নিজস্ব সংবাদদাতা, বনগাঁ: বাঙালি যে ভ্রমণপ্রিয়, তা আর নতুন করে বলার নেই৷ কোনও জায়গায় বেড়াতে যাওয়ার কথা বললেই সবসময় তৈরি তাঁরা৷ সে জল হোক কিংবা জঙ্গল৷ সমুদ্র হোক কিংবা পাহাড়৷ তার উপর আবার শীতের মরশুম বলে কথা৷ মিঠে রোদ গায়ে মেখে বেড়িয়ে পড়লেই হল৷ মন উড়ুউড়ু তো কি? অফিসের কাজ সামলে তো যখন তখন দু’-চারদিনের জন্য লম্বা ছুটি মেলে না৷ কিন্তু লম্বা ছুটি নেই বলে, আপনি অফিস আর বাড়ি সামলাতে সামলাতে মনখারাপ করবেন, তাও তো হয় না৷ আপনার মতো ভ্রমণপিপাসু মানুষের কথা মাথায় রেখে রইল উইকএন্ডে বেড়িয়ে পড়ার মতো ঠিকানার খোঁজ৷
শহরের যেদিকেই আপনি তাকান না কেন দেখতে পাবেন ইট-কাঠ-কংক্রিটের বহুতল৷ উপরি পাওনা ধোঁয়া-ধূলো-দূষণ৷ অফিসে ঢুকলেন তো পাহাড় প্রমাণ কাজের চাপ৷ এ তো নয় গেল সপ্তাহের কর্মব্যস্ত দিনগুলির রুটিন৷ কিন্তু উইকএন্ডও এভাবে কাটাবেন নাকি? তার চেয়ে উইকএন্ডে সবুজের সম্ভারে অক্সিজেন নেওয়ার জন্য বেড়িয়ে পরুন পারমাদন ফরেস্ট বা বিভূতিভূষণ অভয়ারণ্যের উদ্দেশ্যে৷ কলকাতা থেকে দূরত্ব মাত্র ৮০ কিলোমিটার। কাজেই এই শীতের ছুটিতে একদিনের জন্য যাওয়ার আদর্শ জায়গাগুলির একটা হতেই পারে পারমাদন ফরেস্ট।
বনগাঁর কাছে পারমাদন বিখ্যাত বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামাঙ্কিত অভয়ারণ্যের জন্য। জায়গাটা একেবারে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি। এই জায়গার খুব কাছেই থাকতেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৯৯৫ সালে বিভূতিভূষণের নামে নামাঙ্কিত করা হয় এই অভয়ারণ্যকে। ইছামতী নদীর গা ঘেঁষে শিমুল, অর্জুন, শিশু, শিরীষ গাছের ভিড়ে হারিয়ে যেতে হলে আপনাকে যেতে হবে পারমাদনের জঙ্গলে। অসংখ্য বাঁদর, ময়ূর আর খরগোশের আনাগোনা এই অভয়ারণ্যে। আর রয়েছে অজস্র পাখি। ছবি তোলার শখ থাকলে সঙ্গে রাখুন ক্যামেরা৷ শঙ্খচিল, নীলকণ্ঠ, ফুলটুসির মতো পাখির ছবিও ক্যামেরাবন্দি করতে পারেন আপনি৷
গাছ আর পাখি ছাড়া যা খুব বেশি করে চোখে পড়বে, তা হল হরিণ। প্রায় ২৫০টা হরিণ রয়েছে এই জঙ্গলে। ১৯৬৪ সালে ১৪টি চিতল হরিণ এই অরণ্যে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। তারপর থেকেই অভয়ারণ্যের চেহারা নেয় পারমাদন।
ইছামতীর ধারে ৬৮ বর্গকিলোমিটার জায়গা নিয়ে পুরো অভয়ারণ্য তৈরি হয়েছে। ভিতরে চিলড্রেন্স পার্ক ছাড়াও রয়েছে ছোট্ট একটা চিড়িয়াখানা আর বন দপ্তরের ট্যুরিস্ট লজ। ভিতরে বনভোজনও করা যায় অনুমতিসাপেক্ষে। আবার লজে ইচ্ছা হলে আপনি রাতেও থাকতে পারেন৷ অভয়ারণ্যের ভিতরে ঢোকার জন্য এবং যানবাহনের জন্য আলাদা প্রবেশমূল্য রয়েছে।
কীভাবে যাবেন:
শিয়ালদহ থেকে বনগাঁ লাইনের ট্রেন ধরতে হবে৷ বনগাঁ স্টেশনে নামুন৷ এবার টোটো বা অটো ধরে আপনাকে মতিগঞ্জ বাগদা বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছাতে হবে৷ সেখান থেকে দত্তফুলিয়াগামী যেকোনও বাসে চড়ে আপনি পৌঁছে যেতে পারেন পারমাদন ফরেস্ট৷
সড়কপথেও যাওয়া যেতে পারে পারমাদন ফরেস্টে৷ ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে গাড়িতেও পৌঁছে যেতে পারেন এই ঠিকানায়৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.