সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: স্টেশনে ঘোষণাটা হতেই শুরু হয়ে যায় যুদ্ধকালীন তৎপরতা। কেউ শাড়ি গুটিয়ে, কেউ ব্যাগটা বুকের সামনে নিয়ে পোজিশন নিয়ে নেন। আশেপাশের প্রতিদ্বন্দ্বীদের দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নেন। আঁচ করে নেন তাঁর রণ নীতি। তাঁকে মাত দিয়েই বাজপাখির মতো ছোঁ করে ধরে ফেলতে হবে রডটা। তারপর এক চান্সে উঠে যেতে হবে লোহার কামরাটায়। এমনটা হত, এমনটাই হয় আর এমনটাই হবে। এভাবেই চলবে ট্রেনের জীবন। যাত্রী নিত্যকার হোক বা আনকোরা, তাঁর সঙ্গে একটা সম্পর্ক গড়েই ওঠে এই লোহার যানের। সম্পর্ক যাত্রীদেরও তৈরি হয়। যা সারাজীবন স্মৃতির ভান্ডারে থেকে যায়।
[সাধারণতন্ত্র দিবসের অফার, সস্তায় আরও বেশি 4G ডেটা দেবে Reliance Jio]
১) পাশের মানুষের নাক ডাকার শব্দ শোনেননি এমন রেলযাত্রী খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। শত চিৎকারের মধ্যেও যখন-তখন, যেখানে-সেখানে ঘুমিয়ে পড়ার দক্ষতা কয়েকজনের থাকে। আবার অনেকে এর জন্য হয়তো একাধিকবার আপনার কাঁধে আশ্রয়ও পেয়ে গিয়েছেন।
২) একসঙ্গে যেতে যেতে অনেকেই পরিচিত হয়ে যান। অনাত্মীয়র সঙ্গেই গভীর আত্মীয়তা তৈরি হয়ে যায়। তৈরি হয় দল। আর এই দলে কয়েকজন বয়স্ক মানুষও থাকেন। রোজই যারা সরকার ও সিস্টেমের ষষ্ঠীপুজো করে থাকেন।
৩) কিছু মানুষের যেন সবসময় খিদে পায়। ট্রেনে যাই ওঠে চট করে কিনে ফেলেন। নিমেষে তা সাবাড় হয়ে যায়। আবার যেন অপেক্ষায় থাকেন পরের হকারটি চিপস কিংবা ঘুগনি নিয়ে কখন উঠবেন।
৪) লোকাল ট্রেনে যাঁরা যাতায়াত করেন, কিশোর-কণ্ঠী কিংবা শানু-কণ্ঠীদের কথা জানা আছে নিশ্চয়ই। যাত্রাপথে একটু গান শুনতে কার না ভাল লাগে? অনেকে আবার নিজেদের মধ্যেও কোরাসে গান গেয়ে থাকেন। লোকগান, কীর্তনের পালাও চলে দিনান্তে।
৫) বনগাঁ হোক বা হাবড়া। কিংবা হোক সোনারপুর, বজবজ লোকাল। ট্রেনে ঝগড়া নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। বিশেষ করে মহিলাদের কামরায়। প্রচলিত রয়েছে, চোখ বন্ধ করে ট্রেনের পাশ দিয়ে গেলেও মহিলা কামরাটি অনায়াসে চেনা যায়। অবশ্যই চিৎকারের সৌজন্যে।
৬) একান্নবর্তী পরিবার যদি ট্রেনে উঠে যায় তাহলে তো আর কথাই নেই। রাম-শ্যাম-যদু-মধুর ভালবাসার অত্যাচার আপনাকেও সহ্য করতে হবে। সবচেয়ে ছোটটিকে জানলার সিটটি ছাড়তে হবে। একটি আবার না বলে কয়ে কোলই বসে পড়বে। তাঁদের পরিবার-প্রীতির ঠেলায় আপনার কান ঝালাপালা হয়ে যেতে বাধ্য। তবে কোথাও না কোথাও ভালও লাগবে। কারণ এভাবে হয়তো আপনিও ছোটবেলায় পরিবারের সঙ্গে সওয়ার হতেন ট্রেনে।
[এই বিউটি প্রোডাক্টের ব্যবহারে কমতে পারে সন্তানধারণের ক্ষমতা!]
৭) এমন কয়েকজন যাত্রীও থাকবেন, পৃথিবী রসাতলে গেলেও যাঁদের চোখেমুখে কোনও পরিবর্তনের রেখা দেখা যায় না। খবরের কাগজ, পড়ার বই কিংবা মোবাইলে মুখ গুজে থাকাই যাঁদের সবচেয়ে পছন্দের।
৮) এমন কিছু মানুষ থাকেন যাঁদের ট্রেনের গেটটি বড় পছন্দের থাকে। শত ভিড় থাকলেও এঁরা গেট আটকেই দাঁড়িয়ে থাকবেন। আবার ট্রেন ফাঁকা থাকলেও গেটেই ঝুলবেন।
৯) ট্রেনে হাত সাফাইয়ের অভ্যাসও রয়েছে অনেকের। সুযোগ পেলেই সরকারি সম্পত্তি সরিয়ে নিতে দ্বিধা করেন না কেউ কেউ। পাখা কিংবা সিট খুলে নেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
১০) অনেকেই বিজ্ঞাপনের আদর্শ জায়গা লোকাল ট্রেনকেই মনে করেন। স্বল্প সঞ্চয়ে কীভাবে বেশি রোজগার করা যায় কিংবা তন্ত্র বলে কীভাবে প্রিয়জনকে বশে আনা যায়, সে বিদ্যার বিজ্ঞাপন চোখে নিশ্চয়ই পড়েছে।
চেনা এই সুরেই ছন্দ মিলিয়ে চলে জীবন। ঝমঝমিয়ে চলে রেলগাড়িটি। গন্তব্যে পৌঁছে দেয় লক্ষ লক্ষ মানুষকে। আর উপহার দিয়ে যায় একরাশ স্মৃতি। যা এভাবেই মনের মণিকোঠায় থেকে যায়।
[এবার থেকে নিজের মৃত্যুর দিনক্ষণ আপনি জানতে পারবেন আগেই]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.