সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: একটা বিস্ফোরণ৷ পাথরের খাঁজ কেটে বেরিয়ে এল গিরিখাত৷ গিরিখাতকে সিক্ত করা ঝরণা লালমাটির বুকে তৈরি করল হ্রদ – পোশাকি নাম, মার্বেল লেক৷ হ্যাঁ, রুক্ষ পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ের মাথায় এমন এক হ্রদ তো প্রকৃতিরই দান৷ এর চেহারা দেখে অনেকেই তুলনা করছেন আমেরিকা-কানাডা সীমান্তে ‘গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন’-এর সঙ্গে৷ এই মার্বেল লেকই পুরুলিয়ার পর্যটন মানচিত্রকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে চলেছে৷
অযোধ্যা হিলটপ থেকে বামনি ফলস যাওয়ার পথে ডান দিকে কিছুটা গেলেই পাহাড়ের কোলে এই জলাশয়। এমনিতে মার্বেল লেক বলে পরিচিত হলেও, আরও নাম আছে এর। কেউ বলেন পাতাল ড্যাম৷ আবার এর জলরাশির ঘন নীল রঙের জন্য নীল ড্যাম নামটিও আছে৷ পৃথিবীর চতুর্থ সর্ববৃহৎ জলবিদ্যুৎ প্রকল্প পুরুলিয়া পাম্প স্টোরেজ প্রোজেক্টের কাজের জন্য বিস্ফোরণ করে পাথর ভাঙতে গিয়ে সেই পাথরের খাঁজে এই লেকটি তৈরি হয়৷ যা অযোধ্যা পাহাড়ের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন ক্ষেত্র। তাকেই আরও সাজিয়েগুছিয়ে রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রে অযোধ্যা পাহাড়ের পাশে রাখতে চায় আরও পর্যটক টানার লক্ষ্য পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের।
আমেরিকার অ্যারিজোনার কলোরাডো নদী ঘিরে ‘গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন’–এর মত অযোধ্যা পাহাড়ের মার্বেল লেক অত দীর্ঘ, বিস্তৃত গভীর না হলেও এ যেন তারই ক্ষুদ্র সংস্করণ৷ গভীর খাদে নীল জলরাশি। সেইসঙ্গে পাথরের খাঁজ। তার পাশে লম্বা টানা পাহাড়ে ঘন সবুজ জঙ্গল। চেহারায় অনেকটা ছবিতে দেখা ‘গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন’ কেই মনে করায় বাঙালি পর্যটকদের। তাই এখানে ভিড় উপচে পড়ে। সেই কথা মাথায় রেখেই এই মার্বেল লেককে আরও সাজানোর পরিকল্পনা নিয়েছে প্রশাসন।
জেলাশাসক রাহুল মজুমদারের কথায়, ‘অযোধ্যা পাহাড়ের এই সাইট সিয়িং আমরা আরও সাজিয়েগুছিয়ে তুলে ধরব বলে পরিকল্পনা নিয়েছি। সেইসঙ্গে এই জলাশয়ে থাকা জলকে পরিশ্রুত করে পানীয় জল হিসাবে কাজে লাগানো যায় কিনা, সেটাও আমরা খতিয়ে দেখছি।’ সেইসঙ্গে এই মার্বেল লেকের জলকে পাইপ লাইনের সাহায্যে পানীয় জল সরবরাহের জন্য কাজে লাগানো যায় কীভাবে, সেই চিন্তাভাবনাও শুরু হয়েছে জেলা প্রশাসনের অন্দরে। গত শনিবার পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের জনসংযোগ কর্মসূচি ‘গো টু ভিলেজ’তে মার্বেল লেক পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলে তৎক্ষণাৎ এই পরিকল্পনা নেন পুরুলিয়ার জেলাশাসক রাহুল মজুমদার।
তাই জেলাশাসকের নির্দেশে আগামী সপ্তাহে জনস্বাস্থ্য কারিগরী দপ্তরের টিম এই এলাকা পরিদর্শন করবে। তারপর তাঁদের দেওয়া রিপোর্টের ভিত্তিতেই জল প্রকল্পের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন। তবে মার্বেল লেকের পাশে ক্যাফেটেরিয়া ও ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণের সিদ্ধান্ত প্রায় নিয়ে নিয়েছে জেলা প্রশাসন।ক্যাফেটেরিয়া নির্মানের পর তা স্বনির্ভর গোষ্ঠী বা কোনও বেসরকারি সংস্থাকে লিজ দিয়ে তা চালানোর ভাবনা রয়েছে প্রশাসনের। এখান থেকে পাইপলাইনের সাহায্যে পাহাড়ের মানুষকে পরিশ্রুত জল দেওয়া গেলে রুখা পাহাড়ে জলকষ্ট অনেকটাই মিটবে৷ যা পাহাড়ে অন্যতম মেগা প্রোজেক্ট হবে। তাই মার্বেল লেককে ঘিরে দ্বিমুখী প্রকল্পের জন্য পা বাড়িয়েছে প্রশাসন।
ছবি: অমিত সিং দেও৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.