দেবব্রত মণ্ডল, বারুইপুর: করোনা ভাইরাসের কারণে সবথেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে পর্যটন শিল্পে। এর প্রভাব পড়েছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা তথা সুন্দরবনের পর্যটন স্থলগুলিতেও। বিশেষ করে যখন চিনে প্রথম করোনাভইরাস সংক্রমণ হল তখন থেকে সুন্দরবনের পর্যটন ব্যবসায় ক্ষতি শুরু। আর তারপর সুপার সাইক্লোন আমফানের দাপটে কার্যত শেষ হয়ে গেল পর্যটক ব্যবসা। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সুন্দরবনের পর্যটন সাফারির স্থানগুলি। সবকিছু মেরামতি করে শীতের আগে পুরোদমে পর্যটন চালু করা সম্ভব কি না তা নিয়েই দেখা দিয়েছে সংশয়। তবে পুজোর পর থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার দ্রুত কাজ চলছে।
সুন্দরবন হল বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ জঙ্গল। প্রতি বছর এর বিদেশ থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ সুন্দরবনের প্রকৃতি এবং রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার দেখতে উপস্থিত হন। শুধু সুন্দরবন নয়, তার আশেপাশে যে সমস্ত পর্যটনস্থলগুলি আছে, সেগুলোতেও ভিড় উপচে পড়ে বিভিন্ন মরশুমে। একদিকে যেমন সুন্দরবন অন্যদিকে তেমন বকখালি, ডায়মন্ড হারবার, হেনরি আইল্যান্ড, সাগর সমস্ত জায়গাতে ভিড় জমান পর্যটকরা। কিন্তু আমফানের দাপটে প্রবলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এইসব পর্যটনস্থল গুলি। বনদপ্তরের পরিসংখ্যান বলছে, দর্শনার্থীদের কাছে জনপ্রিয় সুন্দরবনের বেশ কিছু পর্যটনস্থল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঝড়খালি চিড়িয়াখানাতেও ক্ষতি হয়েছে এই ঝড়ে।
শুধু জঙ্গল লাগোয়া স্থানগুলিতে ক্ষতি হয়েছে এমন নয়। বেশ কিছু হোটেল, হোম-স্টে, লজও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কারওর ঘরের চাল উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছে আমফান, কোথাও ঘর মিশে গিয়েছে মাটির সঙ্গে। ঝড়ের দাপট সইতে না পেরে একের পর এক গাছ ভেঙে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ম্যানগ্রোভ অরণ্য। প্রবল ঝড় আর জলোচ্ছ্বাসের কারণে সুন্দরবনের বহু দ্বীপ এখনও জলের তলায়। বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু হলেও কবে শেষ হবে বলতে পারছে না কেউই। ঝড়ের দাপটে সজনেখালি, সুধান্যখালি, নেতিধোপানি, ঝিলা, চাঁদখালী, বুড়িরদাবড়ি সবই ক্ষতিগ্রস্ত। বুলবুল ঝড়ের সময় এমনিতেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল নেতিধোপানি টুরিস্ট স্পট। জেটি ভেঙে যাওয়ার কারণে সেটি মেরামতি করা সম্ভব হয়নি এতদিনেও। তবে বুলবুল পরবর্তী পরিস্থিতিতে কিছুটা মেরামতি করা সম্ভব হয়েছিল বুড়িরডাবরি ও ঝিলার জঙ্গলকে। তারপর আঘাত হানল ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় আমফান। এর ফলে ব্যাপকভাবে মার খাচ্ছে পর্যটন শিল্প।
বিশেষ করে বর্ষার ইলিশ উৎসব বা পুজোর ছুটি কিংবা শীতের ভ্রমণ সবই এবার জলে যেতে বসেছে। এর ফলে একদিকে যেমন মনখারাপ ভ্রমণপিপাসুদের, অন্যদিকে সমস্যায় পড়েছেন পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত সুন্দরবনের কয়েক হাজার মানুষ। সুন্দরবনের পর্যটন ব্যবসায়ী শংকর দাস, সৌমিত্র বারিক, রাজু প্রামানিকরা বলেন, ‘করোনার কারণে ফেব্রুয়ারির পর থেকে সেইভাবে সুন্দরবনের কোন ব্যবসা করা যায়নি। ভাবছিলাম পুজোর পর থেকে কিছু কিছু করে হয়তো ট্যুর চালু হবে। কিন্তু সুন্দরবনের যা অবস্থা তাতে কবে এই ব্যবসা দাঁড় করানো যাবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। অন্যদিকে ঝড়ের দাপটে ভুটভুটি ও লঞ্চ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবমিলিয়ে ভয়ঙ্কর সমস্যার মুখে সুন্দরবন তথা জেলার পর্যটন ব্যবসা। ঝড়ের দাপটে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ জঙ্গল যেমন ক্ষতি হয়েছে, তেমনই বহু জলযান মুখ থুবড়ে পড়ে আছে নদীর পাড়ে। সেগুলি এখনও মেরামতি করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। এগুলি কবে মেরামতি করা যাবে তাও বুঝতে পারছেন না সেই সমস্ত জলযানের মালিকরা। ফলে জলযান মেরামতি করে না উঠতে পারলে সুন্দরবনের পর্যটন ব্যবসা পুরোপুরি মার খাবে।
তবে পর্যটন মরশুম শুরুর থেকে পর্যটকরা সুন্দরবনকে নতুন ভাবে উপভোগ করতে পারেন তার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ব্যাঘ্র প্রকল্পের আধিকারিকরা। এ বিষয়ে ব্যাঘ্র প্রকল্পের ফিল্ড ডিরেক্টর ডক্টর সুধির কুমার দাস বলেন, ‘বেশকিছু জেটিঘাট দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুটি ক্যাম্পেও জল ঢুকে গিয়েছিল। যে সমস্ত সোলার লাইটগুলো ছিল আলো দেওয়ার জন্য সেগুলো উড়ে চলে গেছে। সুন্দরবনের যে সমস্ত ক্ষতি সেগুলোর দ্রুত মেরামতি করার চেষ্টা চলছে। যতটা দ্রুত সম্ভব কাজ করে পর্যটকদের জন্য সুন্দরবনকে নতুনভাবে খুলে দিতে চেষ্টা করছি।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.