Advertisement
Advertisement

যে মেলা দেখতে হাজির হন দেবতারাও!

জনশ্রুতি, মেলার শুরুতে সাধারণ মানুষের ভিড়ে মিশে গিয়ে পুণ্যস্নানে অংশ নেন দেবতারাও!

Pushkar Fair Of Rajasthan: The Annual Get Together Of Gods And Humans
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:October 20, 2016 8:14 pm
  • Updated:September 8, 2020 1:27 pm  

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পুরাণ বলেছে বটে, পুরী-বদ্রীনাথ-দ্বারকা-রামেশ্বরম বাদে এই ধামই ভারততীর্থে পবিত্রতর! তার পরেও বছরের বেশির ভাগ সময়টা নিঃসঙ্গতার অধিকার নিয়েই পড়ে থাকে রাজস্থানের পুষ্কর। মন্দিরে একা জেগে থাকেন পৃথিবীর স্রষ্টা ব্রহ্মা। শুধু বছরের একটিমাত্র সময়ে জমজমাট হয়ে ওঠে পুষ্কর। মেলা বসে সেখানে। যে মেলা দেখতে হাজির হন তেত্রিশ কোটি দেব-দেবী। মানুষের ভিড়ে প্রচ্ছন্ন ভাবে চলে তাঁদের লীলাখেলা।

pushkarfair1_web
হিন্দুদের যাবতীয় শুভ মুহূর্ত ধার্য হয় চান্দ্র তিথি ধরে। এই বিশ্ববিখ্যাত মেলারও রয়েছে নির্দিষ্ট দিনক্ষণ- কার্তিকী একাদশী থেকে কার্তিকী পূর্ণিমা। বলা হয়, এই পাঁচটি দিনের পরিধিতেই পৃথিবীর বুকে সৃষ্টি হয়েছিল পুষ্কর ক্ষেত্র। বজ্রনাভ নামে এক দুর্দান্ত অসুরকে হাতের পদ্মের আঘাতে বধ করেছিলেন ব্রহ্মা। সেই সময় পদ্ম থেকে কিছু পাপড়ি ঝরে পড়ে মর্ত্যে। যেখানে সেই পাপড়িরা পড়ে, তৈরি হয় হ্রদ। এভাবেই জন্ম হয় পুষ্কর তীর্থের। সেই ঘটনা স্মরণ করেই এই পাঁচ দিনে মেলা বসে পুষ্করে। চলে পুণ্যস্নান। কিংবদন্তি, এই পুণ্যস্নান আর মেলার টানেই পুষ্করে হাজির হন দেবদেবীরা। এ বছরে গ্রেগরিয়ান বা ইংরেজি ক্যালেন্ডার মতে যার দিন ধার্য হয়েছে ৮-১৪ নভেম্বর।

Advertisement

pushkarfair2_web
আসলে, দেবতাদের জীবন বড় বৈচিত্র্যহীন। পাপ আর পুণ্যের অমোঘ নিয়মে বাঁধা। তাই মর্ত্যের রঙিন মানবজীবন বারে বারে হাতছানি দিয়ে ডাকে তাঁদের। সেই ডাকে সাড়া দিতে চাইলে পুষ্করের মতো স্থানমাহাত্ম্য দুর্লভ। ভারতে মেলার অভাব নেই। অভাব নেই ধর্মমাহাত্ম্য ঘিরে থাকা মেলারও। কুম্ভমেলা, গঙ্গাসাগরমেলা- তালিকা মন্দ নয়! কিন্তু, সব মেলাকে এক জায়গায় গিয়ে হার মানিয়েছে পুষ্কর। ধর্মর সঙ্গেই সে বেঁধে দিয়েছে প্রাণের আনন্দকে। তাই পুষ্কর মেলায় ধর্মকৃত্য ছাপিয়েও নজর কাড়ে বাৎসরিক উল্লাস।

pushkarfair3_web
সেই জন্যেই সম্ভবত পুষ্কর মেলার কথা বললেই সবার আগে উটের প্রসঙ্গ আসে। বলাই হয়, পুষ্করের উটের মেলা। রাজস্থান এবং ভারত- সারা বছরের উট কেনাবেচা করে এই মেলাতেই। শুধু উটই নয়, বিক্রি হয় নানা গবাদি পশু। সেই চতুষ্পদদের খুরের আঘাতে ওড়া সোনালি বালি আকাশ ঢেকে দেয়। বাতাসে পর্দা নামিয়ে দেয় লাল ধুলো। সেই আবরণের মাঝে কান পাতলেই শোনা যায় হাজার হাজার কলকণ্ঠ। মানুষের, পশুর গলার আওয়াজ। আওয়াজ নাগরদোলার ঘুরন্ত চাকার। আওয়াজ বেলোয়ারি চুড়ির। আওয়াজ নূপুরের। আওয়াজ পশুর গলার ঘণ্টার। সেই সব আওয়াজেই মিশে যায় কাচ-ভাঙা হাসি।

