সুব্রত বিশ্বাস: করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের (Corona Third Wave) চোখরাঙানি থাকলেও বাংলার পর্যটকদের একাংশ পুজোতে ঘরে থাকতে চাইছে না। শিলিগুড়ির রোদ ঝলমলে আকাশে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাচ্ছে। এমন সময় কি আর চার দেওয়ালের অন্দরে বসে থাকা যায়? এক্কেবারেই না! গতবার কার্যত ঘরবন্দি দশা ছিল পায়ে সরষে লাগানো বাঙালির। এবার অবস্থা গতবারের থেকে ভাল। তাই এবার পুজোয় পর্যটকদের টানছে পাহাড়।
অন্য রাজ্যে যেভাবে করোনা (Coronavirus) আতঙ্ক ছড়িয়েছে, সেই তুলনায় বাংলায় প্রভাব কম। সাবধানতা মেনেই তাই ভিনরাজ্যে পা দিতে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে না বাঙালি। বরং রাজ্যেরই বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে তুলনামূলক আগ্রহ বেশি। পর্যটন ব্যবসায়ী ও পূর্ব রেলের দেওয়া তথ্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে এই তথ্য ।
পঞ্চমী ও ষষ্ঠী মূলত ভ্রমণার্থীদের যাত্রার দিন। নিউ জলপাইগুড়িগামী ট্রেনগুলিতে জায়গা অনেক আগে থেকেই পরিপূর্ণ। দার্জিলিং এক্সপ্রেস, সরাইঘাট এক্সপ্রেস ও কামরূপ এক্সপ্রেসে পঞ্চমীর দিন ওয়েটিং লিস্ট একশো থেকে দেড়শো ছাড়িয়ে গিয়েছে। ষষ্ঠীর দিন দু’শোর উপরে। টিকিট না পেয়ে হতাশ অনেকেই।
পুজোর মুহূর্তে শেষ চেষ্টা করতে তৎকালের শরণপন্ন হবেন অনেকে। কুঁদঘাটের বিপিন দাস বলেন, “সরাইঘাট এক্সপ্রেসের টিকিট কাটলেও অনেকটা ওয়েটিং রয়েছি। কনফার্ম না হলে তৎকালে শেষ চেষ্টা করব সেই সময়।” পাহাড়ের দিকে জনস্রোত থাকলেও মুম্বই ও দক্ষিণ ভারতের দিকে টিকিটের মোটেই চাহিদা নেই পুজোর (Durga Puja 2021) সময়। গীতাঞ্জলি এক্সপ্রেস, করমণ্ডল এক্সপ্রেস, চেন্নাই মেলে পুজোর দিনগুলিতে টিকিট পাওয়া যাচ্ছে। স্লিপার ও এসি প্রতি ক্লাসেই টিকিট পাওয়া যাওয়ায় স্পষ্ট, যে যাত্রীদের চাহিদা নেই সেদিকের প্রতি।
ভিন রাজ্যে গিয়ে করোনাকে আমন্ত্রণ করে নিয়ে আসতে চান না অনেকেই। পায়রাডাঙার বাসিন্দা অঞ্জলি বারুই জানান, ছেলে সেন্ট্রাল রেলের কর্মী। মুম্বইতে থাকে। পুজোয় বরাবর ছেলের কাছে গেলেও গতবার যাননি, এবারও ওমুখো হবেন না। কোভিডের (COVID-19) ভয়ে। ওদিকে সংক্রমণ বেশি বলে তিনি সেদিক এড়িয়ে চলছেন এবার। তবে দার্জিলিং-এও সংক্রমণ বাড়ায় চিন্তিত পর্যটন ব্যবসায়ে যুক্তরা।
উত্তরবঙ্গ পর্যটন সংগঠনের কর্তা সম্রাট সান্যাল বলেন, “সবচেয়ে বেশি চাহিদা হোম স্টে-তে। যেখানে বেশি ভিড় নেই। নিজেদের মতো করে থাকতে পারবেন পর্যটকরা। করোনা নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা করতে হচ্ছে না সেখানে। তবে একটা বিষয় ভাবাচ্ছে। দার্জিলিং-এ সংক্রমণ বাড়ছে।
রাজাধানী দিল্লির দিকে এবার পুজোয় বেশ কিছু মানুষ যে এ রাজ্য থেকে যাচ্ছেন তা স্পষ্ট রেলের দেওয়া তথ্যে। ভিন রাজ্যগুলির ক্ষেত্রে দিল্লিগামী ট্রেনে পুজোর সময় ভিড় বেশি। রাজধানী এক্সপ্রেসে ওই দিনগুলিতে টিকিট পাওয়া গেলেও কালকা ও পূর্বা এক্সপ্রেসে ওয়েটিং লিস্ট দীর্ঘ। দ্বিতীয় শ্রেণিতে ওয়েটিং লিস্ট প্রায় একশো ছুঁই ছুঁই অবস্থা। আবার দেরাদুনের দিকেও তেমন চাহিদা নেই তা বোঝা যায় টিকিট পাওয়া যাওয়ায়। দুন এক্সপ্রেসের দ্বিতীয় শ্রেণিতে টিকিট পাওয়া গেলেও এসিতে ওয়েটিং লিস্ট নাতিদীর্ঘ।
গত বছরের তুলনায় পরিস্থিতি বদলেছে। ফলে মানুষ ঘর ছেড়ে বাইরে বেরোতে চাইছেন। বিশেষভাবে পুজোর দিনগুলিতে। পাহাড়ে যাওয়ার ইচ্ছা বাঙালির বরাবর, এবারও তার খামতি নেই। উত্তরবঙ্গগামী ট্রেনের টিকিটের চাহিদা তুঙ্গে। পরিস্থিতি তেমন হলে পুজোর সময় ওই দিকের ট্রেনগুলিতে বাড়তি কামরা জুড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হতে পারে বলে রেল সূত্রে জানানো হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.