বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি : সমরেশ মজুমদার স্মারক সম্মান পাচ্ছেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। ‘সমরেশ মজুমদার মেমোরিয়াল সোসাইটি’-র তরফে ২৬ জানুয়ারি কলকাতা বইমেলায় ওই সম্মান জানানো হবে। এখানেই শেষ নয়। ডুয়ার্সে নতুন আঙ্গিকে সাহিত্য পর্যটন বিকাশের লক্ষ্যে সোসাইটি গয়েরকাটায় বঙ্গবিভূষণ সমরেশবাবুর বাড়ি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে মিউজিয়াম তৈরির আবেদন জানাতে নবান্নের দ্বারস্থ হতে চলেছে। যেখানে সমরেশবাবুর সাহিত্য জীবনের বিভিন্ন আকড় সংরক্ষিত থাকবে। গবেষকেরা ভীষণভাবে উপকৃত হবেন। সেই দাবি ইতিমধ্যে উত্তরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উঠেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা সই সংগ্রহ অভিযানে নেমেছেন। বইমেলায় সেই গণস্বাক্ষর সংবলিত স্মারকলিপি সমরেশ মজুমদার মেমোরিয়াল সোসাইটির কর্তাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। সোসাইটি সেটা রাজ্য সরকারের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করবে।
প্রয়াত সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদারের কন্যা দোয়েল মজুমদার বলেন, “বাবার নামে যে সোসাইটি গড়ে তোলা হয়েছে সেখান থেকে প্রতি বছর একজনকে স্মারক সম্মান জানানো হবে। এবার পাচ্ছেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। পরের বছর থেকে উত্তরের প্রতিভাবানদের সম্মান জানানো এবং আর্থিক সাহায্য করা হবে।” তিনি জানান, ডুয়ার্সের গয়েরকাটায় যে বাড়িতে সমরেশবাবুর শৈশব কেটেছে বিভিন্ন মহল থেকে সেটা সংরক্ষণ করে মিউজিয়াম তৈরির দাবি উঠেছে। সেটা হলে ডুয়ার্সে নতুন আঙ্গিকের সাহিত্য পর্যটনের দরজা খুলে যাবে। গয়েরকাটা বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গিয়েছে, সমরেশবাবুর মৃত্যুর পর থেকে চা বাগান এলাকার বাড়ি দর্শনীয় স্থান হয়েছে। যে পর্যটকরা মধুবণী ও খুট্টিমারি জঙ্গলে বেড়াতে আসেন তারা প্রয়াত সাহিত্যিকের বাসভবন একবারের জন্য দেখে যাওয়ার কথা ভোলেন না। দোয়েলদেবী বলেন, “সাধারণ মানুষের দাবি নিয়ে সোসাইটির পক্ষ থেকে চা বাগান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব। কিন্তু সেটা তৈরি করলেই তো হবে না। প্রয়োজন রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা। ওই কারণে রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা বলা জরুরি।” সোসাইটির উদ্যোগের কথা শুনে খুশি উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদের ভাইস চেয়ারম্যান মৃদুল গোস্বামী। তিনি বলেন, “খুবই ভালো উদ্যোগ। এজন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে।”
কালজয়ী উপন্যাস ‘কালবেলা’, ‘কালপুরুষ’, ‘উত্তরাধিকার’-এর স্রোষ্টা সমরেশ মজুমদারের লেখনির যাদুতে ‘স্বর্গছেড়া’ চা বাগান নামে বিশ্বে পরিচিত হয়েছে গয়েরকাটা চা বাগান। তার বাবা কৃষ্ণদাস মজুমদার ওই চা বাগানের একজন বাবু ছিলেন। উপন্যাসে সরিত শেখরের চরিত্র বাবাকে নিয়েই নির্মাণ করেন সমরেশবাবু। এখন যেখানে ‘গয়েরকাটা রিডিং ক্লাব’ সেখানেই এক সময় ছিল প্রাইমারি স্কুল। ওখানে লেখাপড়া শুরু অর্জুন গোয়েন্দা স্রোষ্টার। ১৯৪২ সালে গয়েরকাটায় জন্ম। এরপর জলপাইগুড়ি হয়ে কলকাতায় পাড়ি জমালেও সাহিত্যের পরতে পরতে আংরাভাসা নদী, চা বাগান, এখানকার জনজীবনের কথা জায়গা করে নিয়েছে। গয়েরকাটার বাসিন্দা সমরেশবাবুর এক সময়ের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ কথাশিল্পী, অভিনেতা কানাই চট্টোপাধ্যায় জানান, বিশ্বের দরবারে গয়েরকাটা সহ গোটা ডুয়ার্সকে উপন্যাসের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন সমরেশবাবু। শেষ জীবনে এখানে ছোট্ট একটি বড়ি তৈরির খুব ইচ্ছে ছিল। ফোন করে জানতে চাইতেন জমি দেখেছি কিনা। অসহায় চা শ্রমিকদের জন্য ‘মানবিক’ নামে বৃদ্ধাশ্রম গড়ে তুলতে চেয়ে জমির খোঁজ করতে বলেছিলেন। কানাইবাবু বলেন, “আমরা সমরেশবাবুর বাসভবন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে মিউজিয়াম তৈরির দাবিতে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযানে নেমেছি। ওই দাবিপত্র নবান্নে পৌঁছে দিতে সমরেশ মজুমদার মেমোরিয়াল সোসাইটি’-র হাতে তুলে দেব।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.