pushkarfair4_web
তবে পশু কেনাবেচার কথা শুনে যদি মনে হয় এই মেলা বড় নির্মম, তাহলে ভুলটা ভাঙিয়ে দেওয়া দরকার। এই মেলা যেভাবে সাজিয়ে-গুছিয়ে উপস্থাপন করে পশুদের, বিশেষ করে উটদের, তা দেখলে চোখ ফেরানো দায় হবে। শুধু উটের সাজ ঘিরেই যেন পুষ্কর ক্ষেত্রে রঙের রায়ট শুরু হয়। তার সঙ্গে মিশে যায় মানুষের পোশাকের রং। মেশে গয়নার রং, মেশে কুঙ্কুম-মেহন্দি-ফুলের রং। রুক্ষ, সোনালি বালুকাবেলায় এই রং বুকে ধরে চোখ ঝলসে দেয় পুষ্কর। তার সঙ্গেই বইতে থাকে ধর্মকৃত্যের রংও!

pushkarfair5_web
যার শুরুটা হয় কার্তিকী একাদশীতে পুণ্যস্নান দিয়ে। এই দিনে মেজাজ বেশ প্রসন্নই থাকে দেবপিতামহ ব্রহ্মার। তাঁর উৎসবের ডাকে সাড়া দিয়ে হাজির হয়েছেন দেবতারা, অতএব ব্যস্ততা তো একটা থাকবেই। কিন্তু, মেলার রঙিন আমেজ ধুয়ে-মুছে দেয় তাঁর ব্যস্ততা থেকে জন্ম নেওয়া ক্লান্তি। জনশ্রুতি, মেলার শুরুতে সাধারণ মানুষের ভিড়ে মিশে গিয়ে পুণ্যস্নানে অংশ নেন দেবতারাও। তাই পুষ্কর তীর্থে স্নান কুম্ভস্নানের চেয়ে কোনও অংশেই ন্যূন নয়। বরং, সমান গুরুত্বপূর্ণ। মানুষও তাই পুষ্কর হ্রদে ডুব দিয়ে ঝেড়ে ফেলে বছরভর জমে থাকা গ্লানি, হৃষ্ট চিত্তে শুরু হয় মেলার উৎসব।

pushkarfair6_web
রাজস্থানের এই মেলার অনেকটাই ঘিরে থাকে আমোদ-প্রমোদ। ধর্মকে ঘিরে মেলা বসলেও মুখ্য আকর্ষণ কিন্তু ঘোষণা করে লৌকিক আনন্দের কথাই! যেমন, উৎসবের শুরুটা হয় আকাশে বৃহদাকার গ্যাস-বেলুন উড়িয়ে। পাঁচদিনব্যাপী এই মেলায় মাঝে মাঝেই আকাশে ওড়ে বেলুন। চলে নাচ-গান। থাকে নানা মজার প্রতিযোগিতাও। পুরুষদের জন্য থাকে সবচেয়ে বড় গোঁফের প্রতিযোগিতা। নববধূর সাজে সেজে প্রতিযোগিতায় ভাগ নেন মহিলারা। সঙ্গে উটের দৌড়ের মতো প্রচলিত রাজস্থানি খেলা তো আছেই!

pushkarfair8_web
সেই সব আনন্দ ফের ফিরে আসবে আগামি ৮ নভেম্বরে। ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত মানুষের সঙ্গে মিশে গিয়ে চলবে দেবতাদের উৎসব। পুণ্য আর প্রমোদ বইবে এক খাতে। প্রসন্ন হবেন ব্রহ্মা। আর মানুষ পাবে সারা বছরের একঘেয়েমি থেকে মুক্তি! হৃদয়ে ভরে নেবে রাজস্থানের মূল সুরটিকে। ক্লান্ত এক দিনের শেষে যখন বাসে-ট্রামে-অটোয়-মেট্রোয় চলবে সফর, মনের কোণে উঁকি দিয়ে যাবে পুষ্কর। শিখিয়ে দিয়ে যাবে, কী ভাবে সারা বছরের রসদ জমা করে নিতে হয় দিনকয়েকের ব্যবধানে।

pushkarfair7_web
কী ভাবে যাবেন: রেলপথে এলে নামতে হবে আজমের স্টেশনে। সেখান থেকে ১১ কিলোমিটার পথ গাড়িতে পাড়ি দিয়ে হাজির হওয়া যায় পুষ্করে। বিমানে এলে নামতে হবে জয়পুরের সঙ্গানের বিমানবন্দরে। সেখান থেকে গাড়িতে ১৪৬ কিলোমিটার পেরিয়ে এলেই দেখা দেবে পুষ্কর।
কোথায় থাকবেন: পুষ্করে নানা বাজেটের হোটেল রয়েছে। রয়েছে একাধিক ধর্মশালাও। তবে মেলার জন্য সবেতেই একটা ঠাঁই নেই-ঠাঁই নেই ভাব তৈরি হয়। কেন না, পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে পর্যটকরা ভিড় করেন এই মেলায়। সেক্ষেত্রে আজমেরকে কেন্দ্র করে, সেখানে কোনও হোটেলে উঠেও ঘুরে নেওয়া যায় পুষ্কর।

২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement