকা মসজিদ৷ এই মসজিদের অন্দরে বিশালাকার চামচিকা বা বাদুড় থাকার জন্য এই মসজিদের এমন নামকরণ৷ এর ঠিক পাশেই রয়েছে ঘুমটি দরওয়াজা৷ এনামেল টালির দ্বারা অলংকৃত বিশিষ্ট এই তোরণটি গৌড় দুর্গের পূর্বদিকে প্রবেশ পথ ছিল৷ এখানকার আরও এক দ্রষ্টব্য স্থান কোতয়ালি দরওয়াজা, যা কিনা ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে অবস্থিত৷ এক প্রান্তে ভারতের মালদহ জেলা, ঠিক অপরপ্রান্তে বাংলাদেশের রাজশাহি জেলা৷ ফেরার পথে রাস্তার দু’ধারে পরপর তিনটি মসজিদ গুলমন্ত মসজিদ, তাঁতিপাড়া মসজিদ এবং লোটন মসজিদ দেখে নিন৷
দ্বিতীয় দিন প্রথমে দেখে নিন পাণ্ডুয়ায় একলাখি সমাধি সৌধ৷ হিন্দু রাজা গণেশ তাঁর ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত পুত্র যদুর জন্য এটি নির্মাণ করেছিলেন৷ সমাধি সৌধের ভিতরে জালালউদ্দিন, তাঁর পত্নী এবং পুত্র সমাধিস্থ রয়েছেন৷ এর খুব কাছেই রয়েছে কুতুবশাহি মসজিদ, যা ছোট সোনা মসজিদরূপে পরিচিত৷ এবার গন্থব্য আদিনা৷ সিকন্দর শাহ কর্তৃক নির্মিত আদিনা মসজিদ বাংলার স্থাপত্যকলার বৃহত্তর নিদর্শন৷ কথিত আছে, প্রায় ২৫,০০০ জন একসঙ্গে নমাজ পড়তে পারে৷ এরপর চলে যান আদিনার ‘ডিয়ার পার্ক’, এখানে হরিণ, নীলগাই, সম্বরের সঙ্গে পরিযায়ী পাখির দেখা মিলবে৷
কী খাবেন
মালদহ কেবল আমের জন্য নয়, দু’টি ডাকসাইটে মিষ্টির জন্যও প্রসিদ্ধ৷ রসকদম এবং কনসার্ট–এই দুই মিষ্টি অবশ্যই খাবেন৷ আর সঙ্গে আমসত্ত্বের খাঁটি স্বাদ পেতে ভুলবেন না৷
কীভাবে যাবেন
শিয়ালদহ থেকে এনজেপিগামী প্রায় সব ট্রেন মালদহ স্টেশন ছুঁয়ে যায়৷
কোথায় থাকবেন
পর্যটন বিভাগের ‘মালদহ ট্যুরিস্ট লজ’৷ এছাড়াও প্রচুর বেসরকারি হোটেল রয়েছে এখানে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.