প্রসূন চক্রবর্তী: নেপাল মানেই যে নামগুলো আগে মাথায় আসে, তা হল কাঠমান্ডু, পোখরা আর রয়াল চিতোয়ান ন্যাশনাল পার্ক৷ বুদ্ধের জন্মস্থান হিসাবে লুম্বিনী৷ কিন্তু এ নেপাল একেবারে অন্য নেপাল৷ একদমই অচেনা৷ পূর্ব নেপাল৷ পূর্ব নেপালের মেচি অঞ্চল হোক প্রথম গন্তব্য৷ মেচি অঞ্চল গঠন করা হয়েছে ঝাপা, ইলম, পাঁচথার আর তাপলিজুং এই চারটি জেলা নিয়ে৷ নেপাল সরকারের ‘মেচি হিল এরিয়া ট্যুরিজম প্রমোশনাল কমিটির’ ব্যবস্থাপনায় আমরা চলেছি ইলমের পথে৷ ইলম হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে দার্জিলিং লাগোয়া নেপালের একটি জেলা৷ শিলিগুড়ি থেকে নেপাল ঢোকার রাস্তা কাঁকড়াভিটা ৩০ কিমি৷
লোকালয় পার হতেই সবুজ চা-বাগানে ঢাকা রাস্তার দুই দিক৷ অসাধারণ যাত্রাপথ৷ ঘণ্টাখানেক চলার পর মধ্যাহ্ন ভোজনের বিরতি কানিয়ামে৷ কানিয়াম ইলম জেলার সব থেকে বড় এবং সবচেয়ে সুন্দর চা বাগান৷ এই বাগানের উন্নতমানের অর্গানিক চা উৎপাদন হয়৷ যা রফতানি করা হয় ইউরোপে৷ এখান থেকে কিছুটা এগিয়েই লাভদারা, চা গাছ দিয়ে ঢাকা একটি ছোট্ট টিলা৷ তার উপর ভিউপয়েন্ট৷ এই পথেই কিছুটা এগিয়ে ডানদিকে বাঁক নিয়ে ইলমের আরেকটা ট্যুরিস্ট স্পট আন্তু৷ এখান থেকে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত অসাধারণ৷ এখানে একটি পোখরি বা লেক আছে৷ বোটিংও করা যায়৷ থাকার জন্য হোম স্টে-র ব্যবস্থা আছে৷
সন্ধেতে পৌঁছলাম ইলমবাজারে৷ এখানে অনেকগুলি ভাল হোটেল এবং গেস্টহাউস আছে৷ ইলমবাজারের দ্রষ্টব্যের মধ্যে প্রথমেই দেখা হল, ইলমের প্রথম চা ফ্যাক্টরি৷ যা আজও হেরিটেজ হিসাবে সংরক্ষিত আছে৷ সেখান থেকে প্রায় আট কিলোমিটার গিয়ে আমরা হাজির হলাম স্বেতীদেবীর মন্দির৷ প্রায় সাড়ে তিনশো সিঁড়ি নিচে নেমে স্বেতীদেবীর মন্দির এবং গুহা৷
মন্দির থেকে আমাদের যাত্রা শুরু হল মায়পোখরির রাস্তায়৷ রাস্তা বেশ দুর্গম৷ পাহাড়ের মাথায় জঙ্গলের মাঝখানে এক সুন্দর জলাধার৷ পাইন, ফার গাছ দিয়ে ঘেরা মায়াপোখরি৷ মায়াপোখরি থেকে ট্রেক করে পশ্চিমবঙ্গের সান্দাকফু পৌঁছানো সম্ভব৷ দেখে নিন কিউই ফলের খেতও৷
এবার আমাদের যাত্রা পাঁচথার জেলার ফিদিমের পথে৷ ইলম থেকে ফিদিম-এর দূরত্ব ৬০ কিমি৷ পথের মাঝখানে দেখে নিলাম ‘সিলুটি’ ভিউপয়েন্ট৷ এখান থেকে আকাশ পরিষ্কার থাকলে একশো আশি ডিগ্রি ভিউয়ে এভারেস্ট এবং হিমালয়ের অন্যান্য শৃঙ্গমালার সারি দেখতে পাওয়া যায়৷ এখান থেকে রওনা দিয়ে আমরা পৌঁছে গেলাম তিনটি পাহাড় নিয়ে তৈরি জেলা সদর ফিদিমে৷
পরের গন্তব্য তাপলিজুং৷ মাঝখানে জোরপোখরি দেখে নিলাম৷ ফিদিম থেকে তাপলিজুং ৯৩ কিমি৷ গাড়িভাড়া ৩,০০০ টাকা৷ পথে পড়ল নেপালের রাজাদের এক দুর্গ এবং কৃষ্ণখোলা নদী৷ তাপলিজুং থেকে সরাসরি কাঞ্চনজঙ্ঘা এবং কুম্ভকর্ণ রেঞ্জ দেখা যায়৷ আমরা এই শহরে পৌঁছতেই শহরের অধিবাসীরা তাঁদের চিরাচরিত পোশাক এবং রীতি মেনে নাচ-গান করে আমাদের অভ্যার্থনা জানাল৷
পরদিন ভোর চারটের সময় আমাদের যাত্রা শুরু হল পাথিবারা দেবীর উদ্দেশে৷ রাস্তা ভীষণরকমই দুর্গম৷ তারপর শুরু হল ট্রেকিং যা সোজা উঠে গিয়েছে পাথিবারা দেবীর মন্দিরে৷ মানুষের ভক্তি এবং প্রকৃতির সৌন্দর্য না দেখলে বিশ্বাস হবে না৷ পাথিবারা দেবী–দেবী দুর্গারই এক রূপ৷ তাপলিজুং-এ পাহাড়ের মাথায় একটা ছোট্ট এয়ারপোর্ট আছে, নাম সুকেতার এয়ারপোর্ট যা কাঠমান্ডু এবং বীরনগরের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে৷
কীভাবে যাবেন-
শিলিগুড়ি এবং এনজেপি থেকে নেপালের সব থেকে কাছের গেট কাঁকড়াভিটা৷ শিলিগুড়ি থেকে প্রচুর গাড়ি এবং বাস যাচ্ছে কাঁকড়াভিটায়৷ এখানে ইমিগ্রেশন অফিস এবং টুরিস্ট অফিস আছে৷ ভারতীয়দের নেপালে প্রবেশ করতে ভিসার প্রয়োজন হয় না৷ যে কোনও একটি পরিচয়পত্র থাকলেই হবে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.